নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন যেখানে কোন কিছুরই নাগাল পায় না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে তিন ইভেন্টেই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে শুরু। এরপর লন্ডন জয় করে রিও ডি জেনিরোতে এসে হলেন কিংবদন্তি। তিন আসরে তিনটি করে ইভেন্টে অংশ নিয়ে মোট ৯টি স্বর্ণ পদক জয়। প্রতিটা ইভেন্টের বিশ্ব রেকর্ডই তার দখলে। কিংবদন্তি হতে আর কি লাগে? টানা তিন অলিম্পিক ডাবল জয়ের পর প্রশ্নটা নিজেই রেখেছিলেন গতি দানব উসাইন বোল্ট। তখনও ১০০ মিটার রিলে বাকি। কাল সেটাও জিতে গড়লেন ‘ট্রিপল-ট্রিপল’ জয়ের অভূতপূর্ব কীর্র্তি।
অলিম্পিক অ্যাথলেটিক্সে ৯টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড আছে আরো দুই জনের। কিংবদন্তি কার্ল লুইস ও পার্তো নুর্মির। তবে জ্যামাইকান বজ্রবিদ্যুতের কীর্তিটা তাদেরকেও ছাড়িয়ে। লুইসের নয়টি স্বর্ণের চারটি এসেছে লম্বা লাফ থেকে। আর নুর্মি ছিলেন দূরপাল্লার দৌড়বিদ। অলিম্পিক ইতিহাসে কেউই কখনো টানা তিন আসরে স্প্রিন্টে সোনা জয়ের কীর্তি দেখাতে পারেননি। বোল্টের মহত্বটা এখানেই।
অলিম্পিকে অ্যাথলেটিক্সে হয়তো ভবিষ্যতে নয়টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড ভাঙলেও ভাঙতে পারে। কারণ সেটা করতে হলে লুইস-নুমির মত স্প্রিন্টের পাশাপাশি লম্বা লাফ বা ৪০০ মিটার রিলেতে অংশ নিয়ে সেটা করতে হবে। কিন্তু বোল্ট জিতেছেন শুধুমাত্র ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে। যে ইভেন্টকে বলা হয় অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ইভেন্ট। বোল্টের কীর্তি তাই তাকে যে অমরত্বের পথে নিয়েছে তা জোর দিয়েই বলা যায়।
বেইজিং ও লন্ডনের পর রিওতে মাত্র দ্বিতীয় অ্যাথলেট হিসেবে ১০০ মিটার রিলেতে জয়ী হলেন ট্রাক এন্ড ফিল্ডের রাজা। এর আগে এই ইভেন্টে টানা তিনবার জয়ী হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্র্যাঙ্ক ওয়াইকফ (১৯২৮, ১৯৩২, ১৯৩৬)। এতগুলো বছর পর সেই কীর্তি পুনরাবৃত্তি করলেন বোল্ট। স্বদেশী আসাফা পাওয়েল, ইয়োহান ব্লেক ও নিকেল অ্যাশমিডের হাত ঘুরে ব্যাটনটা নিয়ে নিকটতম জাপানী প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে প্রায় ৫ মিটার ব্যবধানে এগিয়ে সেই পরিচিত আয়েশি ভঙ্গিমায় দৌড় শেষ করেন স্প্রিন্ট বিষ্ময়। লন্ডন অলিম্পিকে এই তিন সতীর্থকে নিয়েই বিশ্ব রেকর্ড (৩৬.৮৪ সেকেন্ড) গড়েছিলেন বোল্ট। এবার সময় নিলেন ৩৭.২৭ সেকেন্ড।
ট্রিপলের ট্রিপল জয়ের ঘোষণা দিয়েই তার রিওতে পা রাখা। তিনটি ইভেন্টেই জিতলেন হেসেখেলে। কোন ইভেন্টে তার অংশ নেওয়া মানেই যেন পূর্বনির্ধারিত নতুন আনন্দের উপলক্ষ। তিনি নিজেও জানতেন নিজেকে সেরাদের সেরা প্রমাণ করতে হলে জিততেই হবে, ঠিক যেমনটা তিনি চান। সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেক হওয়ার পর তাই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি সবার সেরা। আমি দ্বায়মুক্ত যে এটা আমি করতে পেরেছি। আমি খুশি, আমি নিজের উপর গর্বিত। স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে।’
গতির রাজা এটাও জানিয়েছিলেন যে, এটাই হতে যাচ্ছে তার শেষ অলিম্পিক। আসছে বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্সশিপে অংশ নিয়ে যাবেন অবসরে। আজ তার ৩০তম জন্মদিন। টোকিও অলিম্পিক ২০২০ আসতে আসতে তার বয়স হয়ে যাবে ৩৪ ছুঁই ছুঁই। একজন অ্যাথলেট বিশেষ করে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়বিদদের জন্য ৩০ বছর বয়সই তো তাকে ‘বুড়োদের’ কাতারে নিয়ে যায়। বোল্ট যে ২৯ বছর বয়সে ২০০ মিটার জিতলেন এই রেকর্ডই নেই আর কারও।
বোল্টের দিনে রিওতে ট্রেবল জিততে পারতেন স্বদেশী এলইন টম্পসনও। কিন্তু সতীর্থ ক্রিস্টানিয়া উইলিয়ামস, ভেরোনিকা ক্যাম্পবেল-ব্রাউন ও শেলি-অ্যান ফ্রেজার প্রাইসের সাথে নারী ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জেতা হল না টম্পসনের। অলিম্পিক ট্রেবলটাও তাই জেতা হল না। তবে নিজের প্রথম অলিম্পিকে অংশ নিয়েই দুটি স্বর্ণ জয় তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে এই হতাশা, ‘চমৎকার অভিহজ্ঞতা। আমার প্রথম অলিম্পিকে দুটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য। আমি আপত্তি করতে পারি না।’
১০০ মিটার রিলেতে জ্যামাইকানদের হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা। এর মধ্য দিয়ে প্রথম নারী হিসেবে অ্যাথলেটিক্সে ৫টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন অ্যালিসন ফিলিক্স। বেইজিংয়ে ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয়ের পর লন্ডনে ২০০ মিটার দৌড় এবং ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয়। রিওতে ৪০০ মিটার দৌড়ে একটুর জন্য হাতছাড়া হয়েছে স্বর্ণ। অবশেষে ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জিতে হয়ে গেলেন কিংবদন্তিতুল্য। সব মিলে অলিম্পিকে তার পদক হলো ৮টি।
ওদিকে নারীদের ৫ হাজার মিটার দৌড়ে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণের দেখা পেয়েছেন ভিভিয়ান চেরুইয়ত। চ্যাম্পিয়ন ইথিওপিয়ান আলমাজ আয়ানাকে টপকে প্রথম কেনিয়ান হিসেবে এই ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতলেন চেরুইয়ত। লন্ডনে ১০ হাজার মিটাওে ব্রোঞ্জ ও ৫ হাজার মিটাওে জিতেছিলৈন রৌপ্য। এবার রিওতে এই আয়ানার কাছেই হারিয়েছিলৈন ১০ হাজার মিটারের স্বর্ণ। অবশেষে তার মুখে ফুটল সোনালী হাসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।