নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রৌপ্য জিতে সাঁতারকে বিদায় ফেল্পসের
শামীম চৌধুরী
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে সুইমিং পুলে কি ঝড়ই না তুলেছিলেন মাইকেল ফেল্পস। ৮ টি ইভেন্টের সব ক’টিতে স্বর্ণ, যার মধ্যে ৭টিই আবার বিশ্বরেকর্ড! এমন বিস্ময় জন্ম দেয়ার টনিকটা পেয়েছিলেন এই মার্কিন সাঁতারু বেইজিং অলিম্পিককে সামনে রেখে সিঙ্গাপুরে ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে। সেই ট্রেনিং ক্যাম্পে সিঙ্গাপুরের ১৩ বছরের এক কিশোর সাঁতারু মাইকেল ফেল্পসকে দেখে তাকে আইডল মেনে ভবিষ্যতে এই কিংবদন্তীর মতো হতে চেয়েছেন, ফেল্পসের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফ্রেমে লাগিয়ে টানিয়েছেন বাসায়। সেই ক্ষুদে সাঁতারুকে চিনতে হলো ফেল্পসকে নিজের অলিম্পিক ক্যারিয়ারে শেষ ইভেন্টে এসে! ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড, ৮ বছর পর সেই ইভেন্টেই সিঙ্গাপুরের উদীয়মান সাঁতারু জোসেফ স্কুলিংয়ের বিশ্বরেকর্ড দেখতে হলো ফেল্পসকে, তাও আবার পাশের লেন থেকে ঝাঁপ দেয়া সিঙ্গাপুর যুবকের কাছে হারতে হলো ফেল্পসকে। যে ছেলেটি কি না অলিম্পিক ইতিহাসে সিঙ্গাপুরের প্রথম সাঁতারু হিসেবে জিতেছেন স্বর্ণ।
অলিম্পিকে অমরত্ব পেয়েছেন আগেই, এথেন্স থেকে লন্ডনÑ এই তিনটি আসরে ১৮ স্বর্ণপদক জিতে অলিম্পিকের সব রেকর্ড নিজের করে নেয়া মাইকেল ফেল্পস অবসর ভেঙ্গে রিও অলিম্পিকে এসে ৩১এ ফিরে পেয়েছেন তারুণ্য, জিতেছেন আরো ৪টি স্বর্ণ। ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্ট দিয়ে রিও তে শুরু, জিতেছেন দলীয় ইভেন্ট ৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুয়াল মিডলে এবং ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদকও। তবে ৫ম ইভেন্ট এবং শেষ ইভেন্টে এসে থামলেন ফেল্পস, রৌপ্যতেই শেষ হলো তার অলিম্পিক ক্যারিয়ার। ২৭টি পদকের ২২টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য, ২টি ব্রোঞ্জ অলিম্পিকে এমন গর্বিত ইতিহাসেও পরও যে শেষ ইভেন্টটিতে অতৃপ্তি সঙ্গী হলো তারÑ ‘আমি খুশি হতে পারিনি। অবশ্যই কেউ হারতে পছন্দ করে না।’ তবে যে ছেলেটির কাছে হেরেছেন, তার জন্য গর্ব হচ্ছে ফেল্পসেরÑ ‘জোই’র (জোসেফ) জন্য আমি গর্বিত। আমি চেয়েছি সুইমিং খেলাটিতে পরিবর্তন আনতে। তার মধ্যে অনেক কিছু প্রতিফলনের মেজাজ দেখতে পেয়েছি। তাদের মতো যারা আছে, তাদেরকে বিশ্বাস করাতে পেরেছি, আকাশের সীমা আছে, ভয় পেয়ো না।’
২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে চাঁদ ডি ক্লজের কাছে হেরেছিলেন স্বর্ণ। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিক থেকে চাঁদ ডি ক্লজ এবং লাজলোর সঙ্গে এই ইভেন্টে লড়তে লড়তে জিতেছেন, ২টিতে, হেরেছেন ১টিতে। জীবনের শেষ অলিম্পিকে এসে সেই ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ড্র’ করলেন ফেল্পস। সিঙ্গাপুরের জোসেস স্কুলিংয়ের বিশ্বরেকর্ড টাইমিং যেখানে ৫০.৩৯ সেকেন্ড, সেখানে টাচ প্যাড স্পর্শ করেছেন ফেল্পস, চাঁদ ডি ক্লজ এবং লেজলো চেজ একই সঙ্গে, ৫১.১৪ সেকেন্ডে! এক সঙ্গে দু’জনের যৌথভাবে স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড এবারই প্রথম দেখেছে অলিম্পিক এবং তা নারীদের সাঁতারে। ফেল্পসের শেষ ইভেন্টে সেখানে তিনজনের যৌথভাবে রৌপ্য জয়ের নুতন গল্পটাও দেখল বিশ্ব। লন্ডন অলিম্পিকে ৪ স্বর্ণ ২ রৌপ্য জিতে নিজের উপর অভিমানে নিয়েছিলেন অবসর। অবসর ভেঙ্গে ফিরেছেন ২ বছর পর। ফিরে সাঁতারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে করেছেন হতাশ, গতিসীমা ছাড়িয়ে গাড়ী চলানোর অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র আদালত থেকে ৬ মাস সাঁতারের উপর নিষেধাজ্ঞাদেশও পেতে হয়েছে। ৩১ এ এসে সেই ফেল্পসকে ভরা তারুণ্যেই দেখতে পেলো বিশ্ব। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিও অলিম্পিকে ফ্রি স্টাইলের কোন ইভেন্টে আর দিবেন না ঝাঁপ। এমনকি দলগত ইভেন্টেও নয়। রিও অলিম্পিককে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সাঁতারুদের যে ট্রায়াল বাধ্যতামূলক, সেই ট্রায়াল পর্যন্ত দেননি। এমনকি রিও অলিম্পিকের প্রিলিমিনারী রাউন্ডেও পর্যন্ত ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে ছিলেন না ফেল্পস। অথচ, সেই ফেল্পসই রিও অলিম্পিক ২টি স্বর্ণ জিতেছেন ৪*২০০ ও ৪*১০০ মিটার দলগত ফ্রিস্টাইল ইভেন্ট থেকে। ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ফিরে পেয়েছেন মুকুট। আর এথেন্স থেকে ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুয়াল মিডলে ইভেন্টটি একান্ত নিজের করে নিতে জীবনের শেষ অলিম্পিকেও ধরে রেখেছেন মুকুট।
অলিম্পিকে এককভাবে সর্বাধিক ৯টি করে স্বর্ন জয়ের রেকর্ড ছিল সাবেক সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারসিয়া লাতিনিয়া, ফিনল্যান্ডের দৌড়বিদ পাভো নুরমি, যুক্তরাস্ট্রের সাঁতারু মার্ক স্পিৎজ ও স্প্রিন্টার কার্ল লুইসের। বেইজিংয়ে সেই রেকর্ড ছাপিয়ে লন্ডনে এসে সব রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। রিওতে এসে নিজেকে নিজের ছাড়িয়ে যাওয়া লড়াইয়ে জিতে অলিম্পিক থেকে অর্জিত হলো তার ২৭টি পদক, সর্বাধিক ২২টি স্বর্ণপদকে এভারেস্ট উচ্চতায় উঠে আসা ফেল্পসের গল্প থেমে গেল এখানেই।
৭ বছর বয়সে সাঁতারকে ভবিষ্যতের জন্য নিয়েছিলেন বেছে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে সিডনী অলিম্পিকে ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুয়াল মিডলে ইভেন্টে পুলে ঝাঁপ দিয়ে সে সময়ে অলিম্পিক ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারুর রেকর্ড গড়া ফেল্পস বিস্ময়গাঁথা ছিল টানা ৪টি অলিম্পিকে। আর নয় সাঁতার, আর নয় অলিম্পিক, এই ঘোষণাই দিয়েছেন সাঁতার কিংবদন্তীÑ ‘আমি আর ৪ বছর থাকতে চাই না। যেভাবে শেষ করতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি। লন্ডনে শপথ করে বলেছিলাম আর ফিরে আসব না। তারপরও ফিরে শেষ করেছি। আর নয়, আগামীকাল (শুক্রবার) এটাই এখন স্বাক্ষর করে দিতে চাই।’ তবে ফেল্পসের টীমমেট লোকচে ফেল্পসের এমন অবসর ঘোষণা বিশ্বাস করছেন নাÑ ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ফেল্পসকে দেখতে পাব।’
ফেল্পসের ২২ অলিম্পিক স্বর্ণ
২০০৪ অ্যাথেন্স
১০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার মিডলে
৪০০ মিটার মিডলে
৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৪*১০০ মিটার মিডলে
২০০৮ বেইজিং
২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
১০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার মিডলে
৪০০ মিটার মিডলে
৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৪*১০০ মিটার মিডলে
২০১২ লন্ডন
১০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার মিডলে
৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৪*১০০ মিটার মিডলে
২০১৬ রিও, ব্রাজিল
২০০ মিটার বাটারফ্লাই
২০০ মিটার মিডলে
৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।