Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমালোচনার জবাব সহিংসতা নয়, বরং পরিশীলিত ব্যাখ্যা

ফ্রান্সে মহানবীর (স.) অবমাননা নিয়ে দ্য ইকোনমিস্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ স্যামুয়েল প্যাটি হত্যার নিন্দা করায় এবং বাকস্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের নেতারা তার বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন। ইস্তাম্বুল থেকে ইসলামাবাদে ফরাসি পণ্য বয়কট এবং ম্যাখোঁ বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে, তার মাটিতে জিহাদি হামলার শিকার হওয়ার কারণ ফ্রান্স নিজেই। তারা ফ্রান্সের ল্যাসিটি বা ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যেটিকে, ক্যাথলিক গীর্জার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯০৫ সালে আইনে পরিণত করা হয়।

ল্যাসিটি ফ্রান্সে বসবাসকারীদের বিশ্বাস করা বা না করার অধিকারকে সুরক্ষা দেয় এবং ধর্মকে নাগরিক জীবন থেকে আলাদা রাখে। এ কারণে ফরাসী প্রেসিডেন্টরা কোনও পবিত্র বইয়ের শপথ নিতে পারেন না। এমনকি কোনও ফরাসী সরকারি বিদ্যালয় কোনও ধর্মীয় নাটক মঞ্চস্থ করতে পারে না। অনেকে মনে করেন যে, এ জাতীয় আইন মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। তবে, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে সুস্পষ্ট ধর্মীয় চিহ্নগুলোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ক্রুশবিদ্ধকরণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং কিছু মুসলিম অসন্তুষ্ট যে, তাদের বা তাদের মেয়েদের স্কুলে হিজাব খুলে ফেলতে হয়। ফরাসী আইন ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ না করা সত্তে¡ও নিন্দাবাদ ও যে কোনও ধর্মের অবমাননার অধিকার রক্ষা করে। অনেকে এটিকে ইসলামকে অবমাননা করার ফরাসি প্রচার হিসাবে দেখেন।

ফ্রান্সের মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা। তবে এর প্রেক্ষাপট হিসেবে দু’টি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে হবে। প্রথমত, ২০১৫ সাল থেকে ফ্রান্সে ইসলামপন্থী হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। গত বছর অন্য কোন ইইরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশের তুলনায় ফ্রান্সে বেশি সংখ্যক জিহাদি সন্দেহভাজন গ্রেফতার করা হয়েছে। ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ার করেছে যে, ইসলামী কট্টরপন্থী তরুণরা বিশেষভাবে অনলাইনে সহিংসতার উদ্দেশ্যে সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। সে কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় ফ্রান্স বেশি উদ্বিগ্ন এবং কঠোরতার সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স বাক-স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করে। দেশটি মনে করে, ধর্ম হ’ল বিভন্ন ধারণা ও বিশ্বাসের এটি সমন্বয় এবং তাই বিতর্ক এবং এমনকি বিদ্রুপের জন্য উন্মুক্ত। বিবেচক বক্তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দেয়ার চেষ্টা করবেন। তবে সরকারের উচিত নয় তাদের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করা। যদি তা করা হয়, তাহলে খুব সহজেই ক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপত্তির ভয়ে প্রত্যেকের নিজের চিন্তাশীলতা রোধ করতে হবে।

ম্যাখোঁ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং গাত্রবর্ণ, উৎস, ধর্ম যাই হোক না কেন, বঞ্চিত লোকদের জন্য সুযোগ-সুবিধার উন্নতি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশটিতে সঙ্ঘটিত সহিংসতা এবং ম্যাখোঁর সুস্পষ্ট বক্তব্যের ফলে এখন নিয়োগকর্তারা সম্ভবত কর্মক্ষেত্রে মুসলিমদের আবেদনগুলো প্রত্যাখান করবেন। ফ্রান্সের কখনই উচিত নয় নিন্দা সমর্থন করা, তবে একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী নিন্দাকারীদের সুরক্ষা দেয়া যেমন রাষ্ট্রের কর্তব্য, ঠিক সেভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর স্বার্থ দেখাও তার কর্তব্য, যতক্ষণ তারা সহিংসতাপন্থী না হয়। ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশের সচেতন ও দায়িত্বশীল মুসলিমরা মন্তব্য করেছেন যে, আপনি যতই ক্ষুদ্ধ হন, ইসলামের সমালোচনার জবাব ছুরি বা সহিংসতা নয়, বরং পরিশীলিত ব্যাখ্যা। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্সে মহানবীর (স.)
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ