পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যার কবলে পড়েছে রংপুরের মানুষ। শত বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টির কারণে রংপুর মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন ‘শ্যামাসুন্দরী খাল’ উপচে গিয়ে বানের পানিতে ডুবে গেছে নগরীর ৯০ ভাগ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নগরীর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। কোথাও হাটু পানি, কোথাও কোমর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ঘর-বাড়ি ও স্থাপনা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পানিবন্দী মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে স্কুল-কলেজে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশির বাড়ির ছাদে।
টানা ১০ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে রংপুর মহানগরীসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ডুবে গেছে। ফলে এসব এলাকায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সব অলিগলি পানিতে ডুবে গেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার রাত ১০টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ১০০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। প্রবীণরা বলছেন, গত ৪০/৫০ বছরেও এমন বৃষ্টি দেখেননি তারা। ৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষ ভোর রাতেই বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। ভোর রাতে হঠাৎ করে বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকেই বাড়ির আসবাবপত্র, বিছানাপত্র সরিয়ে নিতে পারেননি। ফলে সেগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে তোষক, বালিশসহ কাপড়-চোপড় ভিজে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলোতে সন্ধ্যা ৬ টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোমর পানি কোন কোন এলাকায় বুক পর্যন্ত পানি রয়েছে। এসব এলাকায় ঘরের জানালার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশেষ করে নগরীর বাবু খা, গুড়াতিপাড়া, গণেশপুর, মুলাটোল, পাক পাড়া, গোমস্তা পাড়া, মুন্সিপাড়া, রাধাবল্লভ, ধাপ চিকলি, শাপলা, সেনপাড়া, চামড়াপট্টি, হাবিব নগর, মিস্ত্রিপাড়া, বালাটারী, দেওডোবা, পার্বতীপুর, কেরানীপাড়া, ধান, শিমুলবাগ, হাজীপাড়া, মেডিকেল পুর্বগেট, জুম্মাপাড়া, আদর্শপাড়া, কামার পাড়া, জলকর, কুকরুল, আমতলা, স্টেশন এলাকা, মুসলিম পাড়া, মন্ডলপাড়া, তাজহাট, ধর্মদাস, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অধিকাংশ এলাকাতেই কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। পানিবন্দি লোকদের নিজ বাড়ি ছাড়া তাদের কোন যাওয়ার যায়গা নেই বলে অনেকেই বাধ্য হয়ে স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে এভাবে পানিবদ্ধতায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তাদের। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে মূল্যবান কাগজপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেয়া লোকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, এত বড় একটি দুর্যোগ অথচ আগে থেকে সিটি কর্পোরেশন অথবা আবহাওয়া অফিস কেউই কোন সতর্কবাণী বা পূর্বাভাস দেয়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন থেকে কেউই কোন খোঁজ-খবর নেয়নি।
এদিকে হঠাৎ ভারী বর্ষণ এবং হাল্কা বাতাসের কারণে ভোর রাত থেকেই নগরীতে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। দুপুর নাগাদ কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে করে খাবার নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ কেউ হোটেল থেকে খাবার এনে খেলেও অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পানি উঠে পড়ায় অধিকাংশ হোটেলও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকেল পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়েছে অনেক পরিবারকেই। তবে এতে এলাকা ভিত্তিক অনেক তরুণ-যুবক ও প্রতিবেশিদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। তারা নিজেদের উদ্যোগে খাবার রান্না করে সরবরাহ করছেন।
এদিকে পানিবন্দীদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম। তারা নৌকায় করে মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এভাবে বৃষ্টিপাত হলে গোটা নগরী পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে আমাদের কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে এ জেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক। একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চল পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার রিপোর্ট অনুযায়ী গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে বের হলেও অনেকেই বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হননি। এতে প্রায় জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয়েছে বিভিন্ন ব্যস্ততম রাস্তা ও বাজার। অতি বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরা।
প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ায় বৃষ্টি হলেই পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারে কার্যালয়, জেলা ও দায়রা আদালত, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল রোড, কলেজ মোড় থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন রোড সর্বত্রই পানি আর পানি। হাঁটু পানিতে রিকশা ও গাড়ি চলছে অনেক ঝুঁকি নিয়ে। ফলে অফিস আদালতগামী মানুষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলোর সামনে জমে ছিলো হাঁটু পানি।
কুড়িগ্রাম পৌর সভার মেয়র আব্দুল জলিল জানান, পাকা ড্রেন সংস্কার ও কিছু স্থানে নতুন ড্রেন নির্মাণ পরিকল্পনা থাকলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না। তবে সীমিত সাধ্যতে তারা পানিবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন বলে দাবী করেন তিনি। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় শহর ও গ্রাম এলাকার রাস্তা এমনকি বাড়িঘরে পানি উঠে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।