Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একদিনে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৫ দোকান নদীগর্ভে বিলীন

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৬ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর-রামগতি মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার লুধুয়া বাঘারহাট এলাকায় ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৫টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। থেমে থমে ভাংগনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।নদীর পাড়ের আহাজারিতে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে।ভাংগনের মাত্রা এতোই বেশী যে,মুহূর্তের মধ্যে মানুষর ঘর বাড়ী স্কুল সরকারী-বেসরকারী স্হাপনা তলিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে লুধুয়া বাঘারহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা ভাঙন আতঙ্কে দোকানঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লুধুয়া বাঘারহাট এলাকার প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় মেঘনার তাণ্ডবলীলা চলছে। ভয়াবহ এ ভাঙনে বাজারের এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে; বিলীনের পথে বাকি অংশটুকুও। আকস্মিক এ ভাঙনে বিলীন হয়েছে মাত্র এক বছর আগে স্থানান্তর করা চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষগুলোও। এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে ভাঙন দেখা দেয়। পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে ব্যবসায়ীরা দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু ভাঙনের তীব্রতা এতোই বেশি ছিলো যে, চোখের পলকেই দোকানগুলো নদীগর্ভে চলে যেতে থাকে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ভাঙনে অন্তত ২৫টি দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে বাজারের আরও শতাধিক দোকানঘর।

চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সহিদ সুমন জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুটি দ্বিতল ভবনসহ ওই বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পাঠদান চালিয়ে নিতে লুধুয়া বাঘারহাট বাজারের পশ্চিম মাথায় সরকারি শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করে তারা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের আকস্মিক ভাঙনে সেটিও নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টি অন্য এলাকায় স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।

লুধুয়া বাঘারহাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মোশারেফ হোসেন বাঘা জানান, ২০১৭ সালে ভাঙনের মুখে পড়লে বাজারটি বর্তমান জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বাজারটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে বাজারটি রক্ষায় উদ্যোগ নেন। কিন্তু আকস্মিক ভয়াবহ ভাঙনে দোকনঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাজারের এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন বাকি অংশটুকুও বিলীন হওয়ার পথে। যে কারণে বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙনের তীব্রতা ঠেকাতে লুধুয়া বাঘারহাট এলাকায় জিও ব্যাগে পাঁচটি অস্থায়ী স্পার নির্মাণ করা হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনে সেগুলো ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগে সেখানে আরও একটি অস্থায়ী স্পার নির্মাণ করা হবে।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, মেঘনার ভাঙনরোধে কমলনগর উপজেলাকে রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের নতুন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙ্গন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ