Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামে তিস্তার করাল গ্রাসে এক দশকে শতাধিক গ্রাম বিলীন

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১১ এএম

ভাঙন কবলিত এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন গত কয়েক দশক ধরে তীররক্ষা প্রকল্পের কাজ করলেও সেটা রক্ষা করতে পারছে না তারা। এবারো তীররক্ষায় ডাম্পিং করা হয়েছে শতশত জিও ব্যাগের বালির বস্তা। কিন্তু প্রলয়ংকরি তিস্তার তীব্র স্রোতের ঘূর্ণিপাকে বিলিন হয়ে যাচ্ছে সেসব সাময়িক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা। প্রতিবছর এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা নদীগর্ভে গেলেও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। ভাঙন রক্ষায় কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের কথা গত এক দশক ধরে শোনা গেলেও নানান কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রাজারহাটে বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় শতাধিক গ্রাম।
বর্তমানে এই এলাকায় হুমকীর মুখে রয়েছে স্কুল মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, ৬টি ক্রসবাঁধ, ২টি বেরিবাঁধ, বেশ কয়েকটি হাট-বাজারসহ কয়েক একর ফসলী জমিন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাবুর হেলান, ডাংরারহাট, চতুরা, কালিরহাট ও বুড়িরহাট এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী বাঁধের রাস্তায় কিংবা উঁচুস্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে তিনদফা বন্যা ও তিস্তার প্রবল ভাঙনে অর্ধশত ঘর-বাড়িসহ ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে ভাঙন কবলিত ভূক্তভোগী পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেছেন নদী পাড়ের মানুষ।
তিস্তা পাড়ের মানুষের আহাজারি ‘বাহে হামারগুলার মাঠ ভরা ফসল, গোয়ালভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ আছিল। সগে তিস্তা নদী গিলি খাইছে। এ্যালা আরেকজনের ভিটাবাড়িত আশ্রয় নিছি। সেটেও ভাঙবের ধরছে। এ্যালা হামরা যামো কোটে।’ এমন আর্তনাদের স্বরে নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরলেন তিস্তা পাড়ের ভাঙন কবলিত তৈয়ব আলী (৭০), চাঁন মিয়া (৬৬) ও আবুল হোসেন (৬৭)। সকলের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুর হেলান এলাকায়।
ভাঙন কবলিত এলাকার গাবুর হেলান গ্রামের আইজার আলী (৫৬), আব্দুল হানিফ (৬৫) ও আব্দুল মান্নান (৬০) জানান, সরকারিভাবে যে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমাদের কিছুই হয়না। আমরা সাহায্য চাইনা, নদী শাসনের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা চাই।
ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দ্দী বাপ্পি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম, তিস্তা নদীরক্ষা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক আলতাফ হোসেন সরকার, বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তাইজুল ইসলামসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সমাধানের আহবান জানান।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ তাইজুল ইসলাম জানান, মানচিত্র থেকে আমার ইউনিয়নের মুল ভুখন্ডের দুইভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে নদী খনন করা হলে ভাঙন রোধ কমে যাবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান. সরকার তিস্তা নদী তীরবর্তী ৪টি জেলা যথাক্রমে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার কিছু অংশ নিয়ে চায়না সরকারের পাওয়ার চায়না কোম্পানীর সাথে ২০১৯ সালে একটি চুক্তি করেছে। এতে পারমানেন্টভাবে নদী শাসন ব্যবস্থাপনা থাকবে। বিষয়টি স্টাডি হয়েছে। লোন স্যাংশন হয়েছে। বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৮ হাজার ২শ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হলে তিস্তা পাড়ের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। এটি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙ্গন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ