নাগোর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইজানের সাথে হওয়া সঙ্ঘাতে আর্মেনিয়ার ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’ ও সেনাবাহিনীর অনেকে হতাহত হয়েছে বলে অবশেষে স্বীকার করেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান। এর পাশপাশি বুধবার তিনি দাবি করেন যে, আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী এখনও ঐ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে গত চার দশক ধরে এই দুই দেশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা। বর্তমানে ঐ অঞ্চলকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে যে সহিংসতা চলছে তার শুরু ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে। গত কয়েক দশকের মধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখকে নিয়ে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এটি। দুই পক্ষেরই শত শত মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করলেও তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চলমান এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তুরস্ক ও রাশিয়ার নেতারা দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া এক ভাষণে পাশিনিয়ান বলেন আর্মেনিয়ার ‘বহু হতাহত’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের সকল ভুক্তভোগী, নিহত, তাদের পরিবার, অভিভাবক, বিশেষ করে নিহতদের মায়েদের উদ্দেশ্যে নতজানু হয়ে সম্মান জানাই। তাদের এই ক্ষতিকে আমি আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করছি। আমাদের সবার জানা প্রয়োজন যে আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতি পার করছি।’ ‘জনশক্তি ও উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও’ আর্মেনিয়ার সেনারা এখনও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং প্রতিপক্ষের ‘জনশক্তি ও উপকরণের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করেছে’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জয়ী হতেই হবে, আমাদের বেঁচে থাকতেই হবে। আমাদের নিজেদের ইতিহাস তৈরি করতে হবে। আর আমরা এরই মধ্যে ইতিহাস তৈরি করছি। তৈরি করছি আমাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের গল্প, আমাদের মহাকাব্য।’

এদিকে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ অভিযোগ তুলেছেন, আর্মেনিয়া তাদের গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইনে আক্রমণ করেছে। তুরস্কের প্রচার মাধ্যম হেবারতুর্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়া আমাদের পাইপলাইন আক্রমণ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা যদি সেখানকার পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমি বলতে পারি যে এর পরিণতি গুরুতর হবে।’

এদিকে এই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান বুধবার নিজেদের মধ্যে ফোনে আলোচনা করেছেন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে অতি দ্রুত যৌথ উদ্যোগ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নাগোর্নো-কারাবাখ দ্বন্দ্বের সমাধান করার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন তারা।’ প্রসঙ্গত, তুরস্ক প্রকাশ্যেই আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে। আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি থাকলেও তারা এখনো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।