পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগর। ভারত মহাসাগরের উপসাগর। এর সাথে লাগোয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা পর্যন্ত বাংলাদেশের দক্ষিণভাগে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলভাগ। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। বিস্তীর্ণ উপক‚লের দিকে যেন রুদ্র-রোষে ধেয়ে আসছে উত্তাল সমুদ্র। প্রতিনিয়ত ফুলছে-ফুঁসছে বঙ্গোপসাগর। এর কারণ জলবাছু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর প্রভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা (এসএলআর)। স্থলভাগ গ্রাস করার দুর্যোগ। এই সঙ্কট বৈশ্বিক। যার দায় প্রাকৃতিক এবং মানুষের সৃষ্ট কার্য-কারণসমূহের মিলিত ফলাফল। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তালিকায় উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি গালগল্প নয়। এটি নীরবে চলমান, ভয়াবহ বাস্তবতা। ঘটছে ধীর প্রক্রিয়ায়। দীর্ঘ সময়ের ভূ-উপগ্রহচিত্র, ভিডিওচিত্র, আলোকচিত্রসহ বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে এর সত্যতা প্রমাণিত। যেমন- আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দিনের সর্বোচ্চ এবং রাতের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত আগস্টেও (শ্রাবণ-ভাদ্র) দেশে গড় সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ এবং শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঊর্ধ্বে ছিল। জুলাইয়ে (আষাঢ়-শ্রাবণ) গড় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সে. এবং শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল।
অন্যদিকে সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের (এসএমআরসি) গবেষণা বলছে, ‘হিরণ পয়েন্ট’ (খুলনার কাছে), চর চাঙ্গা এবং কক্সবাজারে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির স্তর প্রতিবছর যথাক্রমে ৪ মিলিমিটার, ৬ মিলিমিটার এবং ৭.৮ মিলিমিটার হারে বেড়েই চলেছে। অস্বাভাবিক উঁচু জোয়ার হলেই কক্সবাজার জেলায় একশ’রও বেশি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। সামুদ্রিক জোয়ারের পানি থৈ থৈ করছে বন্দরনগরীর ‘নাভি’ আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় এমনকি সেখানে সুরম্য ভবন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দোরগোড়ায়। যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রমাণ।
তাছাড়া একই কারণে বেড়ে চলেছে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, লঘুচাপ-নিম্নচাপ, গুমোট আবহাওয়া, টর্নেডো, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, খরা, তাপদাহ, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, পানিবদ্ধতা, লোনা ও আর্সেনিকের আগ্রাসনসহ বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাক। জনস্বাস্থ্য এবং মানুষের উৎপাদনশীলতার উপরও পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব।
জলবাছু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থার (আইপিসিসি) গবেষণায় বলা হচ্ছে, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সারাবিশে^র ভাটি বা নিম্নাঞ্চলের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার অন্যতম বাংলাদেশ। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার (তিন ফুট এবং ৩ দশমিক ৩৭ ইঞ্চি) ধারাবাহিকভাবে বাড়লে বাংলাদেশের ১৭ থেকে ২০ ভাগ স্থলভূমি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে। জলবাছু পরিবর্তনের উপর প্রণীত বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলনীতি অনুসারে, এরফলে আড়াই কোটি মানুষ জলবাছু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। অবশ্য ভিন্ন এক গবেষণা মতে, এ সংখ্যা ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ দক্ষিণে সাগরবিধৌত। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠি হবে ভূমিহীন ও উদ্বাস্তু। জনসংখ্যার ঘনত্ব আরও বাড়বে। মাথাপিছু সম্পদ ও কৃষিজমি কমবে।
নাসা’র গবেষণায় জানানো হয়, আগামী একশ’ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সমুদ্রে ডুবে এমনকি বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিপুল জনসংখ্যা অথচ সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবাছু-উদ্বাস্তু সঙ্কট মোকাবেলা, তাদের ঠাঁই দেয়াই হবে কঠিন।
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, জলবাছু পরিবর্তন, উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যেসব নেতিবাচক প্রভাব সারাবিশ্বে পড়বে, তার সবকিছুই বাংলাদেশে হবে প্রকট। এরজন্য প্রকৃতির চেয়ে মানুষের দায় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বসহ উন্নত দেশগুলোতে আধুনিক জীবনযাপনের জন্য অতিমাত্রায় জ্বালানি পোড়ানো ও কার্বন নিঃসরণসহ বহুবিধ কর্মকান্ডে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শুরুর দিকে (মার্চ-এপ্রিল-মে) বিশে^ অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। তখন জ্বালানি ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ অনেক হ্রাস পায়। পরিবেশ-প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচার কমে। কিন্তু বর্তমানে তা আবার বেড়ে গেছে। বাড়ছে মেরুঅঞ্চল ও পর্বতচূড়ায় বরফ গলন। বিজ্ঞানের সূত্র মেনে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে পানির আয়তনও।
এসব প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, জলবাছু পরিবর্তনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দ্রুত বরফ গলছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। উপকূলীয় ও নিচু এলাকাগুলো জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। উপকূলবাসী হারাচ্ছে বসতভিটা। লোনা পানির কবলে উপক‚লীয় বনাঞ্চল কমছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নতুন নতুন ভাইরাস ও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে। পুরনো রোগব্যাধির ব্যাপ্তি বাড়ছে এবং রোগের প্যাটার্ন বদলে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিক ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাড়ছে অস্থিরতা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (চুয়েট) জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক বলেন, এরফলে পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের জীবনধারণ হুমকির মুখে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপসহ দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতি হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ^দ্যিালয় সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এরফলে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অনেক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। উপক‚লীয় বসতভিটা, ফসলি জমি গিলছে সমুদ্র। অক্সিজেন ঘাটতির কারণে সমুদ্রের মৎস্যসহ প্রাণিজগত বিপন্ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজারো প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। প্রকৃতিরাজ্যে আল্লাহ কোনো প্রাণীকে বিনাপ্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, পরিবেশ-প্রকৃতি পরস্পর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।