মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ব্যয়সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে বিশ্বের সব বড় কোম্পানি। যে সংকট হাজির হয়েছে, তাতে একই পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ পরিবারগুলোও। বিশেষ করে এশিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলের পরিবারগুলো খরচ কমাতে ও সম্ভাব্য আয়ের উৎস খুঁজে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছে মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উপার্জনে যুক্ত করার পথ। মহামারীকালে এমনিতেই এখন সরাসরি শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছে না বললেই চলে। ফলে এশিয়ার দেশগুলোর গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাভাবিক সময়ে যেসব মেয়ের ন্যূনতম হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দরিদ্র পরিবারগুলো অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের মেয়েদের অর্থ উপার্জনের পথে ঠেলে দিচ্ছে। কম্বোডিয়ার একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিনার (ছদ্মনাম) স্বপ্ন ছিল, সে হিসাববিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করবে। কিন্তু তার পরিবার এখন চাইছে যে সে বিদ্যালয় ছেড়ে দিক। এর বিপরীতে কোনো কাজে যোগ দিয়ে সহায়তা করুক পরিবারের ঋণ পরিশোধে। শুধু লিনাকেই নয়, বর্তমানে করোনাজনিত অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে কম্বোডিয়া, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মেয়েদের। নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংগঠন রুম টু রিডের এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের ৪২ শতাংশ মেয়ে জানিয়েছে যে কভিড-১৯ এর কারণে তাদের পরিবারের আয় কমে গেছে। ফলে প্রতি দুজন মেয়ের মধ্যে একজন বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। মোট ২৮ হাজার মেয়ের মধ্যে এ জরিপ সম্পন্ন করে রুম টু রিড। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জন উড বলেন, যখন পরিবারগুলো আর শিক্ষার ব্যয় বহন করতে পারে না, তখন তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ সময়ই ছেলেদের বেছে নেয়া হয়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় অর্থনৈতিক সংকট মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মূলত মহামারী বিপুল পরিমাণের বেকারত্ব সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে কমে গেছে পারিবারিক উপার্জন, যা ১০ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। এ অবস্থায় মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মালালা ফান্ড বলছে, বৈশ্বিকভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত দুই কোটি মেয়ে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ ছেলে ও মেয়ে। ফলে সার্বিকভাবে দরিদ্র দেশগুলোয় মেয়েদের জন্য শিক্ষা ও লিঙ্গবৈষম্য আরো বাড়বে। কারণ মহামারীর আগে থেকেই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় অংশগ্রহণে মেয়েরা পিছিয়ে ছিল। বিশ্বব্যাংকের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের এডুকেশন প্র্যাকটিস ম্যানেজার টবি লিন্ডেন বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে আরো বহু সুবিধাবঞ্চিত পরিবারকে তীব্র সংগ্রাম করতে হবে। ফলে তাদের পক্ষে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অথচ দেখা গেছে নারীশিক্ষার ঘাটতি নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের মজুরির ওপর প্রভাব ফেলে। যদি কোনো মেয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে এক বছর বেশি পড়াশোনা করে, তবে ভবিষ্যতে তার পক্ষে ২০ শতাংশ বেশি মজুরি প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। ইউনিসেফের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিকের আঞ্চলিক উপদেষ্টা ফ্রান্সিসকো বেনাভিদেস বলেন, সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, বিদ্যালয় খুললেই যে সব শিশু শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসতে সক্ষম হবে তা নয়। এ অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর মহামারী ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আর এখন যদি মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে পরিবার ও সমাজকে এ অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে আরো ভুগতে হবে। ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।