গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
স্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া চালক আর অবৈধ যানবাহনকে কাবু করতে এবার স্কুটি নিয়ে ছুটছেন নারী সার্জেন্টরা। কিছুদিন আগে সড়কে নামলেও এতোদিন তারা পুরুষ সার্জেন্টদের পাশে থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। পুরুষ সহকর্মীদের মোটরসাইকেলের বিপরীতে তারা চড়ছেন স্কুটিতে। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত স্কুটি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া দেশের প্রথম নারী সার্জেন্টদের হাতে স্কুটির চাবি তুলে দেন। এরপরই স্কুটি নিয়ে রাজপথে দায়িত্ব পালনে নেমে যান তারা।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হোসেন, মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেনসহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ২০ লেডি সার্জেন্ট উপস্থিত ছিলেন। একজন অসুস্থ থাকায় এবং অন্যজনের মাস্টার্স পরীক্ষা থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।
এসময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ট্রাফিক পুলিশে আরো নারী সদস্য নেয়া হবে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালনে আপনারা সহযোগিতা করুন। কেউ উল্টো পথে গাড়ি চালাবেন না। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করবেন না।
তিনি আরো বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব এমনিতেই কঠিন। এ বছরও তারা ৪৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি পালন করেছেন। সড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে, কর্মঘণ্টা বাঁচাতে তারা ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ট্রাফিক বিভাগে নারী সার্জেন্ট নিয়োগ এক যুগান্তকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই তাদের অবহেলিত রেখে, অকর্মণ্য রেখে কোনো উন্নতি হবে না। তাই পুলিশেও বেশ কয়েক বছর আগে থেকে নারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশে নারী সার্জেন্ট নিয়োগ এবারই প্রথম।
তিনি আরো বলেন, জেন্ডার বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। পুলিশে জেন্ডার বৈষম্য বরদাশত করা হবে না। কোনোভাবেই নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই। যারা আজ সার্জেন্ট হয়েছেন, তারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়েই সার্জেন্ট হয়েছেন। কারো দয়ায় নয়।
অনুষ্ঠানে ২২ জন নারী সার্জেন্টের হাতে স্কুটির চাবি তুলে দেন ডিএমপি প্রধান। তারা ১৪ আগস্ট থেকেই রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় স্কুটি নিয়েই দায়িত্ব পালন করবেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া নারী সার্জেন্টদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে রাজপথকে যানজটমুক্ত রাখুন। আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।
তিনি রাজধানীবাসীকে বলেন, আপনারা মোটরসাইকেলে তিনজন চড়বেন না। হেলমেট পরবেন। গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখবেন। ইতোমধ্যে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধসহ সড়কে অনেক শৃঙ্খলা এসেছে। আপনাদের সহযোগিতা পেলেই কেবল যানজটমুক্ত ঢাকা গড়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে পুলিশ বাহিনীতে নারী সার্জেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে ২৮ জনকে বেছে নেয়া হয়েছিল। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ২২ জন নিয়োগ পান ঢাকা মহানগর পুলিশে। আর হাইওয়ে পুলিশ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং খুলনা মেট্রোতে দুই জন করে নারী সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। তারা ২০১৫ সালের ২২ মে চাকরিতে যোগদান করেন। ঢাকার ২২ জনের পদায়ন হয় গত জানুয়ারিতে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনস-এর মোটরসাইকেল মেকানিক্স সেকশন ইনচার্জ কনস্টেবল নাজমুল হুদা খান জানান, নারী সার্জেন্টরা ১৫ দিন স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সড়কে চালাতে পারদর্শী হওয়ার পর তাদের হাতে চাবি তুলে দেয়া হলো। গত ৩০ জুলাই থেকে পুলিশ লাইন্সের মাঠে লেডি সার্জেন্টদের মোটরসাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু হলেও তারা এখন সড়ক চালাতে পারদর্শী হয়ে ওঠেছেন।
স্কুটি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম নারী সার্জেন্টদের একজন নাজিয়া আফরিন সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, পড়াশুনা করেছি, কাজ করবো না তা কি হয়! আর চাকরিই যদি করবো তবে চ্যালেঞ্জ নিয়েই কিছুই করবো, এটাই ছিল ইচ্ছা। সে ভাবনা থেকেই সার্জেন্ট হয়েছি।
চাকরি, স্কুটি চালনা, ট্রাফিক নিয়ে উপলব্ধির কথা জানতে চাইতেই শুরু করেন নাজিয়া আফরিন। তিনি বলেন, প্রথমেই বলব লেডি নয়, নিজেকে সার্জেন্ট ভাবি। কেননা, নারী হিসেবে নয়, সার্জেন্ট হিসেবেই কাজ করতে এসেছি। সব নতুন অভিজ্ঞতাই রোমাঞ্চকর। কিছুটা ভয়েরও। আর এ পেশাটাতো অনেক চ্যালেঞ্জের। ঝড়, বৃষ্টি, দাবদাহ, বজ্রপাতকে উপেক্ষা করেই কাজ করতে হয়। তাই আত্মবিশ্বাসী হলেও প্রথমে ভয়টা ছিল। তবে এখন নেই।
এছাড়া মোটরসাইকেল চালনাটা শেখাও ভয়ের ছিল। এখন তা নেই। জয়েন করার পর অনেক কষ্ট হতো ডিউটিতে। এখন স্কুটি পাওয়ায় তা কমে যাবে। সেবার মানও বাড়বে।
তিনি বলেন, এখন কেউ ট্রাফিক আইন অমান্য করেই পার পাবেন না। দ্রæত ধরে ফেলা যাবে। বাধ্য করা যাবে আইন মানতে।
পুরুষের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কাজ করতে স্কুটি অনেক সহায়তা দেবে। তাই, ভালো সার্ভিস দিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা নাজিয়ার। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বহ্মপুত্র তীরবর্তী খাগডহর এলাকায়। তিনি ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বাংলায় অনার্সসহ মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
প্রায় একই মনোভাব দেখা গেল পঞ্চগড়ের মেয়ে জিন্নাত রেহানার মাঝেও। তিনি বলেন, মেয়েরা কোনো দিক থেকে আর পিছিয়ে নেই। আমরা পুরুষের পাশাপাশি থেকেই কাজ করতে সক্ষম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।