Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বসিয়ে রাখতে হবে কমিশনিং জটিলতায়

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে ১০টি নতুন ইঞ্জিন আসেননি প্রকৌশলীরা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

রেলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে ১০টি নতুন লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। এক দশক পর মিটার গেজের জন্য নতুন ইঞ্জিন আনা হলেও করোনায় কমিশনিং করা যাচ্ছে না। এ কারণে ইঞ্জিনগুলোকে বসিয়ে রাখতে হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, কভিড-১৯ এর কারণে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। চুৃক্তি অনুযায়ী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরাই ইঞ্জিনগুলো কমিশনিং করবেন। এ কারণে আমদানি শেষে রেলের কাছে হস্তান্তর হলেও ইঞ্জিনগুলোর ব্যবহারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ইঞ্জিন সংকটে ভুগছে রেলওয়ে। পূর্বাঞ্চলে ১৪৪টি ইঞ্জিন থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ১২১টি। প্রতিদিন ১১০ থেকে ১১৬টি ইঞ্জিনের চাহিদা থাকলেও চলাচলের যোগ্য মাত্র ১০০ থেকে ১০৫টি ইঞ্জিন। এতে চাহিদার চেয়েও কম ইঞ্জিন নিয়ে রেলসেবা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। এজন্য দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সঙ্গে ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ আমদানি চুক্তি করে রেলওয়ে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ মে ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ সরবরাহে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা ইঞ্জিনগুলো চুক্তির ২৪ মাসের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান কভিড-১৯-এর কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে পৌঁছতে। এ চুক্তির আওতায়ই ১ ও ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজ থেকে ইঞ্জিনগুলো খালাস হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইঞ্জিনগুলো বুঝে নেন। আমদানি করা এসব ইঞ্জিনের প্রতিটির ওজন ৯০ টন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জাহাজে বোঝাইয়ের সময় হুন্দাই রোটেম কোম্পানির দুজন কর্মী লোকোমোটিভ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোকোমোটিভের কমিশনিং করে রেলের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগকে বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু হুন্দাই রোটেম কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকৌশলী পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় লোকোমোটিভগুলোর কমিশনিং দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
জানা গেছে, রেলের এর আগে তুলনামূলক ভালোমানের ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন প্রায় ৭০ টন। রেলের বহরে থাকা মেইল লাইনে চলমান ২৬০০, ২৭০০ ও ২৯০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো ১৫০০ হর্স পাওয়ারের। এসব ইঞ্জিন গড়ে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে চলাচল করতে পারে। অন্যদিকে নতুন আমদানি করা ইঞ্জিনগুলো ২২০০ হর্স পাওয়ারের। নতুন এ ইঞ্জিনগুলোর সিরিজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০০।
এ সিরিজের নতুন এ ১০টি ইঞ্জিন ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে চলাচল করতে পারবে। প্রতিটি ইঞ্জিন গড়ে ৩০-৩৫টি কোচ যাত্রীসহ সর্বোচ্চ গতিতে চলাচল করতে সক্ষম। নতুন ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হলে ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের সময়সীমা আগের তুলনায় আরো কমবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্বশেষ মিটার গেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) আমদানি করে ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে। নিয়মিত ইঞ্জিন ফেইলিউরের কারণে ভুগতে থাকা রেলওয়ে চাইছে দ্রæত সময়ের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো দিয়ে ট্রেন চালাতে। কিন্তু কমিশনিং ও ট্রায়াল রান না হলে এসব ইঞ্জিন বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
রেলের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে কমিশনিং ও ট্রায়াল রান শেষে ইঞ্জিনগুলো সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে রেলের বহরে যুক্ত করা যেত। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কমিশনিং কাজের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আপাতত আসতে না পারায় কবে ইঞ্জিনগুলো রেলের বহরে যুক্ত হবে তা প্রায় অনিশ্চিত।
কমিশনিং জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (প্রকল্প) ও লোকোমোটিভ আমদানি প্রকল্পের পরিচালক মো. নূর আহমেদ হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে চুক্তি হওয়ার পর ১০টি লোকোমোটিভ এসেছে। সরবরাহ কোম্পানির প্রকৌশলী ছাড়া কমিশনিং করা যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে কমিশনিং শেষে ট্রায়াল রানের মাধ্যমে রেলের বহরে যুক্ত করতে।
রেলের প্রকৌশল বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়ার একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা নয়টি ইঞ্জিন ২০১১ সালে রেলের বহরে যুক্ত হয়। ২১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা ইঞ্জিনের প্রথম চারটির চালান বাংলাদেশে আসে ২০১১ সালের ২ আগস্ট। এরপর একই বছরের অক্টোবরে বাকি পাঁচটি ইঞ্জিন বাংলাদেশে আসে।

 



 

Show all comments
  • হিমেল ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৮ এএম says : 0
    ইঞ্জিনগুলো দেখতে অনেক সুন্দর।
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৯ এএম says : 0
    কমিশনিং জটিলতা দূর করে সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩০ এএম says : 0
    নতুন ইঞ্জিনগুলা অবশ্যিই ভালো হবে। শুধু সংরক্ষণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩১ এএম says : 0
    নিতুন ইঞ্জিনের জন্য শুভ কামনা রইলো।
    Total Reply(0) Reply
  • পারিশা আক্তার জুই ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩১ এএম says : 0
    জটিলতা কাটিয়ে উঠা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Morshed Hridoy ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪৬ এএম says : 0
    আশা করি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এই জটিলতা দূর হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ