পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের শত শত বছরে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী ভেলুয়া সুন্দরীর দীঘির পাড়ের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে প্রায় ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। কথা ছিলো সুবিশাল এই দীঘিকে ঘিরে গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র। তবে পর্যটন কেন্দ্র হয়নি, অরক্ষিত দীঘির পাড় ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে অবৈধ দোকানপাট, রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে বসে মদ, জুয়া, গাঁজার আসর।
চট্টগ্রাম মহানগরীসহ এ অঞ্চলে রেলওয়ের মূল্যবান ভূ-সম্পত্তি এমনই অরক্ষিত। ঢাকঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও জমি রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেই। ফলে ফের বেপরোয়া দখলের শিকার হচ্ছে শত শত কোটি টাকার মূল্যবান ভূমি। রেলের চট্টগ্রাম বিভাগে কয়েক হাজার কোটি টাকা দামের আড়াই শতাধিক একর জমি বেদখল। গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে ৩০ হাজার স্থাপনা গুঁড়িয়ে ৯০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এর বেশিরভাগই ফের বেদখল হয়ে গেছে।
করোনা হানা দেয়ায় গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঝিমিয়ে পড়ে উচ্ছেদ অভিযান। আর তখনই দখলবাজরা বেপরোয়া গতিতে অবৈধ স্থাপনা তুলে এসব জমি দখল করে নেয়। করোনার প্রকোপ কমে আসায় বেদখল এসব জমি ফের উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে রেলওয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূ-সম্পত্তি দখলমুক্ত করার পর উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো অথবা সুরক্ষিত করা না হলে এভাবে উচ্ছেদ আর দখলের খেলা চলতেই থাকবে। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরকালে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, অবৈধভাবে রেলওয়ের কোন ভূ-সম্পত্তি কাউকে ভোগ করতে দেওয়া হবে না। ভূ-সম্পত্তি বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেয়ার জন্য একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভূমি ইজারা দেওয়া হলে রেলের আয় বাড়বে। অন্যদিকে সম্পত্তিও বেদখল হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
রেলের জমিতে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দায়িত্ব পালন করে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এরপর এ জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পড়ে প্রকৌশল বিভাগের উপর। সীমানা দেওয়াল কিংবা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখলদারদের কবল থেকে জমি রক্ষা করার দায়িত্ব তাদের। তবে উচ্ছেদকৃত জমি সুরক্ষিত করার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় ফের এসব জমি বেদখল হয়ে যায়। দখলদারেরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়ার সাহস পান না রেলের কর্মকর্তারা। আবার কোথাও কোথাও দখলদারদের সাথে রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশেরও অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর পাহাড়তলীতে ঐতিহাসিক ভেলুয়া সুন্দরীর দীঘির আয়তন ১৪ একর। দীঘির পাড়ের আয়তন ১২ একরের বেশি। গত বছরের নভেম্বরে ঐতিহ্যের স্মারক ৫শ’ বছরের পুরানো এ দীঘিটি দখলমুক্ত করার অভিযানে নামে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাড়ের ১২ একর জমিতে গড়ে উঠা কয়েকশ’ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রায় ১০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়। তবে দীঘি দখল করে গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি ভবন এখনও অক্ষত রয়ে গেছে।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দীঘির পাড় দখলমুক্ত করে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। রেলের খরচে দীঘির পাড়ে হাঁটার পথ করে দেয়ারও পরিকল্পনা ছিল। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষি দীঘিটি দখলদারদের কবলমুক্ত করার দাবি উঠে। তারা দীঘিটিকে পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানান। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে কিছুই হয়নি। সরেজমিন দেখা যায়, দীঘির পাড়ে দোকানপাট গড়ে উঠছে। নির্মাণ সামগ্রী রেখে দখল করা হয়েছে দীঘির জমি। গড়ে উঠেছে গাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ। স্থানীয়রা জানান, রাতে-দিনে সেখানে বখাটে আর মাদকাসক্তদের উৎপাত। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে অস্থির হয়ে পথ চলেন পথচারী ও স্থানীয়রা।
একই অবস্থা নগরীর অন্য এলাকায়ও। পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে সদর দফতর সিআরবি এলাকায় গত বছরের অক্টোবরে ৫ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে তিন একর জমি দখলমুক্ত করা হয়। এসব জমিতে এখন গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। বস্তি গড়ে তুলে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভেঙে দেয়া টিনশেডের ঘর নতুন করে তোলা হয়েছে। একই চিত্র পাহাড়তলী, হালিশহর, আমবাগান, সেগুনবাগান, কদমতলীর জামতলা বস্তি ও রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমী এলাকায়ও। দখলদাররা আবার নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া আদায় করছে। গড়ে উঠেছে দোকানপাট, বসতবাড়ি, গাড়ির গ্যারেজ।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা অভিযানে অনেক ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কয়েক হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ১১ মার্চ বন্দর থানার পোর্ট মার্কেট এলাকায় ৪০৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় দুই একর জমি দখলমুক্ত করে রেলওয়ে। রেলওয়ের হিসাবে, অভিযানে প্রায় ৯০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছিল। এখন তার বেশিরভাগই ফের বেদখল হয়ে গেছে। জমিগুলো উদ্ধারের পর দেওয়াল বা তারকাঁটা বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা না হওয়ায় দখলদাররা ফের স্থাপনা গড়ে তুলে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুব উল করিম ইনকিলাবকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকায় অনেক জমি ফের বেদখল হয়ে গেছে। এসব জমি দখলমুক্ত করতে এখন অভিযান চলছে। তিনি বলেন, ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন একটি নীতিমালা সম্প্রতি চূড়ান্ত হয়েছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী জমির ধরণ বুঝে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিজ দেয়া হবে। যেখানে বাণিজ্যিক ভবন করার সুযোগ আছে, সেখানে বাণিজ্যিক ভবন হবে। আবার যেখানে পর্যটনের সম্ভাবনা আছে সেখানে পর্যটনের জন্য ভূমি লিজ দেয়া হবে। এ নীতিমালা কার্যকর হলে একদিকে ভূ-সম্পত্তি রক্ষা হবে অন্যদিকে রেলের আয় বাড়বে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।