বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনাকালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের দূর্ভোগ আর অস্বস্তিকে ক্রমশ বৃদ্ধি করে চললেও তা থেকে পরিত্রানের কোন উদ্যোগ এখন আর লক্ষনীয় নয়। চাল, পেয়াঁজ, আদা, গোল আলু, ভোজ্যতেল এবং ডাল ছাড়াও দু দফার অতিবর্ষনে শাক-সবজির দামও এখন আকাশচুম্বি। এমনকি পেয়াঁজ সংকট ও মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি’র সিমিত উদ্যোগও ধারাবাহিকতা হারাচ্ছে। বরিশালে টিসিবি’র গুদামে পেয়াঁজ সংকটে ডিলারদের সরবারহ হ্রাস করা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে পেয়াঁজ না পৌছলে বৃহস্পতিবার থেকে সরবারহ বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারী তরফে তেমন কোন উদ্যোগ এখন আর দৃশ্যমান নয়। প্রায় দু মাস আগে পেয়াঁজের দাম ৩০টাকা থেকে কয়েক দফা লাফিয়ে ৮৫-৯০টাকায় উঠলেও তা নিয়ে প্রাথমদিকের সব তর্জন গর্জন আরো আগেই স্তিমিত হয়ে গেছে। টিসিবি মাসখানেক ধরে মাথাপিছু ১ কোজি করে পেয়াঁজ বিক্রী শুরু করলেও তা বাজারে কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। তবে গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিষ্ঠানটির বরিশাল গুদামে পেয়াঁজের মজুত ফুরিয়ে আসছে। ইতোপূর্বে যেখানে প্রতি ডিলারকে ৮শ কেজি থেকে ১ টন পর্যন্ত পেয়াঁজ দেয়া হত, মঙ্গলবারে তা সাড়ে ৩শ কেজিতে হ্রাস করা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে নতুন সরবারহ না পৌছলে বৃহস্পতিবার থেকে খোলা বাজারে হয়ত কোন পেয়াঁজ বিক্রী করতে পারবে না টিসিবি।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে মঙ্গলবারও প্রতিকেজি দেশী পেয়াঁজ বিক্রী হয়েছে ৮৫Ñ৯০ টাকয়। সদ্য আমদানীকৃত চীনা ও তুরস্কের কিছু পেয়াজ বাজারে আসলেও তা বিক্রী হচ্ছে ৭৫Ñ৮০ টাকায়। চীনা আমদানীকৃত আঁদা এখনো ২৩০ টাকা কেজি। ভারতীয় নি¤œমানের আদা বিক্রী হচ্ছে ১শ টাকায়। গোল আলুর কেজি ৫০ টাকা থেকে গত সপ্তাহখানেক ধরে ৪৫Ñ৪৮ টাকা বিক্রী হচ্ছে। তবে প্রায়সই এ অঞ্চলের বাজার থেকে গোল আলু উধাও হয়ে যাচ্ছে। সয়াবিন ও সুপার সয়াবিন সহ সব ভোজ্য তেলের দামই মাসখানেক ধরে উর্ধমুখি। ইতোমধ্যে ৯০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১১০ টাকায় উঠেছে। এর সঠিক কারন স্থানীয় পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন। তাদের মতে, চট্টগ্রাম ও ঢকার মিল মালিক ও আমদানীকারক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর ফলেই খোলা বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে।
বাজারে মুগ, মুসুর ও খেশারী ডালের দামও বেড়েছে। মুগ ও মুসুর ডাল এখন ১৩০ টাকা কেজি। গত দু মাসে এসব ডালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৫Ñ২০ টাকা পর্যন্ত। অন্যসব ডালের মূল্যবৃদ্ধির রেশ ধরে বেড়েছে খেশারী ডালের দামও। দেশে খেশারী ডালের ৭০ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত হয়ে থাকে। অনুরূপভএব মুগ ডালেরও ৬০ ভাগের উৎপাদন হয় দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু এবার দক্ষিণাঞ্চলে দু দফার অকাল অতিবর্ষনে খেশারী ডালের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে আসন্ন শীতে খেশারীর উৎপাদনে মারাত্মক সংকট তৈরীর আশংকার কথা জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। মুগ নিয়ে এখনো আশা থাকলেও তা নির্ভর করবে আগামী দু মাসের বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের উচ্চতার ওপর।
এদিকে গত আগষ্ট ও অক্টোবরে দু দফার অসময়ের প্রবল বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের শাক-সবজির পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে এখন ৬০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি নেই। পাশাপাশি এবার গোল আলুর অগ্নিমূল্য বাজারে অন্যসব সবজির মূল্য বৃদ্ধিতে যথেষ্ঠ সহায়ক ভ’মিকা পালন করছে। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১১ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষে কৃষকরা মাঠে নামলেও গত ২০-২২ অক্টোবরের প্রবল বর্ষনে আগাম আবাদকরা শাক-সবজির প্রায় পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে গত কয়েক মাস ধরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০Ñ১২ টাকা। এমনকি মাস দেড়েক আগেও যে দাম বেড়েছে, তাও আর নামার কোন লক্ষন নেই। এখন এ অঞ্চলে চালের সর্বনি¤œ দাম কেজি প্রতি ৩৮-৪২ টাকা। আর মধ্যম মানের মিনিকেট চাল বিক্রী হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা কেজিতে। আমনের ভরা মৌসুম আসন্ন হলেও চালের দাম কমা নিয়ে আশান্বিত নয় দক্ষিণাঞ্চলবাসি। কারন বিদায়ী বোরো মৌসুম ও আউশের ভরা মৌসুমেই এবার চালের দাম বেড়েছে। অথচ কৃষি সম্প্রসারন অদিদপ্তর-ডিএই’র মতে, গত রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ২ কোটি টন বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় আউশ ও বোরো চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল প্রায় ৯ লাখ টন। চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলে আরো ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের আশা করছে ডিএই। এছাড়া গত মৌসুমে আরো প্রায় ৩০ হাজর টন গম উৎপাদন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।