গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ আমানত (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিñিদ্র নিরাপত্তার ফাঁকে ঢুকে পড়া স্বর্ণের চালান অপরাধী-চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাচ্ছে। বিমানবন্দর হয়ে আসা স্বর্ণের বার ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্র-মাদক চোরাচালানসহ হুন্ডি ব্যবসায়। অনেকটা বার্টারট্রেডের মতো অপরাধীরা এসব স্বর্ণের বার বিনিময় করছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে অপরাধীদের সাম্রাজ্য, মজবুত হচ্ছে তাদের ভিত্তি। স¤প্রতি নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের একটি গুদাম থেকে সিন্দুকভর্তি স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত ২৫ জানুয়ারি রেয়াজুদ্দিন বাজারের তামাকুমুÐি বাহার মার্কেটের ছয়তলা থেকে আটক দুটি সিন্দুক থেকে ২৫০টি স্বর্ণের বার ও নগদ ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। সিন্দুক দুটির মালিক রেয়াজুদ্দিন বাজারকেন্দ্রিক শীর্ষ চোরাকারবারি আবু আহমেদকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আড়ালেই রয়ে গেছে এ চক্রের অন্য সদস্যরাও। ওই ঘটনা চোরাচালান আইনে মামলা করে ডিবি। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির পরিদর্শক কেশব কুমার।
তদন্ত তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিবির এডিসি বাবুল আক্তার বলেন, আবু আহমেদ দীর্ঘদিন থেকে কসমেটিকস ব্যবসার আড়ালে চোরাচালান করে আসছে। চোরাপথে আসা স্বর্ণের বারের মজুদ গড়ে তোলে সে। সেখান থেকে চোরাচালানিরা স্বর্ণের বার কিনে নিত। এসব বার অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং হুন্ডিতে ব্যবহার হত। আবু আহমেদের সাথে চোরাচালানি চক্রের যোগাযোগ থাকার বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতার করা গেলে চোরাচালানি চক্রের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। আবু আহমেদ এখনও দেশেই রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব শিগগির সে এবং তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ধরা পড়বে।
মামলার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আবু আহমেদ বেশ কয়েক বছর থেকে বাহার মার্কেটের ছয় তলায় গুদামের আড়ালে স্বর্ণের বার মজুদ করে আসছিল। চোরাকারবারিরা এসব স্বর্ণ তার কাছ থেকে কিনে নিত। স্বর্ণের বিনিময়ে ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ হরেক রকমের মাদকদ্রব্য আনছে চোরাকারবারিরা। গরু চোরাচালানেও বিনিময় হচ্ছে স্বর্ণের বার। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা চোরাচালানের সাথে জড়িতরাও আবু আহমেদের কাছ থেকে স্বর্ণের বার কিনে নিত। রেয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে আবু আহমেদের যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পেরেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন জুয়েলারীতেও আবু আহমেদের চোরাই স্বর্ণ বিক্রি হত।
নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ধারণা, রেয়াজুদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেটের মত মহানগরীতে এ ধরনের অবৈধ স্বর্ণের মজুদ থাকতে পারে। এর আগে নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায় একটি ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর গুদামে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া গত বছর নগরীর বায়েজিদ এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে ১২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। সা¤প্রতিক সময়ে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং পুলিশ চেকপোস্টে স্বর্ণের বার উদ্ধারের অসংখ্য ঘটনা ঘটে।
মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ নিশ্চিত বিমানবন্দরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে অসংখ্য স্বর্ণের চালান ঢুকে পড়েছে। এসব চালান চোরাকারবারি এবং অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাÐে এসব স্বর্ণ বিনিময় করছে। এতে করে অপরাধীদের ভিত শক্ত হচ্ছে।
এদিকে গত দুই বছরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১৪ মণ স্বর্ণ ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর অন্তত ১০ গুণ নিরাপদে পাচার হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিমানে আসা স্বর্ণের ছোট-বড় চালান ধরা পড়ছে। বিমানবন্দরে আটক এসব স্বর্ণের চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস হয়ে জমা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কোষাগারে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাস্টডি শাখার রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৩৮ দশমিক ৩০ কেজি স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার আটক হয়েছে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আটক হয়েছে ২২১ দশমিক ২৭ কেজি। দুই বছরে ৫৫৯ কেজি বা ১৩.৯৭৫ মণ স্বর্ণ ধরা পড়ে।
আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্র শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দীর্ঘদিন থেকে চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব স্বর্ণের চালান চট্টগ্রাম আসছে। বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের চোখে ফাঁকি দিতে চোরাকারবারিরা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তারা বিভিন্ন সময়ে রুটও পরিবর্তন করছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইটে না এনে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়া থেকে আসা ফ্লাইটে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসার পর একাধিক চালান ধরাও পড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা স্বর্ণ চালানের বিরাট অংশ চোরাই পথে প্রতিবেশী ভারতে চলে যাচ্ছে। সেখানে বিশ্বমানের অলংকার তৈরি করা হয় ওইসব বার দিয়ে। পরবর্তীতে এসব অলংকার মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। চোরাচালান হয়ে আসা স্বর্ণের একটি অংশ এদেশের চোরাকারবারিদের হাতে চলে যাচ্ছে। চোরাচালানি পণ্যের বিপরীতে এসব স্বর্ণের বার বিনিময় করছে অপরাধীরা।
বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত স্বর্ণের চালান ধরা পড়লেও মূল পাচারকারীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। চালান বহনের দায়ে যারা ধরা পড়ছে তারাও মূল চোরাকারবারিদের সম্পর্কে তেমন তথ্য দিতে পারছে না। এতে করে তাদের নেটওয়ার্ক অক্ষতই থেকে যাচ্ছে। অপরদিকে বিমানবন্দরের বাইরে স্বর্ণের বারসহ গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকেও তেমন তথ্য মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের মামলায় পুলিশ মূল অপরাধীদের শনাক্ত করার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায় না। অপরাধীরা অর্থশালী এবং সেইসাথে প্রভাবশালী হওয়ায় তদন্ত বেশিদূর এগোয় না। নগরীর সদরঘাট এলাকায় ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর গুদাম থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের মামলার তদন্তও বেশিদূর যায়নি। রেয়াজুদ্দিন বাজারে লোহার সিন্দুক থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধারের ১২ দিন পার হলেও সিন্দুকের মালিককে ধরতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়, পুলিশ এখন চাপের মুখে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।