Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স

পুলিশি বর্বরতা ও বিতর্কিত আইনের প্রতিবাদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : ফ্রান্সে দায়িত্বপালনকালে পুলিশের ছবি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নতুন আইনের পরিকল্পনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গ্লােগান দেন তারা। সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে এক কৃষ্ণাঙ্গকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত প্রযোজক মাইকেলকে পুলিশের মারধরের ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মাইকেলকে মারধরের ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ ও কর্মকান্ড নিয়ে নতুন করে ক্ষোভে ফুঁসছে ফ্রান্স। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশ সদস্যদের চেহারা দেখা না গেলে বা শনাক্ত করা সম্ভব না হলে, পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা আরো বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে এই খসড়া আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলেও মনে করছেন অনেকে। খসড়া আইনের ২৪ অনুচ্ছেদে যেটিতে পুলিশের চেহারা দেখাতে বারণ করা হয়েছে সেটিসহ সব অনুচ্ছেদ বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। এটা নিয়ে দরকষাকষির কিছু নেই। কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বরখাস্তের পাশাপাশি চার পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এ ঘটনাকে বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। খবরে বলা হয়, ফ্রান্সে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ‘সম্মান রক্ষার’ অজুহাতে ভিডিওধারণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদও। শনিবার দেশটির রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। গত শুক্রবার এক কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত প্রযোজককে নির্দয় মারধর এবং বর্ণবাদী আচরণের কারণে আটক করা হয় চার ফরাসি পুলিশ কর্মকর্তাকে। স¤প্রতি লুপসাইডার নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই পুলিশ কর্মকর্তারা মাইকেল জেকলার নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত প্রযোজককে কয়েক মিনিট ধরে মারধর করছেন এবং বারবার বর্ণবাদী গালি দিচ্ছেন। এ ঘটনার ভিডিও ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরা এবং প্রতিবেশীদের মোবাইল ফোনে। পরে সেসব ভিডিও ভাইরাল হতেই ফুঁসে ওঠে সাধারণ জনতা। এর প্রতিবাদ জানান জনপ্রিয় ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে, আন্তোনি গ্রিজম্যান, সঙ্গীত তারকা আয়া নাকামুরাসহ আরও অনেকে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখেঁাঁ প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে পুলিশি বর্বরতাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘সবার জন্য লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেন। তবে ম্যাখোঁ সরকারই কিছুদিন আগে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের যেকোনও কর্মকান্ডের ছবি ও ভিডিওধারণ নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাসের প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ, কেউ পুলিশ সদস্যদের বিতর্কিত কর্মকান্ড ভিডিও করে প্রচার করলে নিজেই বিপদে পড়তে পারেন। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো ফরাসি সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এই আইন পাস হলে পুলিশি বর্বরতার ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ক্ষুব্ধ জনতা ম্যাক্রোঁ সরকারের এ নীতির প্রতিবাদে আগেই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। জেকলারকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাতে আরও বেশি সাড়া পড়ে যায়। শনিবার প্রায় গোটা ফ্রান্সজুড়েই পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক জায়গায় এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। স্কাই নিউজের সাংবাদিক মিশেল ক্লিফোর্ড বলেন, রাস্তায় খুবই রাগান্বিত অবস্থা। ফ্লাশ বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্যারিস পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ করছে। বিক্ষোভের মধ্যে একের পর এক কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। অনেক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতেও বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ বাহিনীকে চড়াও হতে দেখা গেছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছে, শনিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশটিতে অন্তত ৩৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। বিবিসি, আল-জাজিরা, স্কাই নিউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিতর্কিত-আইন

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ