পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত : বিএমএ মহাসচিব
করোনা মহামারীর মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনিস্টক সেন্টারের বিরুদ্ধে চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পাতার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ছাড়া অপারেশন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুনোমদিত ওষুধ বিক্রিসহ নানা অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তারা।
প্রয়োজন না থাকলেও অযথা আইসিইউতে রেখেও ব্যবসা চলছে। ওয়ার্ডে বেড ফাঁকা থাকলেও বলা হচ্ছে আইসিইউ ছাড়া সিট খালি নেই। এক কথায় নানা কৌশলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রমরমা বাণিজ্য করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের এমন কাÐ দেখে হতবাক হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
এদিকে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এরমধ্যে ইতোমধ্যে দুই হাসপাতালকে সিলগালাও করা হয়েছে। এছাড়াও একাধিক হাসপাতালের মালিকসহ কার্মকর্তা-কর্মচারীদের সাজা দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সর্বশেষ গত বুধবার রাত ১০টায় উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে অনভিজ্ঞ স্টাফ দিয়ে অস্ত্রোপচারের ফলে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
র্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে চিকিৎসক ছাড়াই এক মায়ের অস্ত্রোপাচারের ফলে নবজাতক মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে ভুক্তভোগী পরিবারকে নিয়মিত আইনে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এই অপরাধে প্রথমে ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুনোমদিত ওষুধ পাওয়া গেছে। এমনকি কোনো ফার্মাসিস্ট পাওয়া যায়নি। এ অপরাধে আরও সাত লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ওয়ার্ড বয় নিয়ে অস্ত্রোপচার :
গত ২৮ অক্টোবর রাতে মোহাম্মদপুরের নুরজাহান অর্থপেডিক্স হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় জাহাঙ্গীর হোসেনকে দুই বছরের কারাদÐ ও হাসপাতালটির পরিচালক বাবুর হোসেনকে এক বছরের কারাদÐ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুধু তাই নয়, হাসপাতালটি এতোটাই অপরিষ্কার যে ফ্লোরে রক্ত মাখা কাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হতো। তাই হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
র্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় থেকে প্রতিদিন রাজধানীতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। কিন্তু একটি চক্র রোগীদের স্বল্প মূল্যে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই সব হাসপাতালে নেই কোনো চিকিৎসক। ওয়ার্ড বয় ও ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে দেয়া হয় চিকিৎসা। এসব হাসপাতালগুলোর মধে মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় নুরজাহান অর্থপেডিক্স হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড ও মক্কা-মদিনা জেনারেল হাসপাতালের নাম রয়েছে।
র্যাব আরো জানায়, রাজধানীর শ্যামলী ও মোহাম্মপুরের বাবর রোডে হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসার আশ^াসে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনে দালাল সিন্ডিকেট। তারা রোগী আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া।
এইচএসসি পাস করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক :
ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন পড়ালেখা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। অথচ তিনি একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রোগীদের ভাঙা হাত-পায়ের এক্সরে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিতেন। এমনকি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদÐ ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
অনুমোদন নেই মক্কা-মদিনা হাসপাতালের :
গত ২৮ অক্টোবর রাতে মোহাম্মদপুরস্থ মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেই হাসপাতালের পরিচালক নূর নবীকে এক বছরের কারাদÐ ও তার সহযোগী আনোয়ার হোসেন কালু এবং আব্দুর রশিদকে ছয়মাস করে কারাদÐ দেয়া হয়।
র্যাব জানায়, হাসপাতালের পরিচালক নূর নবীর কোনো ধরনের চিকিৎসা দেয়ার সনদ বা অনুমোদন নেই। অথচ তিনি রোগী দেখছেন এবং তাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। হাত-পা ভাঙাসহ বিভিন্ন গুরুতর আহত যে রোগীরা আসছেন, তাদের অপারেশনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এ অপরাধে তাকে এক বছরের কারাদÐ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার সহযোগী আনোয়ার হোসেন কালু ও আব্দুর রশিদকে ছয়মাস করে কারাদÐ দেয়া হয়। একইসঙ্গে মক্কা-মদিনা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে দালালচক্র :
রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালালচক্রের আনাগোনা ফের বেড়েছে। সরকারি হাসপাতালের আউটডোর থেকে প্রকাশ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিনই রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে তাদের গ্রেফতারে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে। তাদের মধ্যে বেশিবাগ রোগীরাই এসব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন। এই দালাল চক্রটি বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসার প্রলোভন দেখায়। তবে ওই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে গত ২১ অক্টোবর রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ওই চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেফতারকৃরা সরকারি হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যেত। ওইসব প্রাইভেট হাসপাতালে নামসর্বস্ব এবং ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সংবেদনশীল ও জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে রোগীরা উপযুক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের মারাত্মকভাবে জীবন-অঙ্গহানিসহ আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে। পরে রোগীদের মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। বিল পরিশোধ না করতে পারলে তাদের রিলিজ দেয়া হয় না। জিম্মি করে রাখা হয়। আর এসব অপরাধে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও জড়িত বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের অপরাধের সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহŸান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধ যারা করে তারা অপরাধী। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দেয়া উচিৎ। এছাড়া যানা ভুয়া ডাক্তার সেজে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন; তারা অপরাধ করছেন। তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনুরোধ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।