Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিনবিদ্বেষী ম্যারাডোনা বুশকে বলেছিলেন ‘বর্জ্য’

বেল্লা ভিস্তায় বাবা-মায়ের পাশেই কবর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বুধবার ৬০ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন আর্জেন্টিনার ফুটবাল কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনা। গতকাল বুয়েন্স আর্য়ান্স শহরের উপকণ্ঠে বেল্লা ভিস্তায় কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই তাকে কবর দেয়া হয়। অনেকে তাকে বামপন্থী মনে করলেও তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই। মৃত্যু পর্যন্ত আমি ফিদেলিস্তা।’ পাশাপাশি তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-বিদ্বেষী। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে তিনি ‘মানুষের বর্জ্য’র সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন।

ভেনেজুয়েলার মার্কিন বিদ্বেষী সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চ্যাভেজেরও সমর্থক ছিলেন ম্যারাডোনা। ২০০৭ সালে চ্যাভেজের সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি ভেনেজুয়েলাও গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি সমাজতন্ত্র নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি প্রকাশ্যেই তার মার্কিন বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমি সেইসব কিছুকেই ঘৃণা করি যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। আমি ঘৃণা করি আমার সর্বশক্তি দিয়ে।’ নিজেকে চ্যাভেজে বিশ্বাসী ‘চ্যাভিস্তা’ বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘ফিদেল, চ্যাভেজ যা করে, আমার কাছে সেগুলোই ঠিক।’

এর আগে ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার মার দেল প্লাটায় সামিট অফ দ্য আমেরিকাস-এ তিনি আর্জেন্টিনায় জর্জ ডবিøউ বুশের উপস্থিতির বিরোধিতা করে একটি টি-শার্ট পরেছিলেন, যাতে লেখা ছিল ‘স্টপ বুশ’। দ্য গার্ডিয়ান-এর মতে তিনি সেখানে ঘোষণাও করেছিলেন, ‘একজন আর্জেন্টাইন হিসাবে মানব বর্জ্য জর্জ বুশের উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করতে পেরে আমি গর্বিত।’ ম্যারাডোনার বুশবিরোধী মনোভাব সেই সময় আর্জেন্টিনা জুড়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল, তবে দেশটির অনেক নাগরিকই আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তিতে বাধা দেয়ার জন্য তার উপরে রাগান্বিত ছিল।
ফুটবলের বরপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আর্য়ান্সের একেবারে হতদরিদ্র ঘর থেকে চরমক্ষুধা-আর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করেছেন। তার বাঁ পায়ে যেন ছিল জাদু। বিশ্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের জীবনের পরতে পরতে ছিল দারিদ্র, নিপীড়িন। সেই তিনিই পরবর্তীতে এই নিপীড়িতদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। ফুটবল খেলেও যে দারিদ্র ঘোচানো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মূলত তাকে দেখেই আর্জেন্টিনার পরবর্তী একটা প্রজন্ম নেশার জগৎ থেকে দূরে সরে পায়ে তুলে নিয়েছিলেন ফুটবল।

ম্যারাডোনা মনে করতেন, প্রথম বিশ্বের ধনী দেশগুলিই এই দীনতার জন্য দায়ী। ম্যারাডোনা কুশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। তার অভিযোগ ছিল স্বয়ং পোপ থেকে শুরু করে সব দেশের রাজনীতিবিদেরা। তার বক্তব্য ছিল, কেউ গরিবদের পক্ষে কথা বলেন না। বার্লিনের প্রাচীর ধ্বংসের পরে সারা পৃথিবীতে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে ন’গুণ। কিন্তু তা দেখার কেউ না থাকায় তার আক্ষেপ ছিল। জীবনের শুরুতে একটা সময় আর্জেন্টিনার নব্য উদারনীতিবাদী প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমকে সমর্থন করতেন তিনি।

ম্যারাডোনাকে সমাহিত করার আগে সারাদিনই রাজধানী বুয়েনোস আইরেসের রাস্তায় হাজার-হাজার মানুষ জড়ো হয়ে ম্যারাডোনার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। মৃত্যুর পরে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আসলে এক পর্যায়ে মানুষের সারি এক কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ হয়। শোকার্ত মানুষ যখন কফিনের কাছে আসতে চেয়েছিল তখন তাদের সামাল দিতে পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। এসময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। একপর্যায়ে ম্যারাডোনার কফিন জনসম্মুখে যে জায়গায় রাখা হয়েছিল সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর মোটর শোভাযাত্রায় ম্যারাডোনার মরদেহ বুয়েনোস আইরেস শহরের উপকণ্ঠে বেল্লা ভিস্তায় কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে ম্যারাডোনাকে অন্তিম শয়ানে রাখা হয়। এসময় রাজধানী-জুড়ে এক আবেগ-ঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় কেউ কাঁদছিলেন, কেউবা তার জন্য দুহাত তুলে প্রার্থনা করছিলেন। সূত্র : ইনসাইডার।



 

Show all comments
  • Mofizurrahman Rahman ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    কিছু লেখার মতো ভাষা আমার নাই আমার প্রান প্রিয় ফুটবল তারকা না পেরার দেশে চলে গিয়াছে সব ফুটবল ভক্ত দের কাঁদিয়ে আর এই রকম ফুটবলার জীবনে আসবে কিনা জানিনা আমাদের মাঝে স্মৃতি হয়ে থাকবে থিয়াগো মেরাডোনা
    Total Reply(0) Reply
  • কৃষ্ণপদ রায় ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    ফুটবল বিশ্বের জন্য অনেক বড় একটি দুঃখের সংবাদ। তিনি পুরো বিশ্বের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন এই ফুটবল খেলা দিয়ে। আজ পুরো বিশ্বের মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ফুটবলের জাদুকর এই কিংবদন্তি
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Talukder ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    বিশ্ব বিখ্যাত আর্জেন্টাইন ফুট খেলোয়াড় দিয়াগো ম্যারাডোনার মৃত্যু সংবাদটি সত্যিই দুঃখজনক ও শোকাবহ।তার জন্ম ৩০ অক্টোবর ১৯৬০সাল এবং মৃত্যু ২৫ নভেম্বর ২০২০ সাল।তিনি তার শৈল্পিক যাদু করি ফুট খেলার জন্য মানুষের স্মৃতিতে বেচে থাকবেন অনন্ত কাল।আমরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ আলী ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
    As a respect to the amazing player Diego Maradona was I think it would be fitting to his departed soul if FIFA puts the number 10 jersey off the football pitch. As no one would ever replace Maradona ever again
    Total Reply(0) Reply
  • Farhad Ahmed Dewan ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪৫ এএম says : 0
    I 'm jst crying so miss a lot #Dieo❤️❤️❤️
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nurul Islam ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪৫ এএম says : 0
    বিদায় লিজেন্ড ???? একজন কিংবদন্তি ইতিহাস হয়ে গেলেন! কয়েকটা জেনারেশনের স্বপ্নের নায়ক হারিয়ে গেলেন.. সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ ডিয়াগো❤
    Total Reply(0) Reply
  • Didar Doha ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪৬ এএম says : 0
    বিদায় জাদুকর। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, যতদিন ফুটবল থাকবে, এই ধরিত্রী ততদিন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তোমাকে স্মরণ করবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিয়েগো ম্যারাডোনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ