মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মধ্য আমেরিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হন্ডুরাস। যেখানে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময়ে আকাশ থেকে নামে মাছবৃষ্টি! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। হন্ডুরাসের ইয়োরো এলাকায় বছরে দুবার আকাশ থেকে ঝরে পড়ে শত শত মাছ। মায়া সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিখ্যাত এই দেশটি কয়েক দশক ধরে মানুষের বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১০০ বছর ধরে পানির বদলে মাছের বৃষ্টি, এ-ও কি সম্ভব?
আরও অদ্ভুত বিষয় হলো এই ইয়োরো এলাকা সমুদ্র থেকে অনেক দূরে। তবে এ ঘটনা এই এলাকায় মোটেই নতুন নয়। ১৮০০ সাল থেকে প্রত্যেক বছর মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এমনটা হয়ে থাকে। এই অদ্ভুত ঘটনা লুবিয়া দে পেসেস নামে পরিচিত। প্রত্যেক বছর মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এখানে তীব্রগতিতে ঝড় ও বৃষ্টি হয়। ঝড়ের তীব্র গতিবেগের জন্যই শত শত মাছ রাস্তায় আছড়ে পড়ে। নানা রকম মাছে ভরে যায় রাস্তা।
তবে এর পেছনে যথাযথ বৈজ্ঞানিক কারণ এখনো সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। পৃথিবীর আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের বৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও মাছের সঙ্গে ব্যাঙও দেখা যায়। এমনকি কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে কিছু জায়গায় সাপ, ইঁদুর, মাকড়সা, জেলিফিশসহ নানান রকমের জীব ঝড়ো হাওয়ায় রাস্তায় আছড়ে পড়ে।
১৮০০ শতকের মাঝামাঝি কোন এক বছরের মে কিংবা জুন মাসে ইউরো শহরে প্রচণ্ড ঝড় হয়, ভারি বৃষ্টিপাত আর বজ্রের গর্জনে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। ঝড় থেমে যাবার পর শহরের লোকজন রাস্তায় বের হয়ে ভারি অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখতে পায়। জলজ্যান্ত মাছ রাস্তায় লাফালাফি করছে, তাও এক-দুইটি নয়, শত শত!
সেই থেকে শুরু, এরপর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার করে ইউরো শহরে হতে থাকে আজব এই মাছের বৃষ্টি। প্রথমদিকে সবাই ভাবত, বৃষ্টির তোড়ে আশেপাশের জলাশয় থেকে বুঝি মাছেরা ভেসে রাস্তায় চলে আসে। কিন্তু একসময় লোকে চাক্ষুষ দেখতে পায়, আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতন শয়ে শয়ে মাছ পড়ছে। হন্ডুরাসের এই ইয়োরো এলাকাটি অত্যন্ত গরিব অধ্যুষিত, যেখানকার লোকেদের একমাত্র খাবার ভূট্টা আর মটরদানা। সেখানে আকাশ থেকে মাছের বৃষ্টি ঈশ্বরের আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। রাস্তায় পড়ে থাকা এই মাছগুলো শহরবাসী মহানন্দে রান্না করে খায় এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে পরের বৃষ্টির জন্য।
কেবল হন্ডুরাসই নয়; মাছ বৃষ্টির ঘটনার আলামত মিলেছে আরও কয়েকটি দেশে। গেল বছর মাছ বৃষ্টির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে শ্রীলঙ্কা। আর সম্প্রতি থাইল্যান্ডেই মাছ বৃষ্টি হওয়ার খবর জানা গেছে। তবে তা আদৌ মাছের বৃষ্টি ছিল নাকি মাছবাহী লরি খুলে রাস্তায় মাছ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল তা নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে এই দুটি স্থানের কোনটিতেই হন্ডুরাসের মতো নিয়মিত এমন ঘটনা ঘটে না।
কিন্তু মাছ বৃষ্টির মতো এত অদ্ভুত একটা ব্যাপারের পেছনে আসল কারণটা কী? প্রতি বছর এমন নিয়ম করেই বা ঘটে কেন? প্রথমদিকে হন্ডুরাসের খাদ্য-বৃষ্টি ছিল সবার কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা। শহরবাসীদের কেউই ঠিক ব্যাখ্যা বের করতে পারেননি এই ঘটনার। কয়েক বছর পর সবাই ধারণা করতে থাকে, এই মাছগুলো সব পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের। ভারি বর্ষণের কারণে এরা জলাশয় ছেড়ে উপরে উঠে আসে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। কেউ কেউ মাছগুলোকে দেখে শনাক্ত করে যে, এগুলো তাদের এলাকার মাছ নয়। তারা এ ধরনের মাছের খোঁজ কখনোই কাছে-পিঠে কোনো জলাশয়ে পায়নি। মানুষের মনের মধ্যে আবারও অলৌকিকতার ব্যাখ্যা স্থান পেতে থাকে।
১৯৭০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউরোর এই মাছ-বর্ষণের ঘটনা একেবারে চাক্ষুষ দেখে। এসময় আবারো তারা একই ব্যাখ্যা নিয়ে আসে যে, মাছগুলো আর যেখানকারই হোক আকাশ থেকে পড়ছে না। মাটিতে পড়ে থাকা মাছগুলোর ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার লক্ষ্য করেন। মাছগুলো দৃষ্টিশক্তিহীন! তার মানে, এরা অবশ্যই সমুদ্রের খুব গভীরের মাছ। এত গভীরের যেখানে আলো পৌঁছায় না মোটেই।
এরপর এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়াটা বেশ সহজ হয়ে যায়। অনেক ব্যাখ্যার মাঝে এখন পর্যন্ত যে ব্যাখ্যাটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য, সেটি হল পানির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর প্রভাব।
পানির উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাওয়ার সময় মাছসহ পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে পানি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ে মাছ, ব্যাঙ কিংবা অন্যান্য জলজ প্রাণী। সে অনুযায়ী হন্ডুরাসের ইউরো এলাকার মাছগুলো এসেছে সাগর থেকে। পাশে আছে আটলান্টিক মহাসাগর। যা ওই এলাকা থেকে ১২৫ মাইল দূরে।
ইউরোতে অবশ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার চেয়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যাটাই লোকে বেশি মানে। তাদের বিশ্বাস, ১৮৬০ এর দশকে এক সাধু ইউরোতে আসেন, নাম জোস ম্যানুয়েল সুবিরিয়ানা। এখানকার লোকেদের দুঃখ-দুর্দশা আর দারিদ্রতা দেখে তার মন গলে যায়। দরিদ্রদের ক্ষুধা মেটাতে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন। তিন দিন তিন রাত প্রার্থনার পর অবশেষে ঈশ্বর মুখ তুলে চাইলেন যেন। আকাশ থেকে দৈবাৎ শুরু হল মাছের অঝোর বৃষ্টি।
এই ঘটনাকে স্মরণ করে হন্ডুরাসে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় ইউরোবাসীদের একটি বিশেষ উৎসব- লুভিয়া দি পিসেস। এ দিনে বৃষ্টিপাতের সাথে আসা মাছগুলোকে শহরবাসী রান্না করে খায়, সবাই মিলে আনন্দ করে। শহরের রাস্তায় মিছিল ও প্যারেড হয় সাধু ম্যানুয়েলের ছবি ও ব্যানার নিয়ে।
শুধু হন্ডুরাস নয়, এই ধরনের মাছ বা প্রাণীদের বৃষ্টির নজির রয়েছে আরো অনেক দেশেই। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরের ২৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় মাছবৃষ্টি হয়। ১৩০ কিলোমিটারের চেয়েও লম্বা এলাকা। ১৯৯৫ সালের গিনেস বুক অব অডিটিসে এর উল্লেখ আছে। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইপসউচ ও ১৯৬৬ সালে নর্থ সিডনিতেও মাছবৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে হয়েছিল প্রায় ৮০০ সার্ডিন মাছের বৃষ্টি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর মতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝণগ্রস্ত দেশের একটি। ৮২ লক্ষ মানুষের মাঝে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষই বেকার, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭%। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর মতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝণগ্রস্ত দেশের একটি। কফি, কলা আর বিভিন্ন রকমের ফল উৎপাদনে বেশ সুনাম রয়েছে দেশটির। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কলা কোম্পানি আস্তানা ছিল হন্ডুরাসে, তাই হন্ডুরাসকে এক সময় বলা হত বেনানাটিক রিপাবলিক! সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।