গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা : মুসলমানদের প্রথম কিবলা ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র মসজিদুল আকসার খতীব শায়খ আলী ওমর ইয়াকুব আব্বাসী ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পরিদর্শনের সময় তিনি মাদরাসার প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে এশার নামাজে ইমামতি করেন এবং জামাতে শরিক হওয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ অগণিত মুসল্লির উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বুখারী শরীফের দরস প্রদানও করেন। মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি বলেন, ইসলামের সুমহান শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়ার কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ আজ দুর্দশার শিকার। পরে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামীর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার পক্ষ থেকে হেফাজত আমীর মসজিদুল আকসার খতীব শায়খ আব্বাসীকে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও ইলমে হাদীসের উপর অবদান রাখার জন্য বিশেষ সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে সনদপত্র এবং পাগড়ি পরিয়ে দেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রচার করা হয়, পবিত্র মসজিদুল আকসার খতীব হাটহাজারী মাদরাসা মসজিদে রাত সাড়ে ৯টায় এশার জামাতে ইমামতি এবং মুসল্লীদের উদ্দেশে বয়ান করবেন। এ সংবাদ প্রচার হওয়ার পরই মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ২০ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতার ৭ তলা বিশিষ্ট প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পুরো মাঠজুড়েও মুসল্লি সমাগম বাড়তে থাকে। খতীব শায়খ আলী ওমর ইয়াকুব আব্বাসী নিরাপত্তা কর্মীদের পাহারায় রাত সাড়ে ১০টায় হাটহাজারীতে পৌঁছালে হাজার হাজার জনতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ‘আহলান সাহলান’ বলে খতীবকে স্বাগত জানান। তিনি সরাসরি জামে বায়তুল করীমে গিয়ে প্রথমে এশার জামাতে ইমামতি করেন।
পরে জনতার সামনে মসজিদুল আকসার খতীব শায়খ আলী ওমর ইয়াকুব আব্বাসীকে পরিচয় করিয়ে দেন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। এরপর শায়খ আব্বাসী দাওয়াতী কার্যক্রম ও মাদরাসা শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নবী-রাসূলগণ দুনিয়াতে আগমন করেছেন মানুষকে তাদের সঠিক পথের দিশা দিয়ে ঈমান-আমল মজবুতির মাধ্যমে পরকালীন কামিয়াবীর পথে আহŸান জানাতে। ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসিতার জন্য মানুষ কত শত চেষ্টা সাধনার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। অথচ মুসলমানদের অনেকেই দুনিয়াকে ক্ষণস্থায়ী জীবন বলে মুখে স্বীকার করলেও পরকালীন স্থায়ী জীবনের সুখ-শান্তি এবং আল্লাহ-রাসূলের রাজি-খুশির জন্য ইবাদত-বন্দেগী ও দাওয়াতী কার্যক্রম থেকে অনেক দূরে সরে আছেন। ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত হয়ে ইসলামের সুমহান শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়ার কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ আজ দুর্দশার শিকার।
তিনি বলেন, আমাদেরকে সঠিক উপায়ে আল্লাহ-রাসূলের আদেশ মেনে চলতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলামের সুন্দর ও শান্তির বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্যে সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতী কার্যক্রমকে আরো ব্যাপকতর করতে হবে। পাশাপাশি সমাজ ও দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও মানব সেবার মতো মহান কাজে নিজেদেরকে ব্রত হতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামের মহান শিক্ষা সা¤্রাজ্যবাদ, বস্তুবাদ ও ভোগবাদের পথে বাধা হওয়ার কারণেই তাদের পক্ষ থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদসহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার করা হচ্ছে। একই উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনের ন্যায্য স্বাধীকারের সংগ্রামকেও সন্ত্রাসবাদের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, মুসলমানগণ যদি সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও ঐক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হন, তবে সকল মিথ্যাচার ও অন্যায় আগ্রাসন ধূলিসাৎ হতে সময় লাগবে না।
মুসল্লিদের উদ্দেশে আধা ঘণ্টার বক্তব্য শেষে মসজিদুল আকসার খতীব শায়খ আলী ওমর ইয়াকুব আব্বাসী হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল সম্মান) ক্লাসের আড়াই হাজারেরও বেশি ছাত্রের ক্লাসে বুখারী শরীফের দরস প্রদান করেন।
এরপর হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাতে মিলিত হন এবং তার সম্মানে দেয়া নৈশভোজে শরিক হন। এ সময় ছিলেন শায়খ আব্বাসীর সফরসঙ্গী লন্ডন নাজাত ইসলামী মারকাজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল এবং গরীব এন্ড এতিম ট্রাস্ট ফান্ড ইউকে’র চেয়ারম্যান মাওলানা সালেহ আহমদ হামিদী ও লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা ফরিদ উদ্দীন খান।
ভোজসভা শেষে এক সংক্ষিপ্ত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে হেফাজত আমীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার পক্ষ থেকে ইসলামের প্রচার-প্রসারে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা এবং ইলমে হাদীসের উপর বিশেষ অবদান রাখার জন্যে মসজিদে আকসার খতীবকে বিশেষ সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়ে সনদপত্র প্রদান করেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী সম্মানসূচক পাগড়ি পরিয়ে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আল্লামা মুফতী নূর আহমদ, আল্লামা মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামী, আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী, মুফতী ফরিদুল হক, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা রাশেদুল ইসলাম, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা ক্বারী জহিরুল হক, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ। সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানে মসজিদে আক্বসার খতীব আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, সারাবিশ্বে পরিচিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন এই ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র থেকে তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পাগড়ি দেওয়ায় তিনি খুবই সম্মানিত বোধ করছেন। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখেন। হেফাজত আমীরসহ উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ থেকে বিদায় নিয়ে হাটহাজারী মাদরাসার দারুল হাদীস মিলনায়তন ও শিক্ষাভবন পরিদর্শন করে রাত ১টায় হাটহাজারী ত্যাগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।