Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ ট্র্র্যোজেডি : নেই আজানের ধ্বনি আছে শুধু বুক চাাপড়ানো মাতম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৬ পিএম

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদ। গত সাতদিন ধরে মসজিদটিতে নামাজ হচ্ছে না। মুসল্লিদের আনাগোনাও নেই। তবে দিনের অধিকাংশ সময় উকি-ঝুঁকি দিয়ে মসজিদের ভেতর কিছু দেখার চেষ্টা করছেন উৎসুক মানুষ। আর আছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার লোকজনের আসা-যাওয়া। শোকের ছায়া মসজিদ ঘিরে আশপাশের পুরো এলাকা। অথচ সাতদিন আগেও মসজিদটি সরগরম ছিল মুসল্লিদের পদচারনায়। গত আড়াইযুগেরও বেশী সময় ধরে মুসল্লিরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ৪ সেপ্টম্বর শুক্রবার ফযর, জুম্মা, আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেছে নিয়মিত মুসল্লিরা। কিন্তু কে জানতো এশার নামাজই তাদের জীবনের শেষ নামাজ। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। সেদিন এশার নামাজের ওয়াক্তে মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনের সুমধুর কন্ঠে আজান শুনে মসজিদে আসতে শুরু করে মুসল্লিরা। ইমাম আব্দুল মালেক আনসারীও ইমামতি করার জন্য মসজিদে আসেন। যথারীতি নামাজ শুরু হয়। জামাত শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন ইমাম। এরপর সুন্নাত ও বেতর পড়াকালীন আকষ্মিক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদের ভেতর। আগুনের কুন্ডলীতে ঝলসে যায় ৩৭ মুসল্লি। রক্ষা পায়নি দুই পথচারী সালমা বেগম ও মামুন। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বরের) পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেছে ৩১ মুসল্লি। চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৭ জন। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।
এমন ভয়াবহ ঘটনার পর সেই মসজিদের নামাজ বন্ধ রয়েছে। মসজিদের মাইক থেকেও ভেসে আসেনি মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনের কণ্ঠে আজানের ধ্বনি। ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেকের বয়ানের দৃঢ় আওয়াজ আর সুমধুর কণ্ঠের তেলাওয়াতও শুনতে পাননি কেউ। কোনো কোনো বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে বুক কাঁপানো কান্নার শব্দ। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদে তালা লাগানো। উৎসুক মানুষ মসজিদের ভেতর উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।
এদিকে শনিবরি সকাল থেকে বিকাল অবধি এ ঘটনায় নিযুক্ত তদন্ত দলের সিআইডির ছাড়া তিতাস, ডিপিডিসিসহ কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে মহল্লার মুসল্লিরা গিয়েছিলেন আশপাশের মসজিদগুলোতে। কিন্তু সেই মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে এ সময় কাঁদতে দেখা গেছে অনেককেই।
মসজিদের পাশে বসবাসরত আব্দুল মালেক জানান, এক সপ্তাহ ধরেই মসজিদে আজান ও নামাজ বন্ধ রয়েছে। জুম্মার নামাজের আগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম কিন্তু তা হয়নি। আশা করি আগামী জুম্মার নামাজ এখানে আদায় করা যাবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, ক্রাইমসিন থাকায় এখানে এখনও অনেক আলামত আছে। তাই এখানে সবার প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে মসজিদ খুলে দেয়া হবে।
ওদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের রূহের আত্মার মাগফিরাত ও আহত চিকিৎসাধীনদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় জেলার সব মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরনের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা মামলাটি বুধবার রাতে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে তারা মামলাটির তদন্ত করছে। এছাড়া তিতাসের তদন্ত কমিটির মসজিদের সিঁড়ির সন্নিকটে গ্যাস লাইনে ৬টি লিকেজ চিহ্নিত করে। এবং তারা গণমাধ্যমকে জানায় এই লিকেজ থেকে মসজিদে গ্যাস ঢুকেছে। পরে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু মুসল্লি ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ তিতাসের উপর। কারণ মসজিদের ভেতর গ্যাসের অস্তিত্ব উপলব্দি করে গ্যাস লাইনের সংস্কারের জন্য মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর জানিয়েছিলেন, তিতাস ৫০ টাকা ঘুষ দাবি করে। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে টাকা না থাকায় তারা টাকা দিতে পারেননি। টাকা যোগাড় করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তিতাসের তদন্ত কমিটি দাবী করেছে আব্দুল গফুর ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে কোন প্রমান দিতে পারেনি। কিন্তু আব্দুল গফুর বলেছেন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক দোলোয়ার হাসেন তাদের জানিয়েছিলেন তিতাসের লোকজন লিকেজ সংষ্কারের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি প্রমান হওয়ার আগেই দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুর সাথে লড়ে বুধবার মারা যান। ফলে কোন প্রমানই আর থাকলো না। এতে নিরাপদে চলে গেছে তিতাস। আর সকল দোষ মসজিদ কমিটির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
মুসল্লি ও এলাকাবাসী বলছেন, তিতাসের কথামতো মসজিদের সিঁড়ির একটি কলাম তাদের গ্যাসের পাইপের উপর পড়েছে। কিন্তু মসজিদ তো আর পাইপের উপর নির্মিত হয়নি। এমন হাজারো প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি আছে যেগুলো তিতাসের পাইপের উপর নির্মিত। তাই বলে মসজিদের সিঁড়ির একটি কলামকে ঘিরে তিতাস তাদের দায় এড়াতে পারে না। দুর্ঘটনার জন্য তিতাসই দায়ী। তারা যদি গ্যাসের লিকেজ সংষ্কার করতো তাহলে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগামীতে আরও হবে। কিন্তু তিতাস কি দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী প্রদক্ষেপ নিচ্ছে? নিচ্ছে না।
যদিও সারা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে ঘুষ ছাড়া তিতাসের লোকের সন্ধান পাওয়া যায় না। পুরো জেলায় শত শত গ্যাসের লিকেজ এবং অবৈদ সংযোগের ছড়াছড়ি। বৃষ্টি হলেই লিকেজগুলোর প্রমান দৃশ্যমান হয়। কিন্তু তিতাসের চোখে তা দৃশ্যমান হয় না। কারণ টাকা ছাড়া তারা এক পা বাড়ায় না।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৫ পিএম says : 0
    মসজিদের বিতরে গ‍্যাসের লাইন ছিল তিতাস জানতো ঐ লাইন চিদ্রছিল গাস বাহির হচ্ছে মসজিদের বিতরে এটি তিতাস জানতেন। এটি একদিনের ঘটনা নয় বসরের বসর তিতাস গ‍্যাসের লিকেজ বা পাইন লাইন চিদ্রদিয়ে মসজিদে তিতাসের গাস লিকেজের সমাস‍্যা। মসজিদের পরিচালকরা সাধারণ নামাজিদের গ‍্যাস চেম্বারের বিতরে নামাজ পড়াচ্ছিলেন। তাদের কাছে এই রকম ভয়ংকর দূর্ঘটনায় মানুষের জীবন খানি হবে ধারণা ছিল না। গ‍্যাস চিদ্র হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবেন তাহাদের নামাজিদের ধারণা ছিল না। যদি ধারণা থাকতো জানতে পারতেন এতগুলো মানুষ নিজের জীবন দিতে মসজিদে যেতেন না। এটি মসজিদ কমিটি মুসল্লিদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ মতামত হতে পারেন। তিতাসের গ‍্যাস দূর্ঘটনা লিকেজতো নতুন বিষয় নয়। দৃন্নীতি টাকা ছাড়া কাজ করতে জানে না তিতাস। মসজিদ হোক আল্লাহর ঘর হোক। তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারী উচচ প্রদস্ত কর্মকর্তা তাহাদের অবশ্যই জানা আছে। জানেন বুঝেন গ‍্যাস লিকেজ হলে কি কি দূর্ঘটনা হতে পারে মানুষের জান মালের কি পরিমাণ খতি হতে পারেন। আরো অনেক বিজ্ঞান সম্মত যুক্তি দিতে পারি। তিতাস এই ভয়ংকর প্রানখানী দূর্ঘটনার জন‍্য দায়ী। আমি জাতীয় পত্রিকা ইনকিলাবের গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় মতামতের কলামে আল্লাহর ঘরের নামাজ রত অবস্থায় ভয়াবহ যন্ত্রণা আগুনে পড়া মৃত্যু বরণকারী মানুষ গুলোকে রাষ্ট্রিয় ভাবে শহীদি মর্যাদার সরকারের কাছে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী কাছে ফরিয়াদীর মত শহীদ হওয়া পরিবারের নিকট নগদ অর্থ প্রদানের জন্যে আহবান জানিয়েছিল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাননীয় প্রধান নিকট এতবড় দূর্ঘটনা মৃত্যু পরবর্তীকালে করণীয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্তরা এই বিষয়ে উপযুক্ত ভাবে জানানো হয়নি রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান কে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে ঘটনা পরিপূর্ণ জানানো হয়নি। ইত্যাদি ইত্যাদি। মহামান হাইকোর্টের রুল প্রতি প্রতি পরিবার কেন পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দেওয়া হবেনা রূল জারি আছে। পাছলক্ষ টাকা দিতে বলেছেন পরিবারের প্রতি। বিভিন্ন দল মতের মানুষ কেন দাবী জানাতে হবে গুরুত্বপূর্ণ এই আল্লাহর সম্মানিত মর্যাদাবান আল্লাহর ঘরের মেহমানের খতি পুরণের টাকার জন্যে। নিশ্চিতরূপে রুপে বলতে পারি এই ভাগ‍্যবান মানুষ গুলো শহীদ। এরা আল্লাহর ঘরে আল্লাহ্ কে সেজদা দিতে নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। আল্লাহ্ আমাদের সবাই সত‍্য বলার বুঝার তৌফিক দাও। আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদে বিস্ফোরণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ