পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, মানুষ ভোটকেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গণতন্ত্র ‘কাল্পনিক’ রূপলাভ করায় দেশে উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নাগরিকদের ভোটকেন্দ্রমুখী করার পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘বিরাজনীতিকরণ কমিশন’ বলে মন্তব্য করেন। গতকাল রোববার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। তারা আরো বলেন, আগে দেখতাম সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করে বিরাজনীতিকরণ করেন; এখন বেসামরিক সরকারও ইসির সহায়তায় রাষ্ট্রকে বিরাজনীতিকরণ করেছে। তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি বিবেক শূন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত করেছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের এই যে ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, এটাকে আলোচনা না করে শুধুমাত্র কমিশন নিয়ে আলোচনা করলে আর হবে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের শক্তি হলো আদালত। কিন্তু আমরা আদালতকে কমিশনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে দেখিনি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনাররা একটা আইনের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। তাই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়ন করে যাতে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সেদিকে জোর দিতে হবে।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আমরা অনেক কথা বলছি, কিন্তু যারা শোনার তারা শুনছেন না, বা শুনলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটা ব্যাপক গণআন্দোলন সৃষ্টি করা দরকার। তাহলে হয়তো কিছু হতে পারে। এজন্য আমাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
সুজনের নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের প্রধান অংশীদার হলো সরকার। কমিশন গঠনের জন্য যেসব সার্চ কমিটি গঠন করা হয়, এগুলোতে সরকার যাকে চায়, সেরকম লোকই বেরিয়ে আসে। সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই দুরূহ।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণতন্ত্রের প্রকৃত ধারণার সঙ্গে আমাদের চারদিকে যে অবস্থা দেখছি, তার কোনও মিল নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। গণতন্ত্র, নির্বাচন এসব বিষয় ক্রমাগত কল্পনার বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছাপূরণের কমিশনে পরিণত হয়েছে।
সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন, গণতন্ত্র এসব এখন কবি গান, ঘেঁটু গানের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই, সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা অর্থহীন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি বিবেক শূন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের বিবেক শূন্যতার কারণে নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাফায়েল আহমেদ বলেন, জানতাম, সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় বসে টিকে থাকার স্বার্থে বিরাজনীতিকরণ করে। একটা বেসামরিক সরকার যে এভাবে বিরাজনীতিকরণ করতে পারে, এখন আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি। আমি সবাইকে বলব, সামনে স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো আছে, সেগুলোতে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, কমিশন, প্রশাসন দলীয় অঙ্গসংঠনের পরিণত হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারা আবার ভালো মতো কাজ দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদেরকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা জোরে সোরে বলতে হবে।
আবু সাঈদ খান বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার হারানোর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনি আইন পরিবর্তন করে এলাকাভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করে একটা মিশ্র নির্বাচনি ব্যবস্থাতে যেতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার তার প্রবন্ধে বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে কয়েকটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত সা¤প্রতিক স্থানীয় সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকার। অনেকগুলো গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে তারা তদন্ত করেছে বলে আমরা শুনিনি। অবশ্য এটা সত্য যে, সরকার ও রাজনৈতিক দল, বিশেষত ক্ষমতাসীন দল না চাইলে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব।
সুজন সম্পাদক বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ন‚রুল হুদা কমিশনের সব ক্ষমতা থাকলেও তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অসততা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নাগরিকের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, তারা ভোট দিতে চাইলেও ভোট দিতে পারবে না। আর ভোট দিলেও তারা ‘ফলাফল’ প্রভাবিত করতে পারবেন না। যারা জয়ী হওয়ার তারাই জয়ী হবেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বহুলাংশে বানোয়াট। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে; যা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই অকার্যকর করে ফেলেছে। এছাড়া, আমাদের রাজনীতি বহুলাংশে বিরোধী দল শূন্য হয়ে পড়েছে। যার দায় অবশ্য প্রধান বিরোধী দলও (বিএনপি) এড়াতে পারে না। ফলে বহু নাগরিকের মধ্যে এখন গণতন্ত্র নিয়ে চরম অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এম এ মতিন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলম, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সহ-সভাপতি ড. হামিদা হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক একরাম হোসেন, সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান, সফিউদ্দিন আহমেদ, আকবর হোসেন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।