Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলে গেলেন ক্রিকেটের ‘হারকিউলিস’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রথম টেস্ট জিততে ২৬ বছর সময় লেগেছিল নিউজিল্যান্ডের। ১৯৫৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সেই প্রথম টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জন রিড। ৯২ বছর বয়সী রিড পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। গতকাল খবরটি নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট।

বেঁচে থাকতে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বয়স্ক টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন রিড। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব মিলিয়ে ছিলেন পঞ্চম বয়স্ক। মৃত্যুর পর এই খেরোখাতা থেকে নাম উঠে গেল ৯২ বছর ১৩৩ দিন বয়সী রিডের। খেলা ছাড়া পর এই প্রজন্মের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ম্যাচ রেফারি হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। কিউইদের প্রথম টেস্ট জেতানোর তিন বছর পর হয়েছিলেন উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার। তার মৃত্যুর পর নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ‘জন রিডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংসের সমাপ্তি ঘটল।’
কী পারতেন না রিড! নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ’ লিখেছে, ‘মিডল অর্ডারে মারকুটে ব্যাটসম্যান। বুল ডগের মতো পেসার, পরে অফ স্পিনও করেছেন। আর মাঝে-মধ্যে উইকেটকিপিং।’ ইংলিশ কিংবদন্তি কলিন কাউড্রের চোখে রিড ছিলেন ‘ক্রিকেটের হারকিউলিস।’ ৫৮ টেস্টে ৩৩.২৮ গড়ে ৩৪২৮ রান করেছিলেন রিড। ৬ সেঞ্চুরি, ২২ ফিফটি। উইকেটসংখ্যা ৮৫।
অনেকে মনে করেন রিডের সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি জন্মেছিলেন সময়ের আগে। ১৯৬৫ সালে অবসর নেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেট এসেছে তার পরে। এই সংস্করণ কিংবা হালের টি-টোয়েন্টি রিডের সময়ে থাকলে তিনি মারকুটে ব্যাটিং দিয়ে আলাদা কাতারে থাকতে পারতেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
রিডের ৬টি সেঞ্চুরির মধ্যে ১৯৬৩ সালে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্কের ইনিংসটি বেশি খ্যাতি কুড়িয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড—যেখানে রিড খেলেন ১০০ রানের ইনিংস। এটি আজও সেঞ্চুরিসহ সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংসের রেকর্ড। বাত জ্বর এবং দুর্বল হৃৎপিন্ডের কারণে শৈশবে রাগবি খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দেন রিড।
ক্রিকেটও একেবারে কম কিছু দেয়নি তাঁকে। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিউজিল্যান্ডের প্রথম ‘অ্যাওয়ে’ টেস্ট জয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৩৪ টেস্টে কিউইদের নেতৃত্ব দেওয়া রিড ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের নেতৃত্বও দিয়েছেন। তার অধীনে খেলেছিলেন গ্যারি সোবার্স, চার্লি গ্রিফিথ, ওয়েস হল, হানিফ মোহাম্মদ, রোহান কানহাইয়ের মতো ক্রিকেটাররা।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে তার সর্বোচ্চ ১৫ ছক্কা মারার রেকর্ড টিকে ছিল ৩০ বছরের বেশি সময়। ১৯৯৫ সালে রিডের এ রেকর্ড ভেঙেছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ১৯৯৩ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ৫০ টেস্ট ও ৯৮ ওয়ানডেতে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন রিড। ২০০৩ সালে হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সভাপতি। কিউই ক্রিকেটে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ মাঠের একটি ফটক তার নামে করা হয়েছে।
২০১৩ সালে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না রিডের। তিনি চলে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বেঁচে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটারের আসন নিলেন ট্রেভর ম্যাকমোহান (৯০ বছর ৩৪১ দিন)। কিন্তু এই চেয়ার যে ক্ষণস্থায়ী তা আর সবার মতো ম্যাকমোহান নিজেও তো জানেন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ