Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রেটেস্ট বোল্টের ‘ট্রিপল ট্রিপল’

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : বজ্রবিদ্যুৎ বা লাইটিনিং বোল্টÑযে নামেই ডাকুন না কেন, বিশেষণটা কম হয় যায়। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে সেই যে শুরুটা করেছেন, তাতে অলিম্পিকে আতশবাজির উৎসবটাই মেনেছে হার তার পারফরমেন্সে। রাতের আকাশে বজ্র বিদ্যুৎ জ্বলেছে তার পারফরমেন্সে! স্প্রিন্টের রাজার খেতাবটা পেয়েছিলেন ২০০৮ বেইজিংয়ে। ২০১২ লন্ডনের পর ২০১৬ রিওÑ ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ৪*১০০ মিটার স্প্রিন্টের রাজা তিনিই। তিনটি অলিম্পিকে ৯টি ইভেন্টের ৯টিতেই স্বর্ণÑ বিস্ময়কর রেকর্ডে বড় দৈর্ঘ্যরে দৌড়ে ফিনল্যান্ডের কিংবদন্তী পাভো নুর্মি (১৯২০-১৯২৮ অলিম্পিকে ৯ স্বর্ণ ৩ রৌপ্য) এবং স্প্রিন্টে এক সময়ের মহারাজা যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইসকে (১৯৮৪-১৯৯৬, ৯ স্বর্ণ ১ রৌপ্য) টপকে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে সেরা গ্রেটেস্ট জ্যামাইকান উসাইন বোল্ট। অলিম্পিকে দ্রæততম মানবের খেতাব ইতোপূর্বে উপর্যুপরি তিন আসরে ছিল না কারো, ৯.৮১ সেকেন্ডে দৌড়ে সেই ইতিহাস করেছেন রচনা রিওতে এসে। ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও ছিল না কারো এমন রেকর্ড, নুতন করে সেই গল্পটিও লিখেছেন তিনি ১৯.৭৮ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে এই দূরত্ব পার করে। দু’টি ইভেন্টে হ্যাটট্রিকে অমরত্ব পেয়ে অলিম্পিকে শেষ ইভেন্টে হ্যাটট্রিকের নেশা চেপে বসেছিল। হেভিওয়েট বক্সিংয়ে তিনবারের খেতাব জয়ী মোহাম্মদ আলী এবং তিন তিনবার বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফিতে হাত রাখা ফুটবল কিংবদন্তী পেলের পাশে গ্রেটেস্ট কাতারে উঠে আসতে ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক ইভেন্টকে নিয়েছিলেন বেছে। ৪*১০০ মিটার রীলেতে জ্যামাইকা স্প্রিন্ট দলের এই নিউক্লিয়াস এবারো হাসিয়েছেন জ্যামাইকাকে, হেসেছেন নিজেও। ৩৭.২৭ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে জ্যামাইকা স্ট্রিন্ট দলের ফিনিশিং মার্কে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই অমর কাব্য রচনা করেছেন বোল্ট! যেখানে রৌপ্যজয়ী জাপানের লেগেছে ৩৭.৬৪ সেকেন্ড। অলিম্পিকে তার সাফল্যে রচিত হলো ‘ট্রিপল ট্রিপল’ কাব্য।
৪*১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে নেননি অংশ। টীম মেট আসাফা পাওয়েল, নিকেল আসমেদে, ইয়োহান বেøকের কারো নেই রিওতে স্প্রিন্ট ইভেন্ট থেকে কোন সাফল্য। ফর্মেও নেই এই তিন জ্যামাইকান। তাই ৪*১০০ মিটার রিলে রেসকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে একদিন আগে রিও’র সবুজ ট্র্যাকের ৬ নম্বর লেনে খেয়েছিলেন চুমো। কিন্তু রিলেতে তার অতীতটাই যে দিয়েছে উসাইন বোল্ট ভক্তদের আত্মবিশ্বাস। স্টার্ট পয়েন্ট থেকে দৌড়–তে হয়না, সতীর্থ অ্যাথলিটের কাছ থেকে ব্যাটন হাতে নেয়ার আগেই শুরুটা করেন দৌড়, যে কারণে গতিতে অনায়াসে পিছিয়ে ফেলতে পারেন প্রতিদ্ব›িদ্বদের। বেইজিং, লন্ডনের পর রিওতেও দেখল বিশ্ব সে কাÐ। বেইজিংয়ে ব্যাটন হাতে শেষ ১০০ মিটার পাড়ি দিয়েছেন ৮.৯৮ সেকেন্ডে, লন্ডনে সেখানে ৪*১০০ মিটার স্প্রিন্টে বিশ্বরেকর্ড দৌড়ে উসাইনের শেষ ১০০ মিটারে লেগেছে সেখানে ৮.৭ সেকেন্ড, রিওতে জাপানের ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জে জ্যামাইকা হাসল উসাইন বোল্টে, সতীর্থ ইয়োহান বেøকের হাত থেকে ব্যাটন নিয়ে শেষ ১০০ মিটারে লেগেছে সেখানে বোল্টের ৯ সেকেন্ডেরও কম টাইমিং। একদিন পর ৩০তম জন্মদিন হবে পালিত। তবে তার আগেই স্বর্ণ জয়ে নিজের ৩০তম উদযাপনটা অলিম্পিকে অমরত্ব পাবার আনন্দে উদযাপন করলেন রিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। হয়ে গেলেন কিছুক্ষণের জন্য শিশু। সেই পরিচিত স্টাইলেই ঘুরে ঘুরে চলল তার ল্যাপ অব অনার, ভক্তদের আবদার রক্ষায় সময়।
নিজের এই কৃতিত্বে গর্বিত উসাইন বোল্টÑ ‘আমি আমার এ অর্জনে গর্বিত, সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। চাপটা আসলেই ছিল। অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছে যেতে চেয়েছিলাম। এই মূহূর্তগুলোর জন্য এতোদিন বেঁচে ছিলাম। দারুন এক অনুভুতি। ছেলেদেরকে বলেছিলাম, যদি এই রাতে আমি এটা করতে না পারি, তাহলে তাদেরকে মারব। আজ রাতে আমার জন্য সব কিছু করেছে। ব্যাটনটা হাতে পাওয়ার আগেও মনে হয়নি কাজটি পারব না। ’ মোহাম্মদ আলী, পেলের পাশে গ্রেটেস্ট খেতাবটা লিখতে বেছে নিয়েছিলেন রিওকে, অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছুতে পেরে আনন্দটা ভালই উদযাপন করেছেনÑ‘ক্যারিয়ার যখন শুরু করেছিলাম, তখন ভাবিনি এমনটা করতে পারব। অসম্ভব বলে তর্ক উঠেছিল, তবে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আমি কখনোই সীমাবদ্ধতা সেট করিনি। সব সময় চেয়েছি বাধা পেরুতে, এবং সেটাই করতে পেরেছি। এটাই আমার আনন্দ। এখন আমি গ্রেটেস্ট। যা করতে পেরেছি, তাতেই আমি গর্বিত।’
অলিম্পিকে অ্যাথলেটিক্স থেকে ৪টি স্বর্ণজয়ী সাবেক মার্কিন অ্যাথলিট মাইকেল জনসনÑ‘এটা অবিশ্বাস্য এক দৌড় ছিল। কারণ এখানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ছিল। জ্যামাইকা আবর্তিত ছিল উসাইন বোল্টকে কেন্দ্র করে। জাপান দলকে চেজ করতে হবে, তা করেছে সে। কিন্তু সে পুরোপুরি নিখুঁত ছিল। তার সব ক’টি স্বর্ণ, নেই কোন ব্রোঞ্জ। এ ধরনের চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারন পারফরমেন্স।’ ২ বারের ১১০ মিটার হার্ডলসে অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী কলিন জ্যাকসনও উসাইন বোল্টের এমন ইতিহাস রচনায় বিস্মিত হয়েছেনÑ‘উসাইন বোল্ট যা করেছে, তা ভাল’র চেয়েও বেশি। আরো একবার সে লম্বা লম্বা পা ফেলে দেখিয়েছে তাকে ধরার ক্ষমতা নেই কারো। সে এক বিস্ময় মানব। সে যা করেছে, তাতে আমরা প্রচÐ খুশি।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেটেস্ট বোল্টের ‘ট্রিপল ট্রিপল’
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ