পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির মধ্যদিয়ে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। সময় থাকতে জীবনকে মূল্যায়ন করা জরুরি। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের ব্যাপক তাগিদ দিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
ঢাকা ডেমরার ঐতিহাসিক দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, সময় থাকতে জীবনকে মূল্যায়ণ করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের আগে মূল্যায়ণ করো। জীবনকে মৃত্যু আসার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে, যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং সচ্ছলতাকে দারিদ্রতা আসার আগে। তাই জীবনের সময়গুলোকে নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির মধ্যদিয়ে কাজে লাগাতে হবে। কোন অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করা কোন বুদ্ধিমান লোকের কাজ হতে পারে না। কারণ দুনিয়ার জিন্দেগি খুবই সংকীর্ণ। কখন শেষ হয়ে যায় তা বলা যায় না। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহদের মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ বলেন যে, মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে মুসল্লিদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন, অনেকে মন খারাপ করেছেন। বিষয়টি এমন নয়; প্রিয় নবী (সা.) বলেন,
মুমিনের শেষ ভালো আমলের মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি খুবই সুন্দর। তাছাড়া রাসুল (সা.) এর বাণী অনুযায়ী যারা আগুনে পুড়ে মারা যায়, তারা শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে। মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়া মৃত্যুবরণকারী শহীদ,অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ,
যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ এবং সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। মুয়াত্তা মালিক যাদের আপনজন শহীদ হয়েছে, তার থেকে উত্তম বিনিময় পাওয়ার জন্য তাদেরকে প্রিয় নবী (সা.) একটি দেয়া করার জন্য নসীহত করেছেন। আল্লাহুম্মা উজিরনী ফি মুসিবাতী, অআখলিফ লী খায়রাম মিনহা।
তিনি খুৎবায়ে আরো বলেন, যাদের দায়িত্বের অবহেলায় এতগুলো মানুষের প্রাণ হানি ঘটেছে, যদি সেটি অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকে ইসলামিক বিচারে এটাকে কতলে খাতা বা কতলে শিবহে খাতা বলা হয়। এর জন্য তাদেরকে দিয়াত দিতে হবে। যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রদান করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে এর সুষ্ঠ তদন্ত এবং প্রচলিত আইনে সুবিচার দাবি করছি। আল্লাহ যেন সকল শহীদ এবং তাদের পরিবারের প্রতি উত্তম বিনিময় দান করেন। আমিন !
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মুহিববুল্লাহ হিল বাকি নদভী বলেন, মানুষ চারটি কারণে কুরআনের হেদায়েত তথা আলোপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। অজ্ঞতা মূর্খতা হেদায়েতের পথে বড় একটি বাধা। এ বাধা অপসারণে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথম অহির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের নিদের্শ দিয়েছেন। যাতে মূর্খতা দূরীভূত হয়। কুরআন চেনা ও বুঝার ব্যাপারে মূর্খতা। লোভ লালসাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে মানুষ কুরআনের হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লোভকে যারা সংবরণ করতে পারে না তারা কুরআনের হেদায়েত ও আলো থেকে বঞ্চিত হবে। পেশ ইমাম নদভী বলেন, অহংকার মানুষের একটি মারাত্মক ব্যাধি। হক ও সত্য বুঝে আসার পরেও অহংকারের কারণে মানুষ হকের পথে আসে না। অন্ধভক্তির কারণেও মানুষ কুরআনের হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআনের নূর দিয়ে জীবনকে আলোকিত করতে চাইলে অজ্ঞতা, লোভ, অহংকার ও অন্ধভক্তি পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করুন।
রাজধানীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী খুৎবা পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, এই পৃথিবীর কোথাও যদি কোন একজন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় আর সেই মজলুম মুসলমানের জন্য আমাদের অন্তরে যদি বিন্দুমাত্রও ব্যাথা অনুভূত না হয় তাহলে এটা ঈমানী আত্মীয়তার উপর চরম অবিচার ছাড়া আর কি হতে পারে? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং রণাঙ্গনে আমার কোন ভাইয়ের পায়ে যদি একটি কাঁটাও বিদ্ধ হয় তাহলে মুসলিম হিসেবে আমার অন্তরেও ঐ কাঁটার যন্ত্রণা অনুভব করা উচিত। পবিত্র কুরআনের অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, যদি তারা (কাফেররা) তাওবা করে, নামজ ক্বায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই। হাদীস শরীফেও এক মুসলমানকে অপর মুসলমানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অতএব কুরআন সুন্নাহ ঘোষিত এই আত্মীয়তার স্বার্থেই নির্যাতিত নিপীড়িত কোন মুসলমানের পক্ষে কথা বলা এবং তাকে সাহায্য করা ঈমানী দায়িত্ব। বর্তমান সময়ে এই জায়গাটাতে আমরা পরিতাপের সাথে লক্ষ করছি যে,মজলুমকে সাহায্য করার পরিবর্তে উল্টো জালেমদেরক বন্ধুর আসনে বসানো হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে পৃথিবীতে মহাবিপর্যয় অবধারিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমীন ! ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলা শাহী জামে মসজিদের খতিব মুহাদ্দিস মাওলানা মুসা বিন ইযহার জুমার বয়ানে বলেন, দোয়া একজন মুমিনের জন্য অস্ত্রস্বরূপ। যেকোনো দুর্যোগ বিপদে মুসলমানকে আল্লাহর দরবারে দোয়ায় মগ্ন হতে হয়। মুমিনের যে কোন দোয়াই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করেন। হাদীস শরীফে এসেছে, কোন মুসলমান যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তখন তিনি অবস্থার কোনো একটি অবশ্যই আল্লাহ তাকে দান করেন। দ্রæত তার প্রার্থিত বিষয়ে দান করা হয়। অথবা তার পরিবর্তে অন্য কোন কল্যাণ তাকে দান করা হয় অথবা সেই পরিমাণ কোন অকল্যাণ থেকে তাকে নিরাপদ রাখা হয়। (তিরমিযি)। বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্যোগকালীন সময়ে মুমিন হিসেবে আমাদেরকে বেশি বেশি নেক আমলে মগ্ন থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।