পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম সাম্য ও সম্প্রীতির ধর্ম। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদেরকে মানবতা, মহানুভবতা এবং উদারতা শিখিয়েছেন। যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জন করল সে সফলকাম হলো। আজ রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেছেন, ইসলাম সাম্য ও সম্প্রীতির ধর্ম। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদেরকে মানবতা, মহানুভবতা এবং উদারতা শিখিয়েছেন এবং মানুষের কাছে ইসলামের শিক্ষাগুলো সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে বলেছেন। হাদীসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মানুষদেরকে সুসংবাদ দাও,নিরাশ কর না। সহজভাবে বল কঠিন কর না। দাওয়াতের এই মূল নীতিকে সামনে রেখেই আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ইসলামের মূল অর্থই হচ্ছে শান্তি। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও’ এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ওপর চলার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরা দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম আজ জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, আত্মশুদ্ধি অর্জন করা ব্যতিত কোন মানুষ জীবনে পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জন করল সে সফলকাম হলো। আর যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করলনা সে ক্ষতিগ্রস্থ হলো। (সুরা শামস ৯-১০ )
আত্মশুদ্ধি অর্জন করার অর্থ হলো: নিজ আত্মাকে সকল কুরিপু থেকে পবিত্র করা। যেমন মিথ্যা বলা, হিংসা করা, অহংকার করা, ইবাদতে গর্ব করা, দুনিয়ার প্রতি মমতা, সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা করা, অলসতা করা, ভোগ বিলাসী হওয়া, মন খাঁটি না হওয়া। পক্ষান্তরে নিজের মধ্যে পবিত্র গুনাগুন অর্জন করা। যেমন : ইখলাস অর্জন করা, তাওবা করা, সত্য কথা বলা, নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, অল্পে তুষ্ট থাকা, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা।
পেশ ইমাম বলেন, আত্মশুদ্ধি অর্জন না করা হলে কোন আমল আল্লাহর দরবাকে কবুল হয় না। যেমন হযরত আবু উমামা (রাদি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, একজন ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে ব্যক্তি সুখ্যাতি ও সাওয়াবের আশায় যুদ্ধ করে তার কী প্রতিদান হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তার কোন সাওয়াব হবে না। লোকটি তিনবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বারই একই উত্তর দিলেন যে, তার কোন প্রতিদানই আল্লাহর দরবারে থাকবে না।
এই আত্মশুদ্ধি অর্জন করাকেই সুফিদের পরিভাষায় ইলমে তাসাউফ বলা হয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর উপর ফজর। আর ইলম হলো দুই প্রকার। ইলমে জাহের বা কুরআন, হাদিস ও ফিকহের বাহ্যিক ইলম। ইলমে বাতেন বা আত্মশুদ্ধির ইলম। উক্ত হাদিস দ্বারা উভয় প্রকার ইলমকে ফরজ করা হয়েছে।
ঢাকার চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুুমার বক্তব্যে বলেছেন, আমরা আজ বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত এবং ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। এমতাবস্থায় যে কোন মূল্যে ঈমানের উপর টিকে থাকা এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধ মান্য করাই পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। কোন অবস্থাতেই যেন আমরা পথচ্যুত না হই, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলতে হবে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়তের হুকুম ও সীমা লঙ্ঘন করে সে মূলতঃ নিজের ক্ষতি ও ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে সে আসলে তার নিজের উপরই অত্যাচার করে"। (সূরা তালাক্ব,আয়াত-১)। অপর আয়াতে তিনি বলেছেন"যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমা লঙ্ঘন করে, তাকে তিনি আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে, তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা,আয়াত-১৪)
মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-ব্লক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষের আনন্দ, সুখ-শান্তি, বালা-মুসিবত ও বিপদ আপদ নিয়েই এ পৃথিবী। আর এ সবই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য পরীক্ষা। মুমিন আল্লাহর উপর ভরসা করেই এ সবকে সানন্দে গ্রহণ করে পরীক্ষায় সফলকাম হতে চায়। যার কারনেই সে দুনিয়াতে শান্তি ও পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন তারা (মুমিনগণ) বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৬-১৫৭)। অন্য আয়াতে আরও বর্নিত আছে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চই তারা বলে (মুমিনরা) আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর এ কথার উপর তারা সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোনো ভয় ভীতি নেই, তাদের কোনো চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত: ১৩-১৪)।
মুমিন ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের হুংকারে, বিপদে, বালা-মুসিবতে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস রেখে, অত্যন্ত দৃঢ়তা ও ধৈর্য্যের সাথে সামনে অগ্রসর হবে। ফরজ বিধান পালনসহ অধিক পরিমানে নফল ইবাদাত তওবা, ইস্তিগফার ও দোয়ায় মশগুল থাকবে।
সীমারেখার বাইরে মুমিনের যাওয়ার কোনই সুযোগ নেই। অযথা বিতর্ক ও বিবাদে না জড়িয়ে কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ নিশ্চিত করাই আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ সবাইকে সৎ পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।