পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন নিরুৎসাহিত করলেও দেশের ৪টি কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আবারো ২ বছর করে বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস, এটির উৎপাদনক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট। রাজশাহীর নর্দার্ন পাওয়ার সল্যুশন এর উৎপাদনক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট। ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ারপ্যাক লিমিটেড এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনহা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন। এসব কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ স¤প্রতি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট।
ফার্নেস অয়েলভিত্তিক পাঁচ বছর মেয়াদী এই চার রেন্টাল কেন্দ্র ২০১০ সালে উৎপাদনে আসে। এরপর তাদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়, যা চলতি বছর শেষ হয়েছে। উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলেও ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে এগুলোর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়, এটাই ক্যাপাসিটি চার্জ। প্রস্তাবে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আস্তে আস্তে গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডিজেলভিত্তিক মোট ৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৪৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি মিলে মোট ১ হাজার ১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, দাম কম হওয়ায় কিছু কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট শর্তে বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেসভিত্তিক ৪৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি এবং গ্যাসভিত্তিক ২১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ এই শর্তে বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবে দাবি করা হয়, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুম বিবেচনায় জরুরি প্রয়োজনে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। প্রস্তাবে বলা হয়, দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৯৯৫ মেগাওয়াট হলেও অপ্রতুল গ্যাসের কারণে বর্তমানে ৫ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর ৪২ গ্যাস সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনের আগে শেষ হবে না। ফলে মেঘনাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন বৃহৎ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালের আগে উৎপাদনে আসবে না। তাই এই চার কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। চার কেন্দ্রের রেন্টাল চার্জ ছিল প্রতি মাসে কিলোওয়াটপ্রতি ১৩ ডলার। এর সঙ্গে প্রতি কিলোওয়াটে জ্বালানি খরচ গড়ে ১৩ টাকা ৭০ পয়সা যুক্ত হবে। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবি’র খরচ হবে প্রায় ১৭ টাকা।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) এখন দেশের অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে সংসদীয় কমিটির কাছে দেয়া প্রতিবেদনে ৯ মাসে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা চার্জ দেয়ার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ কেটি টাকা। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। প্রায় তিন বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ২১ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট হিসাবে। কিন্তু গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। আর এখন উৎপাদিত হচ্ছে কম বেশি ১৩ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ সমানই আছে।
এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র Ñরেন্টাল ও কুইক রেন্টাল, আমদানি করা বিদ্যুৎ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারদের (আইপিপি)। এভাবেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত বছর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে। সংসদীয় কমিটিকে দেয়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেয়াদপূর্তিতে অবসরে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বর্তমানে ১ হাজার ১০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। এতে বলা হয়, এগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অবসরে যাবে। সংসদীয় কমিটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে সেগুলোকে অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করে। এ পর্যন্ত ৬টি রেন্টাল এবং ৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় বলে জানানো হয়। এরমধ্যে ২৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৩৯৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সব মিলিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮৩৩ মেগাওয়াট। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি রেন্টাল ও দুটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তা বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্যাসভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৪৫ মেগাওয়াট। বর্তমানে ১৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৫২ মেগাওয়াট এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক নয়টির উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫৭ মেগাওয়াট।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ কে বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হচ্ছে না। সরকার চুক্তি নবায়ন করেই যাচ্ছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ (রেন্টাল ভাড়া) হিসেবে দিতে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।