Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরগঞ্জে তিস্তা গিলে খাচ্ছে বসতবাড়িসহ আবাদি জমি, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষজন

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫৬ পিএম

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদী গিলে খাচ্ছে বসতবাড়িসহ আবাদি জমি। তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনে সুখের বসতবাড়ি ও জমাজমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দুঃখের অনলে জ্বলছে মানুষজন। দীর্ঘ মেয়াদি বন্যার ধকল কাটতে না কাটতে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বরণকালের ভাঙন অব্যাহত থাকায় হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার পাঁকা রাস্তা, বেশ কিছু সংখ্যক দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়িসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে । গত ৪/৫ দিন ধরে অবিরাম বর্ষন এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে তীব্র ¯্রােতে ভাঙন ভাঙ্গন জোরদার হয়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন চরবাসি। টানা ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। ভাঙ্গনে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার, চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, লখিয়ারপাড়া, টেবরির মোড় শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুটিমারী, লালচামার গ্রামের হাজারো একর ফসলি জমি ও দুই শতাধিক বসত বাড়ি নদীগভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি অপরদিকে তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় খাল-বিল ও আবাদযোগ্য নিচু এলাকাগুলো টই-টুম্বুর হয়েছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদীর ভাঙ্গনে বালু চরের সবুজের সমারোহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে। হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু জানান, গত তিন সপ্তাহের ব্যাবধানে তার বাড়ির সামন দিয়ে কাশিমবাজার-উলিপুর পাঁকা সড়কটি প্রায় ৩০০ মিটার তিস্তা গিলে খেয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ি, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তিস্তার ভাঙ্গনে চরাঞ্চলবাসি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কারণ দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙ্গন চলছে। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান, যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন হুমকির মুখে রয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া পরিবার গুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতার জীবন জাপন করছে। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান জানান, ভারি বর্ষন অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের তালিকা নিরুপন করে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান নদী ভাঙ্গন রোধে একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙ্গন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ