Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাস চালকসহ ৩ জনের মৃত্যুদন্ড

নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী পায়েল হত্যা মামলার রায় দিন দিন হত্যায় পরিণত হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা : আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- হানিফ পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেন। গতকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আসামিদের হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর এবং মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সীগঞ্জের ভাটেরচর সেতুর নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হানিফ পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন দুই ভাই। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই পায়েলের মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ২৫ জুলাই আটক করা সুপারভাইজার জনি (৩৮) ও চালক জামাল হোসেন (৩৫) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গজারিয়া থানা পুলিশ তিনজনকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এ মামলায় ২৪ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১৪ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। অপরদিকে আসামি পক্ষে চারজন সাফাই সাক্ষী দেন। মামলার বিচারকাজ মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুরু হয়। পরে পরিবারের আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই বিচারাধীন ছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারকাজ শুরু হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যাপর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা বলা বোধ হয় ভুল নয়। অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে।

সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমে নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, প্রতিটি সড়ক যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা তো ঘটছেই, মারা যাচ্ছে সব বয়সী মানুষ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীও রেহাই পাচ্ছে না বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে। সড়ক যোগাযোগমাধ্যম এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দিনে দিনে সড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোনোভাবেই এই মিছিল থামছে না।
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আদালত বলেছেন, তাহলে আর কবে আমরা সজাগ হব। সড়কে মৃত্যু যদি সচেতন না করে, তাহলে আর কবে সচেতন করবে? নিহত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল মেধাবী ছাত্র ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য যখন নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মুহূর্তে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীর নির্মমতার শিকার হয়ে তাকে অকালেই প্রাণ দিতে হলো। তার মৃত্যুতে তার পরিবার হতাশায় নিমজ্জিত।

ডোপ টেস্ট করাতে হবে : সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রথম পর্যবেক্ষণ হলো গাড়ি চালাতে দেয়ার আগে চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী মাদক গ্রহণ করেছেন কি না, সে জন্য তাদের প্রত্যেককেই ডোপ টেস্ট করাতে হবে।

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ হলো গাড়ির চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারীরা প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। গাড়ির চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। চালকসহ অন্যদের গাড়ি চালানোর বিষয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে আচরণ সংক্রান্ত কাউন্সেলিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তৃতীয় পর্যবেক্ষণটি হলো মহাসড়কের প্রতি তিন কিলোমিটার পরপর গাড়ির চালক চালকের সহকারী, সুপারভাইজার এবং যাত্রী সাধারণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আধুনিক বাথরুম স্থাপন করতে হবে। এ জন্য বাসমালিকদের সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার নির্ধারিত হারে মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে। আদালতের দেয়া চতুর্থ পর্যবেক্ষণ হলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) মাধ্যমে মহাসড়কে যান চলাচলের ওপর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

পায়েল হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে আদালত বলেছেন, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা পায়েলকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ভাটেরচর সেতু থেকে ফুলদী নদীতে ফেলে দেয়। গোপন তদন্তে প্রকাশ পায় যে তখনো পায়েল বেঁচে ছিলেন। ঘটনার বিষয়ে কোনো যাত্রী জানার আগেই আসামিরা বাসটি চালিয়ে ঢাকার দিকে চলে যান। ময়নাতদন্তে পরিষ্কার হয় যে নিহত পায়েল মারা গেছেন পানিতে ডুবে। লাশ গুম করার জন্যই আসামিরা পায়েলকে নদীতে ফেলে দেন।



 

Show all comments
  • M U Ahmed ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
    রায় কার্যকর করা হউক।।
    Total Reply(0) Reply
  • Naimur Rahman ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    অাগামিকালই হয়তো নিউজ দেখতে পাবো, এই রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট । অপেক্ষা করুন দু-এক দিন।
    Total Reply(1) Reply
    • ২ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২৫ এএম says : 0
  • Atm Abdur Rahim ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    এরূপ শাস্তি হতে থাকলে পশুত্ব ও অমানবিকতা কমে আসবে নিশ্চিত ভাবে আশা করা যায়!!
    Total Reply(0) Reply
  • Khaled Saifullah ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    সঠিক রায়। দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন চাই। পায়েলের মা বাবা একটু হলেও শান্তি পাবে। পরিপূর্ণ শান্তি পাবে সেদিন যেদিন এই রায় কার্যকর হবে। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য দুর করতে হলে এই রায় দ্রুত কার্যকর করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Mushahid Ahmod ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    রায়ের বাস্তবায়ন অতিদ্রুত কার্যকর করা হোক। আর এমন ঘৃন্য অপরাধ যেন আর কখনো সংঘটিত না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Shanto Akash ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    উত্তম শাস্তি,, দেশবাসী দেখুন,, কিভাবে বিচার হয়,,আলহামদুলিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Saddam Hossain ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    মৃত্যু দন্ড কার্যকর হউক। তারপর বলবো বিচার হইছে। তানা হলে মনে করবো শুধু তামাশা।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabba Rehman ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    আমি মনে করি এ রায়ে কোন শ্রমিক কে খাটো করে দেখা হয়নি। তবে বর্বরতার সঠিক বিচার হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Foysal Hasan ২ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    সঠিক রায় দ্রুত কার্যকর করা হক।আমি নিজেও দেখেছি সামান্য কথা কাটাকাটিতে চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে হেল্পার কন্টাকদার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যুদন্ড

১৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ