পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ধরা হয়েছে এবং দরকারের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর তাই অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে রয়েছে, এমনটাই বলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কর্মকর্তারা বলছেন, সামনের দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হতে পারে।
চলমান অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগুচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছিল দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশ এখন চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। যা সম্ভব হয়েছে কারণ ২০০৯ সাল থেকে এবছরের জুলাই পর্যন্ত ১১১ টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। কিন্তু কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির অনুমতি দেয়া হয়েছিল তার একটি বড় অংশ বাদ পড়ছে। রামপাল, পায়রা, মাতারবাড়ি ও বাঁশখালির মতো নির্মাণাধীন বড় প্রকল্পসহ ২১টি কয়লা-ভিত্তিক কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের অনুমতি পেয়েছিল। তার মধ্যে ১৬টিই বাদ পড়তে পারে। এর মধ্যে সরকারি, সরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ এবং দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যেসব প্রতিষ্ঠানকে এসব কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেরই বিদ্যুৎ খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে রামপাল, পায়রা, মাতারবাড়ি ও বাঁশখালির মতো বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ঠিকই থাকছে।
বাংলাদেশ যেহেতু ইতিমধ্যেই চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, তা হওয়া সত্তে¡ও নতুন উৎপাদন কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এজাজ হোসেন। তিনি বলছেন, ‘এটার উত্তরের ব্যাপারে সরকার এখন ব্যাকফুটে চলে গেছে। এটার উত্তর তারা দিতে পারছে না। এখানে যেটা হয়েছে যে দুটো জিনিস। সরকারের একটা সেকশন পাওয়ার মিনিষ্ট্রিকে বলেছে যে আমাদের দেশে এরকম গ্রোথ হবে, বিদ্যুতের এরকম ডিমান্ড হবে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদনের দরকার হবে। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে যে পরিমাণ গ্রোথ হওয়ার কথা ছিল সেটা আমরা লক্ষ করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কখনো সমন্বিত পরিকল্পনা হয় না। মানে তারা যদি সমন্বিত পরিকল্পনা করতো তাহলে কিন্তু তারা দেখতে পেত যে সেরকম গ্রোথ যেহেতু হচ্ছে না অতএব এরকম পাওয়ার প্ল্যান্টের আমাদের প্রয়োজন নেই।’
বাংলাদেশে বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদার অনুমান এবং সেই অনুযায়ী উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনাতেই গলদ রয়েছে বলে মনে করেন অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশে গ্রীষ্মকালেও বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের উপরে ওঠে না। শীতে সেটি আট হাজারে নেমে আসে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের বেশি কখনোই উৎপাদন করতে হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২১ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ধরা হয়েছে এবং দরকারের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান কেন্দ্রের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের বেশিরভাগ সময় অলস পড়ে থাকে। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে অনুমতি দেয়া প্রকল্প বাদ দেয়ার চিন্তা।
বিশেষজ্ঞদের মতে ভুল অনুমানের উপর ভিত্তি করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেয়া মানে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের বোঝা হয়ে ওঠা। অলস পড়ে থাকা এই কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ নেবে বলে চুক্তি করেছিল সেটি নেয়ার দরকার না হলেও চুক্তি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ঠিকই দিতে হয়েছে। যেমন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হিসাবে গত ছয় বছরে বিদ্যুৎ বিভাগের তাতে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিষয়ক ২০১০ সালের মহাপরিকল্পনায় কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দিকে বেশি জোর দেয়া শুরু হয়। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির উৎস হিসেবে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কয়লা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সর্বশেষ মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে, তাতে গ্যাসে ৩৫ শতাংশ, কয়লায় ৩৫ শতাংশ, তেল, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাকি ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তবে ইতিমধ্যেই নতুন পরিকল্পনার দিকে এগুচ্ছে সরকার।
সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলছেন সামনের দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হতে পারে। সেটির একটি ধারনা দিয়ে তিনি বলছেন, ‘আমরা টার্গেট করেছিলাম ২০৪১ সালে আমাদের চাহিদা হবে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের মতো। যার বিপরীতে আমরা উৎপাদন পরিকল্পনা করেছি ৬০ হাজার মেগাওয়াট। আমরা ধারনা করেছিলাম ২০২০-এ আমাদের চাহিদা হবে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু ১৩ হাজারের উপরে ওঠেনি। সেই কারণে আমরা এখন রিভাইজ করছি এবং উৎপাদন পরিকল্পনাটা আমাদের কমে আসবে। সেটা আমরা রিভিশন করবো।’ বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং কেন্দ্র নির্মাণে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ভুল পথে হাঁটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর অর্থনৈতিক ক্ষতি যা হওয়ার তা বোধহয় এতদিনে হয়ে গেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।