পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সূর্যোদয়ের দেশ’ জাপান। বাংলাদেশে প্রতিদিনের প্রথম সূর্যোদয় পূর্বকোণ চট্টগ্রামে। আলোকিত হয় সমগ্র দেশ। কারিগরি প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, গবেষণায় উন্নত দেশ জাপান। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের পুরনো উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু। অর্থনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীতে সুখস্মৃতির অভিজ্ঞতার এভারেস্টে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে জাপানি বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। জাপানি ম্যাজিকে উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে আগামী দশ বছরের জন্য (২০২১-২০৩০ সাল)। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যতিক্রমী দিকটি হচ্ছে দীর্ঘকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধুদেশ জাপান, যে দেশটি কখনোই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেনা। দুই দেশের অকৃত্রিম সম্পর্কের রসায়ন তাৎপর্যপূর্ণ। উন্নয়ন সম্ভাবনায় সমুজ্জ্বল।
ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ-শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে আরও বহুমুখী সহযোগিতায় আগ্রহী জাপান। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি বিশেষত বেসরকারি খাতকে বেশি সম্পৃক্ত করতে চায় বাংলাদেশ-জাপান। এরজন্য অপরিহার্য গবেষণা ও উন্নয়নের (আর অ্যান্ড ডি) লক্ষ্যে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সাথে ঢাকাস্থ জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো) এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে।
গত ২২ নভেম্বর বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ‘জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতার লক্ষ্যে আগামী দশ বছরের পরিকল্পনা (২০২১-২০৩০ সাল)’ শীর্ষক এ সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং জেটরো’র ঢাকাস্থ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ও জেবিসিসিআই সভাপতি ইউজি অ্যান্ডো।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বেগবান করতে ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি) উদ্যোগ’ বাস্তবায়ন কার্যকর ও গতিশীল করা, আগামী দশ বছরের পরিকল্পনায় সাফল্যের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তোলা, ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন হয়রানি ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ, বিনিয়োগে সরকারি প্রণোদনা, বাস্তব অর্থেই বিনিয়োগবান্ধব করে নীতিমালা সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দেশে জাপানি সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদের আগেই সম্পন্ন, এমনকি প্রকল্পে বরাদ্দের উদ্বৃত্ত অর্থ ফেরত দিয়ে ইতোমধ্যে চ‚ড়ান্ত স্বচ্ছতার প্রমাণ রেখেছে দেশটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ জাপানের কাছে এ মুহূর্তে গুরুত্বের শীর্ষে। এটি হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার তথা যুগান্তকারী। এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। জাইকা’র জরিপ ও গবেষণার ফলেই মাতারবাড়ীর সমুদ্র প্রান্তে মেগাবন্দর গড়ার সম্ভাবনা উদ্ভাবিত হয়েছে। জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে এটি নির্মিত হচ্ছে জাইকা’র কারিগরি সহায়তায়। বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে এই মেগাপ্রকল্পকে।
বণিক-শিল্পোদ্যোক্তাগণ জানান, জাপানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকেই। যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩১৫টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। এর সমানতালে দেশের বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি উন্নয়নের স্বার্থেই অপরিহার্য। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মীরসরাই থেকে বন্দরনগরী ও কর্ণফুলীর দক্ষিণাংশ হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হচ্ছে। মীরসরাই-সীতাকুন্ড-সোনাগাজীতে দেশের সর্ববৃহৎ ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে’ জাপান এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে দেশটি। এরজন্য কাক্সিক্ষত প্রস্তুতি গ্রহণে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ নিরসন, আগামী ১০ বছরের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি।
সমঝোতা চুক্তি এবং আশাবাদ-
‘জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতার লক্ষ্যে আগামী দশ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৩০ সাল)’ শীর্ষক সমঝোতা স্মারক চুক্তির পার্টনার চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জেটরো এবং জেবিসিসিআই’কে সাথে নিয়ে এই স্মারক চুক্তি (এমওইউ) সম্পাদন করেছি। এটি কার্যকরও হয়ে গেছে। স্মারক চুক্তির মূল দিক হচ্ছে গবেষণা এবং উন্নয়ন (আর অ্যান্ড ডি)। আগামী দশ বছর (২০২১-২০৩০) তা চলমান থাকবে। এর মাধ্যমে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবো। তিনি জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রকল্পওয়ারি গবেষণার মধ্যদিয়ে উন্নয়ন সম্ভাবনাসমূহ উদ্ভাবন, চিহ্নিতকরণ ও অগ্রাধিকার নিরূপণ করা হবে।
সমঝোতা স্মারককে ঘিরে আশাবাদ প্রসঙ্গে দেশের শতবর্ষী প্রাইম চেম্বারের নেতা মাহবুবুল আলম বলেন, নির্মাণাধীন মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জাপান বড়সড় বিনিয়োগ করবে। শিল্প প্লটের সঙ্কট ঘোচাতে মীরসরাইতে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে চিটাগাং চেম্বার থেকে আমরাই সর্বপ্রথম সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম। জাপানি বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে অন্যান্য দেশও বিনিয়োগ-শিল্পায়নে এগিয়ে আসছে। দেশের বৃহত্তম এই শিল্পসিটিতে ধাপে ধাপে ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেইনে উন্নীতকরণ, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণ, চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
চিটাগাং চেম্বারের সাথে জাপানের উপরোক্ত সমঝোতা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, জাপান আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। একসময়ে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসে জাপানের। এখন চীন ব্যাপক আকারে সহযোগিতা দিচ্ছে। জাপান কখনোই আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেনা। এরফলে জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ ‘উইন-উইন’ তথা অর্জন নিশ্চিতের অবস্থানে থাকবে। এ সমঝোতা-সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনবে।
চিটাগাং চেম্বারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপান-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে গভীর আশাবাদ ফুটে উঠে। অনুষ্ঠানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশে জাইকা’র চীফ রিপ্রেজেন্টিটিভ হায়াকাওয়া ইউহো, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, জেবিসিসিআই সহ-সভাপতি শরিফুল আলম প্রমুখ।
তারা বলেন, বেসরকারি খাত অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আসছে ২০২১-২২ সালে ‘বে-অব বেঙ্গল গ্রোথ সামিট’ আয়োজনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ জোরদার এবং চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ এশিয়ার প্রধান বিনিয়োগ কেন্দ্রে পরিণত হবে। চিটাগাং চেম্বারের সাথে জাপানের স্মারক চুক্তি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নির্দেশক। ‘বিগ-বি উদ্যোগ’র আওতায় ঢাকা থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পর্যন্ত অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সম্পৃক্ত। জাপানে বাংলাদেশি পণ্য এবং ব্যবসায় প্রসারে রোড-শো আয়োজন সময়ের দাবি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শুধুই নয় ; স্বাধীনতার পূর্বেও চট্টগ্রামে জাপানি বিনিয়োগ আসে। বেসরকারি খাতের অগ্রণী ভূমিকায় ‘বিগ-বি উদ্যোগ’ তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।