পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে/ তোমার কপালে ছোঁয়াবো গো, ভাবি মনে মনে/ আকাশের নীল থেকে তারার কান্তি এনে/ তোমার নয়নে ছড়াবো গো, ভাবি মনে মনে’। সাগরের তীরে দাঁড়ালেই মনে হয় জিনাত রেহানার সুমধুর কণ্ঠের এই গান স্বার্থক। আহা! কি অপরুপ দৃশ্য! সাগরের উত্তাল গর্জন। সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে স‚র্যাস্তের দৃশ্য! প্রাণ জুড়িয়ে যায়!
হ্যা, আমি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কথাই বলছি। বিধাতা যেন বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন কক্সবাজারের সাগর তীরে বালুর আঁচলে। সাগরের পানির উত্তাল গর্জন। বালুচড়ে লাল রঙের রাজ কাকড়া। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক-ঝিনুক এবং নানা প্রজাতির প্রবাল। একদিকে সাগর, অন্যদিকে পাহাড়! কবির ভাষায় ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী/ ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি’। চোখ মুজলেই তৃতীয় নয়নে ভেসে ওঠে সারি সারি ঝাউবন, বালিকা মাদরাসা পয়েন্ট, লাবনী পয়েন্ট, সী ইন পয়েন্ট, কলাবতী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, এবং ডায়বেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট আর বিস্তীর্ণ বেলাভ‚মি।
আল্লাহর অপার দান সেই পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে অব্যাহত ভাঙ্গনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ঢেউয়ের ঝাঁপটায় ক্ষয়ে যাচ্ছে সৈকতের ধবধবে সাদা বালু। পানির ঝাপটায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এই ভাঙ্গনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেলসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে সৈকতে সরেজমিন ঘুরে যায়, সৈকতের নাজিরারটেক থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় সোজা সৈকত এলাকায় বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বালু সরে গেছে। এতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। এই ভাঙ্গনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এই ভাঙ্গনে একদিকে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৃজিত বিস্তীর্ণ ঝাউবাগানের হাজার হাজার ঝাউগাছ। পাশাপাশি সাগরে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সৈকতে নির্মিত বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টিওব দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন মানুষ সমুদ্র সৈকতে যাচ্ছেন। এ সময় দেখা যায় জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা। পর্যটকদের বাধ্য হয়ে রাস্তায় কিংবা একটু উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বিশাল সাদা পানির ঢেউয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাঁপটা ও অব্যাহত বালুক্ষয়ে দীর্ঘ সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঝাউগাছের মূল-শেকড়বাকর। প্রচন্ড ঢেউয়ের ঝাঁপটায় গাছের মূল থেকে বালু সরে যাওয়ায় গাছ উপড়ে পড়েছে সৈকতের বিভিন্নস্থানে। আর ঝাউগাছ গুলো মানুষ কেটে নিয়ে যাচ্ছে যারযার মত করে। হাজার হাজার ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেলেও উপক‚লীয় বন বিভাগের কাছে হিসেব নেই গত কয়েক মাসে কি পরিমাণ ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেল।
ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দক্ষিণ দিক থেকে সৈকতের ভাঙ্গন কবলিত ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার দূরত্ব আটশ থেকে একহাজার মিটারের বেশী হবে না। বিমান বাহিনীর সীমানা প্রাচীর থেকে মাত্র দুই তিন শত মিটার দূরেই সাগর ভাঙ্গছে। এ ছাড়াও সৈকতের এই এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হোটেল শৈবাল, টুরিষ্ট পুলিশের বহুতল নিজস্ব ভবন। একই লাইনে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর রেস্টহাউজ, বিজিবি রেস্টহাউজ ও স¤প্রতি নির্মিত স্টারমানের আরো একটি সুরম্য স্থাপনা জলপরী, পাঁচ তারাকা হোটেল সীগাল ও নির্মানাধীন হোটেল আগ্রাবাদ। ওদিকে কলাতলীতে পাঁচতারাকা হোটেল সাইমান রির্সোটসহ আরো বেশ কিছু হোটেল ও স্থাপনা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বর্ষা মৌসুমে সাগরে পানি বৃদ্ধি পায়। তবে ভাঙ্গন এরকম তীব্র হয় না। আর সৈকতে অতীতে কোন সময় এধরনের ভাঙ্গন দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে কক্সবাজারের বালুকাময় সৈকত কোন ধরনের স্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়। নাজিরারটেক থেকে ইনানী পর্যন্ত বালুকাময় সৈকতে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তাতে সাগর ফুঁসে ওঠে। এরকম অনেক নজির অতীতে দেখা গেছে। স¤প্রতিক সময়ে কক্সবাজার লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত সৈকতের একেবারেই কাছে গড়ে উঠেছে অনেক সুরম্য অট্টালিকা। অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন এই কারণেই সৈকতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রশাসন যন্ত্র এগুলো দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছেন।
ছাড়াও কক্সবাজার সৈকত এবং দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণা করে যে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা। এছাড়াও এই পর্যন্ত এই নিষিদ্ধ এলাকায় যে সকল বহুতল সুরম্য অট্টালিকা নির্মিত হয়েছে এগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। আবার প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাক্তিকে উপরি দিয়ে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সে কারণে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে না।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে আড়াই শত কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্পে ছিল ভেতরের খাল খনন, ভাঙ্গা রিপিয়ারিল, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ। ২০০৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর সেই প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়।
এসডিই তাজুল ইসলাম জানান, গত বছর সৈকতে ভাঙ্গন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নির্দেশে সীমিত আকারে সৈকতের ভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বা ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভাঙ্গন রোধের আওতায় ১৫ /১৬ মিটার এলাকায় জিও টিউব দিয়ে দুই কোটি টাকার অস্থায়ী মেরামত কাজ চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, সৈকতের এই ভাঙ্গন আশঙ্কাজনক। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়াও সেনাবাহিনী হিমছড়ি এলাকায় ট্রিট্টা ব্যবহার করে ভাঙ্গন রোধে সফল হয়েছেন। এখানেও ট্রিট্টা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে পর্যটন শিল্প হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। কার্যত শতাব্দীর সেরা এবং বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প হলো পর্যটন। এ শিল্পে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বাদ দিয়ে দেশের পযর্টন শিল্পের উন্নয়ন কল্পনাই করা যায় না। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শুধু চিত্ত বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র নয়; বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর স্থান বটে। সরকার কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে রেল লাইন করার পরিকল্পনা করেছে। অথচ সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা সমুদ্র সৈকত হুমকির মুখে।
দেশের জাতীয় উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে রক্ষা করতে হবে। স্থানীয়রা বলছেন, সমুদ্র সৈকতে নানা কাজে হাজার হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। সমুদ্র সৈকত ধ্বংস হলে দেশের পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের জীবনের বিপর্যয় নেমে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।