নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : বেইজিং অলিম্পিকেই অলিম্পক ইতিহাসে সেরাদের সেরা হওয়ার রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট লারসিয়া লাতিনিয়ার রেকর্ড ৯ স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড টপকে ১৪ স্বর্ণে অন্য উচ্চতায় নিজেকে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতার বিস্ময় মাইকেল ফেল্পস। এথেন্স অলিম্পিক ২০০৪ এ ৩টি এবং ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ৭টি বিশ্বরেকর্ডের মালিকের মিশন অবশিষ্ট ২ অলিম্পিকে শুধু নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়া। লন্ডনে ৪ স্বর্ণ, ২ রৌপ্যে অলিম্পিক থেকে ১৮ স্বর্ণ ২ রৌপ্য, ২ ব্রোঞ্জে এমন এক উচ্চতায় নিজেকে উঠিয়ে এনেছেন, যেখানে নিকট ভবিষ্যতে তার কাছাকাছি যেতে পারবে এমন কাউকে দেখছে না বিশ্ব। নিজের সেই রেকর্ডটাই বড় করার নেশায় রিও অলিম্পিকে হাজির ফেল্পস।
অবসর ভেঙ্গে ফিরেছেন ২ বছর পর। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফ্রি স্টাইলের কোন ইভেন্টে আর দিবেন না ঝাঁপ। রিও অলিম্পিককে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সাঁতারুদের যে ট্রায়াল বাধ্যতামূলক, সেই ট্রায়াল পর্যন্ত দেননি। এমনকি রিও অলিম্পিকের প্রিলিমিনারী রাউন্ডেও পর্যন্ত ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে ছিলেন না ফেল্পস। অথচ গত ৭ জুলাই সবাইকে অবাক করে ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে নিলেন অংশ এবং জিতলেন দলগত ওই ইভেন্টে! অপ্রত্যাশিত ওই স্বর্ণ সাফল্য থেকে প্রেরণা নিয়ে গত পরশু ৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলেও যুক্তরাষ্ট্র দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন স্বর্ণ। যুক্তরাস্ট্রের সাঁতার ইতিহাসে টানা ৫ অলিম্পিকে অংশ নিয়ে শুধু নিজের রেকর্ডটাই ভারী করেননি, নেশা তার শুধুই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এই বয়সে তরুণদের সাথে সাঁতার, শরীরের যার কুলানোর কথা নয়, সেই ফেল্পসই কি না মাত্র ৮০ মিনিটের ব্যবধানে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দিয়ে জিতলেন প্রিয় ইভেন্ট ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে স্বর্ণ পদক। ব্যক্তিগত এই ইভেন্টে স্বর্ণ জয়টা নাকি প্রত্যাশিতই ছিল ফেল্পসেরÑ ‘এই রাতে আমি একটি মিশন নিয়ে এসেছিলাম। যদি আমি হেরে যেতাম, তাহলে নরকে পড়ার মতো দশা হতো আমার। তখন সবাই পুল থেকে আমাকে আমাকে চলে যেতে বলতো।’
পদকহীন যাত্রা দিয়ে শুরু যার সিডনী অলিম্পিক, ১৬ বছরের মাথায় এসে অলিম্পিক থেকে তার পদক সংখ্যা এখন ২৫। যার মধ্যে ২১টি স্বর্ণ। ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে স্বর্ণ পদকটি তার অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ১৪তম স্বর্ণ!
প্রিয় ইভেন্ট ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে শুরুটা তার অলিম্পিক ক্যারিয়ার, সেই প্রিয় ইভেন্ট থেকেই অর্জিত হলো সাঁতার কিংবদন্তী মাইকেল ফেল্পসের ২১তম অলিম্পিক স্বর্ণ। অলিম্পিকে অমø মধুর অজিঞ্জতার ইভেন্টও ফেল্পসের এটি। ২০০০ সিডনী অলিম্পিকে যখন ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন, তখন ফেল্পসের বয়স মাত্র ১৫। অলিম্পিক ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারুর রেকর্ডটা তখন করে ফেলেছেন এই কিশোর। নিজের অলিম্পিক অভিষেকে পদক পাননি, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে হয়েছেন ৫ম। ২০০৫ এথেন্স এবং ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়ে বেছে নিয়েছিলেন লন্ডন অলিম্পিককে। তবে লন্ডন অলিম্পিকে ৪ স্বর্ণ জিতেও ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন প্রিয় এই ইভেন্টে স্বর্ণ হাতছাড়া হওয়ায়। সেবার প্রিয় এই ইভেন্টে ফেভারিট সুইমিং পুলে ঝাঁপ দিয়ে দ.আফ্রিকার চাঁদ ডি ক্লোজের কাছে হারিয়েছিলেন মুকুট। কস্টটা এতোটাই পেয়েছিলেন যে, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক গেমস শেষে অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছিলেন অলিম্পিকে সর্বাধিক পদক জয়ী এই সাঁতারু। অথচ ৩১ এ ও দৃঢ়চেতা মাইকেল ফেল্পস। লন্ডন অলিম্পিকে ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে হারানো মুকুট ফিরে পেয়েছেন গত পরশু। জাপানের সাঁতারু মাসাতো সাকির সঙ্গে লড়াইটা জমে উঠেছিল দারুণ। ১ মিনিট ৫৩.৩৬ সেকেন্ডে টাচ প্যাড স্পর্শ করেছেন ফেল্পস, তার চেয়ে এক সেকেন্ডের ৪শ’ ভাগের এক ভাগ সময় বেশি লেগেছে সেখানে জাপানের ওই প্রতিদ্বন্দ্বীর। ক্যারিয়ারের সায়ান্থে দাঁড়িয়ে অলিম্পিকে ২১তম স্বর্ণ, ২৫তম পদক জয়ে আবেগী হয়ে পড়েছেন ফেল্পস।
৬টি স্বর্ণ, ২টি ব্রোঞ্জে ঝড় তুলেছিলেন অলিম্পিকের জন্মভূমি এথেন্সে। অলিম্পিকের পরের আসর বেইজিংয়ে ৮টি স্বর্ণÑ এক আসরে যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক স্পিৎজের রেকর্ড ৭টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ডকে টপকে নতুন ইতিহাস ফেল্পসের। ১৮টি অলিম্পিক পদকে সাবেক সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারসিয়া লাতিনিয়ার রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন লন্ডন অলিম্পিকে ৪ স্বর্ণ ২ রৌপ্য জিতে। অলিম্পিকে এককভাবে সর্বাধিক ৯টি করে স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড ছিল সাবেক সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারসিয়া লাতিনিয়া, ফিনল্যান্ডের দৌড়বিদ পাভো নুরমি, যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মার্ক স্পিৎজ ও স্প্রিন্টার কার্ল লুইসের। বেইজিংয়ে সেই রেকর্ড ছাপিয়ে লন্ডনে এসে সব রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। ২৫টি অলিম্পিক পদক, সর্বাধিক ২১টি স্বর্ণ পদকে এভারেস্ট উচ্চতায় উঠে আসা ফেল্পসের গল্প কিন্তু এখানে থামছে না। কারণ, রিও অলিম্পিকে ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুয়াল মিডলে এবং ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টটি এখনো বাকি।
অথচ কি জানেন, অলিম্পিক ইতিহাসে অমরত্ব পেয়েও নিজেকে নিয়ে এতোটুকু দম্ভবোধ নেই। ২০১৪ সালে সাঁতারে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্র চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ইভেন্ট থেকেও পাননি স্বর্ণ। যে রাস্তায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ী চালানো আইনত দন্ডনীয়, সেই রাস্তায় ৮৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ী চালানোর অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রে সাঁতারে ৬ মাসের জন্য হয়েছেন নিষিদ্ধ! সেই ছোটবেলা থেকে তার সাঁতার গুরু বিল বোম্যান অবশ্য ফেল্পসের এমন বাধাধরাহীন জীবনকে স্বাভাবিক মনে করছেনÑ ‘অবশিষ্ট জীবনে কি করবে, সে সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই। একদিন আমি তাকে বললাম, এই বয়সে তোমার যতোটা টাকা হয়েছে, তা কেউ কামনা করবে না। তুমি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারপরও তোমার জীবন দুর্বিষহ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।