মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : বেলজিয়ামের এক গুহায় নিয়েনডারথাল মানুষের অস্থি খুঁজে পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা এক প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, সেই সময় মানুষ নরখাদক ছিল! নিয়েনডারথাল মানুষরা মানব শরীরের গোশত খেতে দ্বিধাবোধ করত না। নর গোশত ভক্ষণ, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ক্যানিবালিজম। এর দ্বারা মানুষের ওই আচরণকে বোঝানো হয়, যার কারণে একজন মানুষ আরেকজনের গোশত ভক্ষণ করে। মানব সভ্যতার কোন পর্বে যে ঠিক কী লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটা কল্পনারও অতীত! তবে মাঝে-মধ্যেই একেকটা অধ্যায় চলে আসে চোখের সামনে, যেটা বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। যেমনটা পাওয়া গেল বিজ্ঞানীদের ওই প্রতিবেদন। বিজ্ঞানীরা জানান, নিয়েনডারথাল মানুষ অন্যকে হত্যা করে তার গোশত খেত না। গোষ্ঠী সদস্যের কারো মৃত্যু হলে তখনই তার গোশত খাওয়া হতো। তাদের মতে, গুহায় যে হাড়গুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো পরীক্ষা করে জানা গেছে, তীক্ষè পাথরের ফলা দিয়ে আঘাত করে করে শরীর থেকে ভেঙে নেয়া হয়েছিল হাড়গুলো। পাথর দিয়ে ফাটিয়ে বের করে নেয়া হয়েছিল মজ্জা। তা ছাড়া যে দাঁত পাওয়া গেছে, সেগুলো পরীক্ষা করেও তার মধ্যে মানুষের গোশত খাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, লিবিয়া ও কঙ্গোতে বেশকিছু যুদ্ধে ক্যানিবালিজমের চর্চা করা হতো। এমনকি করোওয়াই নামে এমন একটি উপজাতি আছে, যারা এখনো বিশ্বাস করে, নর গোশত ভক্ষণ সংস্কৃতিরই একটি অংশ। কিছু মিলেনেশিয়ান উপজাতি এখনো তাদের ধর্মচর্চা ও যুদ্ধে এ কাজ করে। প্রস্তরযুগে পূর্ব-পুরুষদের খাবারের অভ্যাস নিয়ে অনেক ধরনের ধারণাই প্রচলিত রয়েছে। মূলত ভাবা হতো, সেই সময় আমাদের পূর্ব-পুরুষরা সবজি, ফলমূল, বাদাম, নানা রকম শেকড়-বাকড় এবং পশু-পাখির গোশত খেয়ে বেঁচে থাকত। তবে আদিম মানুষ নরখাদক ছিল বলে অনেকে অনুমান করলেও এর পক্ষে এতদিন তথ্য-প্রমাণ সেভাবে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবারের এই প্রতিবেদনে সেই প্রমাণই পাওয়া গেল। ইতিহাস বলছে, চার লাখ বছর আগে নিয়েনডারথাল প্রজাতি ইউরোপ আর পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ৪০ হাজার বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। সে জন্যই তাদের নিয়ে কৌতূহলেরও অন্ত নেই। মনে করা হয়, এই নিয়েনডারথালদের জীবনযাপনের সূত্রটি খুঁজে পেলেই মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক অনাবিষ্কৃত অধ্যায় আলোকপাত হবে। সেই আলোকপাতের ধারাই এবার চমকে দিল পৃথিবীকে। বেলজিয়ামের গয়েট গুহায় চারজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একজন শিশুর অস্থি পরীক্ষা করে জানা গেল, নিয়েনডারথাল মানুষ নরখাদক ছিল। ৪০ হাজার ৫০০ থেকে ৪৫ হাজার ৫০০ বছর আগে মৃত এই মানুষদের হাড়ের ৯৯টি টুকরো পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য, এমন দাবি যে নিয়েনডারথালদের নিয়ে এই প্রথম উঠল, সেটা কিন্তু নয়। এর আগে যখন ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের এক গুহা থেকে নিয়েনডারথাল মানুষের অস্থি পাওয়া গিয়েছিল, তখনো ঠিক এ কথাই বলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এদিকে অনেক গবেষক দাবি করছেন, এই মৃত মানুষের গোশত খাওয়াটা নিয়েনডারথালদের অভ্যাস নয়, বরং একটা প্রথা। যদিও দাবির সপক্ষে তারা খুব জোরালো কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি। প্রসঙ্গত, আধুনিককালেও নর গোশত ভক্ষণের উদাহরণ পাওয়া যায়। প্রখ্যাত লেখক জেমস ডাব্লিউ ডেভিডসন ১৯০৩ সালে তার লেখা বই দি আইসল্যান্ড অব ফরমোজা বইয়ে বর্ণনা করেন, কীভাবে তাইওয়ানের চীনা অভিবাসীরা দেশটির আদিবাসীদের গোশত ভক্ষণ ও বিক্রি করেছিল। ১৮০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের মাওরি উপজাতিরা নর্থল্যান্ডে দ্য বয়েড নামে একটি জাহাজের প্রায় ৬৬ জন যাত্রী ও ক্রুকে খুন করে তাদের গোশত খেয়েছিল। এছাড়া মাওরিরা যুদ্ধের সময় তাদের প্রতিপক্ষের গোশতও খেয়ে থাকত। অনেক সময় সমুদ্রযাত্রী ও দুর্যোগে আক্রান্ত অভিযাত্রীরাও টিকে থাকার জন্য অন্য সহযাত্রীদের গোশত খেত। এমনই একটি উদাহরণ, ১৮১৬ সালে ডুবে যাওয়া ফ্রেঞ্চ জাহাজ মেডুসার বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের টানা চারদিন সাগরে ভেলায় ভেসে থাকার পর ক্যানিবালিজমের আশ্রয় নেয়া।
১৯৩০-এর দশকে ইউক্রেনে, রাশিয়ার ভলগা, দক্ষিণ সাইবেরিয়া এবং কুবানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় নর গোশত ভক্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৩ সালে জার্মানির প্রায় এক লাখ যুদ্ধবন্দি সেনাকে রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় পাঠানোর সময় তারা ক্যানিবালিজমের আশ্রয় নেয়। কম পরিমাণের খাবার সরবরাহ ও অসুখে আক্রান্ত হওয়ার কারণেই এই পথ বেছে নিয়েছিল তারা। ক্যানিবালিজমের ফলে শেষপর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার বন্দি স্ট্যালিনগ্রাডে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল। হাতাম আলী নামে এক ভারতীয় যুদ্ধবন্দি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউ গিনিতে জাপানি সেনাদের নর গোশত খাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানি সেনারা চিচিজিমাতে পাঁচজন মার্কিন বিমান সেনাকে হত্যা করে খেয়ে ফেলেছিল। উত্তর ভারতের আঘোরী নামে একটি ক্ষুদ্র উপজাতি নর গোশত তাদের ধর্মীয় উপাসনার অংশ হিসেবে ও অমরত্ব অর্জনের জন্য খেয়ে থাকে। সাম্প্রতিক অতীতে ড্রেঞ্জেল ভারগাস নামে ভেনেজুয়েলার এক ব্যক্তি দুই বছরে কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তিকে খুন করে খেয়ে ফেলেছিল। জেফরি ডাহমার নামে এক আমেরিকানের বাসায়ও মানুষের হাড় ও গোশত পাওয়া গেছে। এছাড়া পিটার ব্রায়ান নামে একজন ব্রিটিশকে ইস্ট লন্ডনে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গেফতার করা হয়, যে তার বন্ধুকে খুন করে খেয়ে ফেলেছিল। ডেইলি মেইল, গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।