মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ অক্টোবর টুইটারে নিজের করোনা সংক্রমণের কথা জানানোর পর ৩ রাত ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে কাটিয়ে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি গত ২০ বছরেও এতো ভাল বোধ করেননি এবং ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছেন। তারপর নিজেই চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে অব্যহতি নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন।
হোয়াইট হাউসে ফিরে তিনি ট্রুমান বারান্দায় দাঁড়িয়ে ক্যামেরার সামনেই তার মাস্কটি খুলে ফেলেন। পরবর্তীতে ভিডিও বার্তায় তিনি আমেরিকানদের আহ্বান জানান, ভাইরাসটিকে তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে না দেয়ার এবং বলেন যে, সম্ভবত তার শরীর ভাইরাস রোধক। অন্যদিকে, তার চিকিৎসকদের মতে, করোনাভাইরাস তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৩ দিন আগেই অতি মাত্রায় কমিয়ে দিয়েছে। তার এমন কার্যকলাপ অনান্য মহলসহ রক্ষণশীল গণমাধ্যমগুলিতেও এখন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। যে মহমারীটিকে ট্রাম্প জয় করেছেন বলে দাবি করার অনেক আগেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এসেছেন, সেই করোনাভাইরাসে এপর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। হোয়াইট হাউসের পশ্চিমাংশেও সংক্রমণের হার এখন অনেক বেশি। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের আরেক প্রবীণ সহযোগী বার্তা লেখক স্টিফেন মিলার, প্রেস সেক্রেটারি হোপ হিকস, ক্লেলি ম্যাকেনি এবং তার ৪ সহকর্মী, প্রচার ব্যবস্থাপক বিল স্টেপিয়েন এবং রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান রোনা ম্যাকডানিয়েল। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, প্রেসিডেন্টের কাছাকাছি হওয়ার সময় হোয়াইট হাউসের কর্মচারীদের সার্জিক্যাল মাস্ক এবং গাউন পরতে বলা হয়েছে। অতএব, পরিস্থিতি ট্রাম্পের মাস্কবিহীন প্রদর্শনীর জন্য ইতিবাচক প্রতীয়মান হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বাধিক অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসাবে শুরু করার পর পুনর্র্নিবাচন নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পকে তার ঘাঁটির বাইরের জনগণের কাছে পৌঁছানোর দরকার ছিল। কিন্তু উল্টো তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ক্রমাগতভাবে জাতিগত বৈষম্য এবং সাংস্কৃতিক বিভেদমূলক উগ্র বক্তৃতা দিয়েছেন। করোনা মহামারী নিয়ে সহাস্য তাচ্ছিল্য তার স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের সর্বশেষ উদাহরণ। এর ফলাফল অনুমেয় ছিল। প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে জো বাইডেনের প্রতি তার অসংযত কটাক্ষের প্রেক্ষাপটে পরিচালিত জরিপগুলি থেকে বোঝা যায় যে, ‘ট্রাম্প বিশ্ব’র বাইরের প্রায় সবাই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সিএনএন’র সাম্প্রতিক জরিপে বাইডেন ট্রাম্পের থেকে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন, যা একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে সবচেয়ে খারাপ খবর।
গড় সমীক্ষাতেও বাইডেনের থেকে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ রাজ্যগুলিতে পিছিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক করোনা বার্তা এবার রিপাবলিকানদেরও বিমুখ করেতে শুরু করতে পারে। দ্য ইকোনমিস্টের জরিপ বলছে যে, রিপাবলিকান ভোটাররা তার অসুস্থতার কথা যত বেশি শুনবেন, ততই কঠোরতার সাথে তারা ট্রাম্পের মহামারী পরিচালনার বিষয়টি বিচার করবেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভরাডুবিতে সর্বশেষ সংযোজন প্রথাগত ব্যবসায়িক রক্ষণশীলদের একটি দল, যাদের প্রায়শই ট্রাম্পবিমুখ হিসাবে অভিহিত করা হয়, যারা প্রেসিডেন্টের রিপাবলিকান ঘাঁটির প্রায় ১০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, ট্রাম্প যদি তাদের সমর্থন হারান, তবে নির্বাচনে গো হারা হারার সম্ভবনা রয়েছে ট্রাম্পের।
নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ট্রাম্প তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের পথে সম্ভাব্য তিনটি স্পষ্ট বাধার মুখোমুখি। প্রথমটি ৭৫ বছর বয়সী স্থ’লকায় ট্রাম্পের করোনা স্বাস্থ্য। দ্বিতীয়টি হ’ল তার সহযোগীদের, সহকর্মী রিপাবলিকানদের এবং হোয়াইট হাউস পরিচারকদের করোনা সংক্রমণ। যদি তিনি গণমাধ্যমের মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে নিতে চান, তবে বড় ধরণের অঘটন ছাড়াই তাদের প্রত্যেকের আরোগ্য লাভ করা আবশ্যক। তৃতীয় এবং সব থেকে বড় বাধা হ’ল অর্থনীতি। শ্রম-বাজারের সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যানগুলি চাকরির সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট মন্দার ইঙ্গিত করছে। একারণেই ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভ মনুচিন এবং ডেমোক্র্যাটরা নতুন প্রণোদনা ব্যয় নিয়ে ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করার জন্য কঠোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং গেল ৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট হুট করেই সেই আলোচনা রদ করে দিয়েছেন। মহামারী চলাকালীন সময়ে একটি অসংযত গণ জমায়েত করার মতোই এই বিষয়টিও ছিল ট্রাম্পের একটি অসঙ্গত কাজ যা ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের সম্ভানাকে ক্ষীণ করে দিয়েছে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।