Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সকল সৃষ্টিকে ভালবাসতে শিক্ষা দেয় ইসলাম জুমার খুৎবার বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ পিএম

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নিরাপত্তা ও স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। ইসলামে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। সকল সৃষ্টিকে ভালবাসতে শিক্ষা দেয় ইসলাম। চরম পন্থা অবলম্বন ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পর্ণ বিরোধী। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ায়ে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ খুৎবা পূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন বিধান। ইসলাম কখনো সন্ত্রাস উগ্রবাদ ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের মূল শিক্ষাই হলো ত্রাশ ভয়-ভীতি জুলুম ও অন্যায় অবিচারের অপনোদন করা। মানুষকে জ্ঞান প্রজ্ঞা সংযমের শিক্ষা ও আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানুষ তথা আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) আনুগত্যে আত্মসমর্পণকারী প্রকৃত মুসলিমে পরিণত করা। সেই সাথে অন্যান্য জাতি, ধর্ম ও বোধবিশ্বাসের মানুষের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নিরাপত্তা ও স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। পেশ ইমাম বলেন, ইসলামে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় ইসলাম। চরম পন্থা অবলম্বন ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পর্ণ বিরোধী। পেশ ইমাম বলেন, ইসলাম ভারসাম্য পূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এজন্য বিশ্ব নবী (সা.) মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, 'তোমরা সরল পন্থা অবলম্বন করো, চরম পন্থা বর্জন করো, সুসংবাদ দাও এবং ঘৃণা সৃষ্টি করো না' (বুখারী)। প্রিয় নবী (সা.)আরো বলছেন," প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার কথা বার্তা ও কার্য কলাপে অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকেন"(আবু দাউদ)। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,"হে আহলে কিতাব! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর সম্পর্কে নিতান্ত সত্যি ছাড়া ভিন্ন কিছু বলো না।"মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!
মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-বøক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্য বলেন, ইসলামী শরিয়তে মূর্তি বা প্রাণীর ভাস্কর্যের মাঝে বিধানগত কোন পার্থক্য নেই। শরীয়তে প্রাণীর মূর্তি কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণ কবিরা গুনাহ ও হারাম। সূরা হজ্জের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মূর্তি ও ভাস্কর্যকে নোংরা ও অপবিত্র ঘোষণা করে তা’ পরিত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরুপ সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতে ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুস ও নাসর নামক ভাস্কর্য প্রীতিকে কাফিরদের বৈশিষ্ট বলেও তিনি অভিহিত করেছেন। সহিহ বুখারীর ৭৫৫৭ নং হাদিসে রাসুল (সা.) ভাস্কর্য নির্মাণকারীকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে উল্লেখ করে উহা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং কোন মুসলমান মূর্তি বা কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ কিংবা ্উহাকে সমর্থন করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয় বলে কতিপয় নাস্তিক ও ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কিছু ব্যক্তি ইসলামের শ্বাশত বিধান উপেক্ষা করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। তাই তিনি সকলকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্যবাদী ব্যবসায়ী ব্যতীত অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে কিয়ামতের দিন গুনাগার অবস্থায় উঠানো হবে (তিরমিজি শরীফ)।
তিনি আরো বলেন, আজকাল বেচা-কেনার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা মন খুলে মিথ্যা কথা বলে এতে কোন রূপ গুনাহ হওয়ার অনুভূতি তাদের থাকে না। ব্যবসায়ীদের টার্গেট থাকে পণ্য বিক্রি হতে হবে। এতে মিথ্যা বলার দরকার হলে তা কেউ কেউ দ্বিধাবোধ করেন না। গ্রাহককে প্রলুব্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে কেউ কেউ। আর সামান্য লাভের আশায় নিজের আখেরাতকে ধ্বংস করে ফেলে। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা এতেই নিজেকে সফল মনে করেন। প্রিয় ভাইয়েরা! মনে রাখবেন, এটা দ্বীনের প্রতি অনাগ্রহ, অনাসক্তি ও বেপরোয়া হওয়ার দলিল। মিথ্যা সবসময় মিথ্যাই। মিথ্যা সবসময় গুনাহ ও পাপের কাজ। কাজেই ব্যবসায়ী ভাইদের উচিত নিজেদের মুখে লাগাম লাগানো। যদি তারা এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে সততা ও দ্বীনদারীর সাথে রোজগার করেন তাহলে দুনিয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে অগণিত বরকত দান করবেন এবং পরকালেও তাদের হাশর করাবেন নবী-রাসুলগণ, সত্যবাদী ও শাহাদত বরণকারী বান্দাদের সঙ্গে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে মিথ্যা পরিহার করে সত্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

ঢাকার চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছন, পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ১১৩নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন "তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকবেনা,নতুবা অগ্নি তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই, অতএব তোমরা কোথাও সাহায্য পাবেনা"। এই আয়াতের আরবী অংশ " লা-তারকানূ"মূলতঃ 'রুকূন' থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে কোন দিকে সামান্যতম ঝোঁকা বা আকৃষ্ট হওয়া এবং তার প্রতি আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করা। অপরদিকে তাফসীর জগতের সম্রাট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, "জালেমদের প্রতি ঝুঁকবেনা" এর অর্থ হলো কাফের-মুশরিকদের প্রতি প্রীতি ও ভালবাসা পোষণ করবেনা। সুতরাং আয়াতখানির মর্মার্থ হলো কাফের,মুশরিক ও বেদ্বীনদের প্রতি ঈমানদারদের সামান্যতম আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের প্রতি আস্থা বা মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করারও কোন সুযোগ নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যারা অমান্য করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন যে, তাহলে তাদের আগুন তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে এবং সে আগুনে তোমরাও পুড়ে মরবে। হযরত ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেছেন "জালেমদের প্রতি ঝুঁকবেনা"এর অর্থ হলো তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেনা এবং তাদের কথামত চলবেনা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেশ ইমাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ