পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের রবের দরবারে ইস্তিগফার কর। (তাহলে) তিনি তোমাদের প্রতি পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের মাল, সন্তান, বাগ-বাগিচায় বরকত দিবেন এবং তোমাদের জন্য নহর সৃষ্টি করে দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবায় অধিক খুশি হন। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কারো নেয়ামত দেখে তা ধ্বংসের কামনা করাই হিংসা। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। স্মরণ রাখতে হবে হিংসা অন্তরাত্মার নিকৃষ্টতম একটি ব্যাধি। কারণ হিংসুক সব সময় হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। কোরআন ও হাদীসেও হিংসা এবং হিংসুককে কঠিণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে। হিংসুকের অনিষ্ঠ থেকে পানাহ চাইতে পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৫) অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে সন্দেহ নেই, হিংসা নেক আমলসমূহের নূর ও আলোকে নিভিয়ে দেয়। হাদীস শরীফে এসেছে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মানুষের উপর দয়া করো রব্বুল আলামীন স্বয়ং তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। মনে রাখতে হবে হিংসুক হিংসার অন্তরালে বহু গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না, একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। সুতরাং আসুন আমরা হিংসা-বিদ্বেষ,গীবত,কুদৃষ্টিসহ সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম আজ খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পাপ করার পর নিরাশ হওয়া যাবে না আবার পাপের মধ্যে লিপ্তও থাকা যাবে না। বরং তাওবা করতে হবে। সকল ধরণের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তাওবা করা আবশ্যক। পাপ যদি শুধুমাত্র বান্দা ও আল্লাহর হকের মধ্যে হয়ে থাকে, যেখানে কোন মানুষের হক জড়িত নেই সে ক্ষেত্রে তাওবা করার জন্য তিনটি শর্ত বিদ্যমান। প্রথম গুনাহ পরিত্যাগ করবে, দ্বিতীয় নিজ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে এবং তৃতীয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবে যে, সে এগুনাহ আর করবে না। এই তিনটি শর্তে একটিও ছুটে যায় তাহলে তাওবা সহীহ হবে না। আর পাপ যদি বান্দার হকে সাথে জড়িত হয়, তাহলে এ শর্তগুলোর সাথে আরেকটি শর্ত রয়েছে, তাহলো যে বান্দার হক নষ্ট করেছে তার হক আদায় করবে। মাল বা এ জাতীয় কিছু আত্মসাৎ করে থাকে তাহলে তা ফেরত দিবে, যদি তার বিরুদ্ধে কোন অপবাদ দিয়ে থাকে তাহলে তার থেকে মাফ চেয়ে নিবে, যদি তার গীবত করে থাকে তাহলে তার থেকে মাফ চেয়ে নিবে। মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন হে মুমিনগণ তোমরা সকলেই তাওবা কর, যাতে করে তোমরা সফলকাম হও। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন আল্লাহর কসম আমি প্রতিদিন সত্তর বারের বেশি তাওবা করি (বুখারী)। অপর বর্ণনায় এসেছে হযরত আগার ইবনে ইয়াসার আলমাজানী (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, হে মানুষ তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো। কেননা আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করি (মুসলিম)।
মুসলিম শরীফের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবায় অধিক খুশি হন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের রবের দরবারে ইস্তিগফার কর। (তাহলে) তিনি তোমাদের প্রতি পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের মাল, সন্তান, বাগ-বাগিচায় বরকত দিবেন এবং তোমাদের জন্য নহর সৃষ্টি করে দিবেন (সুরা নূহ: ১০-১২)। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, নিজের সকল সমস্যার সমাধানে জন্য অন্যের কাছে তাবিজ নেয়ার দরকার নেই বরং বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়লেই তার সমধান আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিবেন।
রাজধানীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার বয়ানে বলেছেন, মানুষের মধ্যে ফেরেশতাসুলভ স্বভাবও রয়েছে আবার পশুসুলভ স্বভাবও রয়েছে। মানুষ যদি তার মধ্যে থাকা পশুত্বের স্বভাবকে পরাজিত করে ফেরেশতাসুলভ স্বভাবকে বিজয়ী করতে পারে তাহলে মানুষ রূপে পৃথিবীতে আসা তার জন্য স্বার্থক হয়ে উঠে। উপরোক্ত উভয় প্রকার স্বভাব মানুষের ভেতর প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে এবং এই যুদ্ধে একটিকে নিয়ন্ত্রণ করে অপরটিকে শক্তিশালী করার ক্ষমতাও আল্লাহ মানুষকে দিয়ে রেখেছেন। তাই পশুসুলভ চরিত্রকে মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হলে সেক্ষেত্রে মানবজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার যোগ্যতাই দেয়া হয়নি বরং আল্লাহর আদেশ পালনেই তারা সদা ব্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে পশু-প্রাণির কাজ হলো খাওয়া-দাওয়া আর প্রবৃত্তির দাসত্ব করা।
হযরত আলী (রা.)এর ভাষ্যমতে, মানুষের মধ্যে ফেরেশতাজাতিয় স্বভাবের প্রভাব বেশি হলে মানুষ ফেরেশতার চেয়েও উত্তম হয়ে যায়। বিপরীতে পশুচরিত্রের প্রভাব বেশি হলে মানুষ তখন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়। মাওলানা আফেন্দী বলেন, প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তাক্বওয়াই একমাত্র কার্যকর পাথেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।