Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্পের নির্বাচন পরবর্তী কৌশলগুলো তাকে স্বৈরশাসকদের কাতারে ফেলছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৮:০৩ পিএম | আপডেট : ৮:২২ পিএম, ১৩ নভেম্বর, ২০২০

গত আগস্টের নির্বাচনের পরে বেলারুশের শক্তিশালী শাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো নিজের নিরঙ্কুশ জয় ঘোষণা করে যখন ষষ্ঠ বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ করেছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি নির্বাচনে ভোটারদের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি বলে তার নিন্দা করেছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত মাসে সেই নির্বাচনকে ‘প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা তার ক্ষমতা গ্রহণের বিরোধিতা করেছি। আমরা জানি বেলারুশের মানুষ কী চায়। তারা অন্যরকম কিছু চায়।’ মাত্র এক মাস পরেই পম্পেওর বস, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন লুকাশেঙ্কোর দেখানো পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে সেই একনায়কদের ক্লাবে যোগদান করছেন, যারা ভোটারদের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, নিজেদেরকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ, যারা ‘মুক্ত বিশ্ব’র নেতা হিসাবে অন্যান্য দেশগুলোকে কয়েক দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন এবং ফলাফলকে সম্মান জানানোর বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছিল, সেই দেশের নেতা হিসাবে ট্রাম্পকে এমন স্বৈরাচারী আচরণ মানায় না। তিনি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বেশিরভাগ স্বৈরশাসকরা নির্বাচনের আগেই আসল প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দিয়ে এবং একতরফা মিডিয়া কভারেজের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করেন। কিন্তু যখন তারা সত্যিকারের প্রতিযোগিতামূলক ভোটের সম্মুখীন হয় এবং ফলাফল তাদের বিরুদ্ধে যায়, তারা প্রায়শই সেই ফল উপেক্ষা করে সেটি বিশ্বাসঘাতক, অপরাধী এবং বিদেশী নাশকতার কাজ হিসাবে দাবি করে তা অবৈধ বলে ঘোষণা করে। গত সপ্তাহের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করে ট্রাম্প অনুরূপ কৌশল অনুসরণ করছেন।

তবে যে আইন ও সংস্থাগুলো আমেরিকান ভোটারদের রায়টি কার্যকর করবে, ট্রাম্প সেগুলোর উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীন গণমাধ্যম ও একটি শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ রয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোটের সৎ গণনায় উৎসর্গীকৃত এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক বিরোধী দল রয়েছে। যার কোনটিই বেলারুশ বা রাশিয়ায় বিদ্যমান নেই। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কাউকে কখনও একতরফাভাবে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়নি। তবে তাকে হোয়াইট হাউস থেকে জোর করে বের করতে হবে এমন সম্ভাবনা উত্থাপন করে, ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে দেশটির ঐতিহ্যকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই আচরণগত দুর্বলতা ইতিমধ্যে যে ক্ষতি করেছে তা স্থায়ী হতে পারে। ভিয়েনার ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান সায়েন্সেসের পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের বিশেষজ্ঞ ইভান ক্রাস্টেভ জানান, ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি অস্বীকার করলে ইউরোপ এবং অন্য কোথাও সমমনা জনগোষ্ঠীর জন্য ‘একটি নতুন মডেল তৈরি হবে’। তিনি বলেন, ‘যখন ট্রাম্প ২০১৬ সালে জিতেছিলেন তখন ধারণাটি ছিল যে, তারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করতে পারে। এখন, তারা গণতন্ত্রকে আর বিশ্বাস করছে না এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন, তার সবই করবে।’

ইউক্রেনের মতো সাবেক কমিউনিস্ট দেশগুলো নিয়ে গবেষণারত হার্ভার্ডের ইতিহাসবিদ সেরিহি পলখি বলেন, ‘পশ্চিমা গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের মধ্যে ট্রাম্পের আচরণ নজিরবিহীন।’ তিনি বলেন, ‘এমনকি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসকরাও প্রায়শই নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান করে এবং হেরে গেলে তারা অবসর গ্রহণ করেন।’

ট্রাম্প যেসব গণতন্ত্র বিরোধী কৌশল অবলম্বন করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি হলো জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে, ভেনিজুয়েলার নিকোলিস মাদুরো এবং সার্বিয়ার স্লোবোডান মিলোসেভিচের মতো নেতাদের কাছ থেকে ধার করা, যারা পরাজয় স্বীকার করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং নির্বাচনে জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। এই কৌশলগুলির মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আদালতের প্রতি আস্থা হ্রাস করা, সংবাদমাধ্যমগুলোকে আক্রমণ করা এবং বিরোধীদের ঘৃণা করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রাম্পের মতোই ওই নেতারা আশঙ্কা করেছিলেন যে, পরাজয় স্বীকার করার পরে তারা ক্ষমতা ছাড়লে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করা হবে। যদিও ট্রাম্পকে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার মতো অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই, যেমনটি মিলোসেভিকের ছিলো, তবে তিনি বেশ কিছু আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ