Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যারেজে চলছে চিকিৎসা

অভিযান টের পেয়ে পালালেন হাতুড়ে ডাক্তার

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কুজাইল বাজার সংলগ্ন হিন্দু পাড়া গ্রামের মধ্যে অটো চার্জার গ্যারেজের মধ্যে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবৈধ চিকিৎসালয় গড়ে তুলেছে এক হাতুড়ে কথিত অমলা সরকার নামের মহিলা ডাক্তার। তিনি ও তার সহকারি এক গৃহবধূকে নিয়ে পায়ুপথের (মলদ্বার) জটিল অপারেশনসহ যাবতীয় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের মাধ্যমকে ম্যানেজ করে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এ ধরনের জটিল চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তিনি। গত শুক্রবার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ছদ্মবেশে চিকিৎসালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এসে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে গতকাল মঙ্গলবার সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা হয়। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রাশেদুল ইসলাম এই অভিযান পরিচালনা করেন।

স্থানীয় সূত্র ও প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল বাজার সংলগ্ন হিন্দু পাড়ায় লিয়াকত আলী মোল্লার বাড়ীর জরাজীর্ণ নোংরা পরিবেশের ২টি ঘর ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পায়ুপথের (মলদ্বারের) চিকিৎসালয়। সেখানে কথিত হাতুড়ে অমলা সরকার নামের ডাক্তার পাইলস, ফিস্টুলা, অর্শ্ব, পূজপড়া, রক্ত পড়া নামের জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এখানে রোগীরা এলে প্রাথমিক ভাবে ২শ’ টাকা ফি নিয়ে রোগীদের রোগ নির্ণয় করা হয়। এরপর তাদের কথার মাধ্যমে অসহায় নিজেদের কজ্বায় আনা হয়। তারপর ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়।

প্রথমে বিভিন্ন ঔষুধ দিয়ে নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি ইনজেকশন প্রয়োগ, ঔযুধ প্রয়োগের পর অবস্থা বুঝে অপারেশন করেন ডাক্তার। ২টি ঘরের মধ্যে একটি কথিত অপারেশন থিয়েটার ঘর কাম মহিলা রোগীদের থাকার ঘর অন্যটি পুরুষ রোগীদের জন্য। মহিলাদের থাকার ঘরটিতেই অপারেশনের কার্যক্রম চলে। ভর্তি রোগীদের অপারেশনের পর ৭ থেকে ৯দিন সেখানেই থাকতে হয়। কথিত ডাক্তার অপারেশন করার পর থেকে ওই বাড়ীর মালিকে বড় ছেলের স্ত্রী আসমা বেগম হাতুড়ে ডাক্তারের সহকারী হিসেবে সেবাশ্রুশা, ওষুধ প্রয়োগসহ সেবিকার কাজ করে থাকেন। সেখানে এলাকার মানুষের চেয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মানুষরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এসে অবস্থান করে। মাটির চুলায় নিজেদের রান্না করে খেতে হয়। অপারেশনের রোগী প্রতি ১হাজার ৫’শ টাকা ভাড়া বাড়ীর মালিক লিয়াকত আলী মোল্লাকে ভাড়া হিসেবে দিতে হয়। আর বাকী টাকা থাকে ডাক্তার ও তার সহকারীর পারিশ্রমিক হিসেবে।

এ ধরণের জটিল চিকিৎসা ও অপারেশনের সরকারি কোন অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে কথিত হাতুড়ে ডাক্তার অমলা সরকার নিজেকে নার্স হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, বগুড়ার মিশন হাসপাতালে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়েই রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। তার কাছে আর্মি, পুলিশসহ সরকারি অফিসাররা চিকিৎসা নিয়ে বেশ ভাল আছেন বলে জানান। তবে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেই সব ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর চাইলে তাদের নিকট সংরক্ষণ নেই বলে দাবি করেন। তিনি আরো জানান, তার শ্বশুরের দেয়া গোপন ফর্মুলা ব্যবহার করে তিনি নিজেই ইনজেকশন তৈরি করে এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রাশেদুল ইসলাম বলেন, কুজাইল গ্রামের মৃত শিমন ডাক্তারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চিকিৎসার কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। এই জন্য শিমন ডাক্তারের স্ত্রী জয়া সরকারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই স্থানে মৃত খোকন ডাক্তারের স্ত্রী অমলা সরকারের ভাড়া করা চিকিৎসালয়ে অভিযান চালিয়ে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত কিছু উপকরণ উদ্ধার করা হয়। আমাদের অভিযান টের পেয়ে অমলা সরকার ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাই বাড়ির মালিক লিয়াকত আলী মোল্লাকে ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে এই দুই চিকিৎসালয়ে যেন আর কোন দিন কোন প্রকারের চিকিৎসা সেবা দেওয়া না হয় সেই মর্মে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন (অংকুর) বলেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেউ কোন বিষয়ে কোন রোগের চিকিৎসা দেওয়ার অধিকার রাখে না। তাই এই সব অখ্যাত-কুখ্যাত চিকিৎসালয়ের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, আমরা প্রাথমিক তথ্যাদি পেয়ে এই দুটি অবৈধ চিকিৎসালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছি। উপজেলায় যদি আরো এই ধরনের চিকিৎসালয় থাকে তাহলে আমাকে তথ্যাদি দিলে সেগুলোতেও এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে। আগামীতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ