Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল

উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

 করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন ছিল কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো। গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষামূলক খুলে দেয়া হয় গত ১৭ আগস্ট। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে সীমিত আকারে চালু হওয়া পর্যটনে এখন সরগরম। তবে আগত পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং নানা দিবসের ছুটিতে পর্যটকে ভিড় থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। স¤প্রতি শেষ হওয়া দুর্গাপূজার ছুটিতে লোকারণ্য হয়ে ওঠা কক্সবাজার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ভরে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পূর্ণ হয়ে গেছে সৈকত তীরের হোটেল-মোটেল-কটেজ ও গেস্ট হাউজগুলো। অসময়েও মাসে শতকোটি টাকার বাণিজ্য করছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এধারা অব্যাহত থাকলে করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার ভোর থেকে সৈকতে ভিড় করেছেন নানা বয়সী পর্যটক। তবে সিংহভাগ পর্যটকই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সৈকতে দায়িত্বরত লাইফগার্ড কর্মীরা। এরপরও বেড়াতে আসা পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন। আগত পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সৈকত, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলো দেখতে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল- মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে রয়েছে। যেখানে লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। সাপ্তাহিক ছুটিতেও প্রায় লাখো পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। শতভাগ বুকিংয়ে জমজমাট ব্যবসা করছে তারকা হোটেলগুলো।
কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সূত্র জানায়, আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটক সমাগম বাড়ে দেখে মোতায়েন রাখা হয় অতিরিক্ত পুলিশও। পর্যটক হয়রানি রোধে পর্যটন স্পটগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রবিউল হাসান জানান, করোনা একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাড়ির সবাই আতঙ্ক নিয়ে কাটিয়েছি দীর্ঘ ৮ মাস। এখন আবার দ্বিতীয় ফ্লু শুরুর শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। তাই মানসিক প্রশান্তির আশায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে সৈকতের নোনাজলের সান্নিধ্য নিতে এসেছি। পরিবারসহ খুবই মজা করছি।
সি-সেইফ লাইফগার্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, দুর্গাপূজার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন পর্যটকরা সৈকতে ভিড় বাড়াচ্ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হলেও বালিয়াড়িতে আসা পর্যটকদের অধিকাংশই মাস্ক পরে না। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় অব্যাহত রাখলেও পর্যটকরা সচেতন হচ্ছেন না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ ইসলাম জানান, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেঁস্তোরায় মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা আগেই দেয়া ছিল। সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র (ইনবক্স)। জরিমানা করা হয়েছে কয়েকটি রেঁস্তোরা ও হোটেলকে। এখন করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতা মূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রমমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত হয়রানির শিকার না হন, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-মহিলা পুলিশের সংখ্যাও সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রæত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বিচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়াসহ পুরো সৈকতে পুলিশের নজরদারীর আওতায় রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা চিন্তা মাথায় রেখে অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষামূলক খুলে দেয়া হয়। সামনে পর্যটন মৌসুম আসছে। আবার করোনার দ্বিতীয় ফ্লো-র শঙ্কার কথাও ঘোষণা এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা রোধের পাশাপাশি পর্যটনটাও এগিয়ে নিতে হবে। সেভাবেই পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দেয়া রয়েছে। সবাই আন্তরিক হলে পর্যটন ব্যবসা ঠিক রেখে করোনা রোধ সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

 

 



 

Show all comments
  • ABDULLAH ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৯:২২ এএম says : 0
    এ খানে করনা চাষ হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ