পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অস্বাভাবিক উত্থানের পর কিছুটা পতনের কবলে স্বর্ণের দাম। বিশ্ববাজারে দফায় দফায় কমছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম। যার ফলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। যদিও সেটা খুবই সামান্য। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোয় এবং নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করায় স্বর্ণের এই দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন দৌরাত্ম্যের কারণে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এখন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। আবার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে কিছু জুয়াড়ি স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণ বিক্রি করে তাদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। এ সবকিছু মিলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের বাজার এখন অনেকটাই জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে, কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্বর্ণের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। একদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের অলঙ্কারের ক্রেতা নেই, অন্যদিকে বাড়তি দামে স্বর্ণ কেনার পর দাম কমায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
সাধারণত, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকলেই স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়ে। এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মুদ্রার মান কমিয়েছে চীন। এছাড়া ডলারের বিপরীতে ভারতও রুপির দাম কমিয়েছে। ফলে মানুষ স্বর্ণে বিনিয়োগ করছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ শুরু হলে চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড দুই হাজার ৭৫ ডলারে ওঠে।
বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে এই দাম বাড়ার পর ৭ আগস্ট পতনের মুখে পড়ে স্বর্ণ। ১১ আগস্ট একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতন। ফলে বাংলাদেশেও কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম কমানো হয়। অবশ্য বিশ্ববাজারে দাম না বাড়ার পরও চলতি মাসে দু’দফা দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়।
এর মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন চলতে থাকে। দফায় দফায় দাম কমে এখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে দরপতনের প্রেক্ষিত গতকাল দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণ হিসেবে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার এটিই অন্যতম কারণ। আর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আপডেট থাকতে চাই। যদি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরও কমে, তবে আমরা দাম কমাবো।
করোনার শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারের গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করে। এদের একটি অংশ বাড়তি দামে স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণের দাম কমার এটি একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন গঙ্গা চরণ মালাকার।
বাজুসের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভ‚ইয়া বলেন, স্বর্ণের বাজার এখন একপ্রকার জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জুয়াড়িরা এখন স্বর্ণ নিয়ে খেলা করছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। এর শিকার হচ্ছে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা। এই অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা করে আমরা শান্তি পাচ্ছি না। বাড়তি দামে স্বর্ণ কেনার পর আড়াই হাজার টাকা দাম কমে গেল। এখন এই লোকসানটা আমাদের বহন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমাদের বাজারে দাম বাড়াতে হবে। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমলে দাম কমাতে হবে। এখানে আমাদের কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একই সঙ্গে দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ রাখা হয়-ডলার ও স্বর্ণ। ডলারের দরপতন হলে স্বর্ণের দাম বাড়বে। আবার ডলার শক্তিশালী হলে স্বর্ণের দাম কমে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার পেছনে এটি একটি কারণ। তাছাড়া স্বর্ণের দামের অস্থিরতার পেছনে চীনেরও হাত আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।