পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ থেকে শুরু করে ভাতের হোটেল, মুরগির খামার, ময়লার ভাগাড় থেকে ঘোড়ার আস্তাবল সবই আছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা গাড়ি রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। আছে মাদকাসক্তদের আড্ডা ও মাদক বেচাকেনার জন্য নিরিবিলি স্থানও। মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচেও লোহার বেরিকেড দেয়া অংশ এখন মাদকাসক্তদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দিনে দুপুরে তারা সেখানে বসে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। শুধু মাদক সেবন নয়, রাতে কোনো কোনো স্থানে পতিতাদের আড্ডাও জমে। কুড়িল ফ্লাইওভারের আশপাশে চোর ছিনতাইকারীদের আড্ডা, আছে মাদকের আখড়াও। ৬টি ফ্লাইওভারের মধ্যে চারটিতে রাতে ঠিকমতো বাতি জ্বলে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
বিগত সাড়ে আট বছরে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার হাজার ১৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। অব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ফ্লাইওভারের উপরেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। আর নিচের রাস্তাসহ পুরো এলাকা বেদখল হয়ে গেছে।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়। চার লেনবিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারটি শনির আখড়া থেকে বকশীবাজার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইওভারের নিচে উঁচু বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা ছিল মূল নকশায়। সেখানে ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও ছিল। সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বরং ফ্লাইওভারের নিচে এখন শতাধিক অস্থায়ী দোকান, ভাতের হোটেল। জায়গায় জায়গায় আবর্জনার ঢিবি। শনির আখড়া-যাত্রাবাড়ী অংশ ফলের দোকান, রিকশাভ্যানের স্ট্যান্ড, চায়ের দোকান, রুমাল-টুপির দোকানের দখলে। পুরোনো প্যাকিং বাক্স, ডাবের খোসা, পলিথিনের স্তর ঢেকে ফেলেছে নিচের বিভাজকের মেঝে।
টিকাটুলীর রাজধানী মার্কেট এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কাপ্তান বাজার অংশে মুরগির খাঁচা ও বর্জ্যের কারণে দুর্গন্ধে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাই দায়। গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া অংশে ফ্লাইওভারকে ছাদ বানিয়ে জুতার দোকান, ফলের দোকান, ভাতের হোটেল বসানো হয়েছে। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ফ্লাইওভারের নিচে বাসচালকদের ক্লাবঘরও গড়ে উঠেছে। বঙ্গবাজার থেকে নিমতলী গেটের আগ পর্যন্ত ঘোড়ার আস্তাবল আর ময়লার ভাগাড়। ঘোড়ার বিষ্ঠা আর পাশের মুরগির বাজারের বর্জ্যে প্রচন্ড দুর্গন্ধ।
সরেজমিনে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা গেল কুতুবখালি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে রিকশার গ্যারেজ বানানো হয়েছে। ধোলাইপাড় অংশে বিশাল স্থানজুড়ে বাস রাখার জায়গা বানানো হয়েছে। টিকাটুলিতে ফ্লাইওভারের নিচেই রাখা হয় ছোট ছোট ট্রাক। বড় বাসও থাকে এক পাশে। রাস্তা দখল করে বাস, ট্রাক রাখার জন্য ভাড়া দিতে হয়। পুলিশের হয়ে স্থানীয় মাস্তানরা এসব ভাড়া তোলে বলে জানান বাস চালক আরমান আলী। যাত্রাবাড়ীতে রিকশার গ্যারেজ থেকে টাকা তোলে শরীফ ও নান্টু। গাড়ি থেকে টাকা তোলে জমসের।
ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচল করেন ডেমরার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ময়লা আবর্জনার গন্ধে নিচ দিয়ে চলাই যায় না। সবাই ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা ফেলে। কিন্তু কেউ পরিস্কার করে বলে মনে হয় না। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বাস মালিক শাহাদত হোসেন বলেন, সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ের কাছেই ফ্লাইওভারের নিচে মাদকাসক্ত ও ভবঘুরেদের আড্ডা চলে। প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা চলে। রাতে নিচ দিয়ে চলতে গেলে গা ছম ছম করে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্মত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ইনকিলাবকে বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এখন থেকে কাউকে আর নিচের রাস্তা দখল করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, নগর ভবনের আশেপাশে ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে দখলদারমুক্ত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তা দখলমুক্ত করে নতুনভাবে সাজানো হবে। প্রয়োজনে পার্কিং তৈরী করে গাড়ি রাখার সুযোগ দেয়া হবে কিন্তু কেউ দখলে রাখতে পারবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ভুক্তভোগিরা। এ প্রসঙ্গে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভাঙছে আর আমাদের দেশে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফ্লাইওভারগুলো গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় বাগান, বসার জায়গার জন্য ব্যবস্থা ছাড়াও নানারকম নান্দনিক স্থাপনার পরিকল্পনা ছিল। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ফাঁকা জায়গাগুলো গিলে খাচ্ছে দখলদাররা। যদিও এরই মধ্যে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় খালি জায়গায় বাগান বানিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। এতদিন ওই স্থানটি ছিল দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন। কারণ ফাঁকা পেয়ে সেখানে মানুষ মলমুত্র ত্যাগ করতো। এখন বাগান করায় ওই স্থানটি হয়েছে সবচেয়ে সুন্দর।
অন্যদিকে, রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, গাড়ির গ্যারেজ, কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। এখনও ফ্লাইওভারের উপরে সিগন্যালের লাইট ও সড়কবাতি ঠিকমতো না জ্বলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ টেম্পোস্ট্যান্ড। মালিবাগ রেলগেট ও রাজারবাগে সোহাগ ও গ্রিনলাইন কাউন্টার ঘিরে তৈরি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া মগবাজার রেলগেটে ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মোটরসাইকেলের গ্যারেজ। ফ্লাইওভারের মালিবাগ ও মগবাজার অংশের নিচে লোহার ব্যারিকেডের মধ্যেই নিরিবিলি আড্ডা ও মাদকের কারবারের স্পট বানিয়ে ফেলেছে মাদকাসক্তরা। দিনে প্রকাশ্যে এসব স্পটে মাদকের বেচাকেনা চলে। রাতে বসে পতিতাদের হাট।
এফডিসির কর্মচারি রাশেদ বলেন, মাধে মধ্যেই তিনি কাজ শেষে গভীর রাতে এফডিসি থেকে ফেরেন। তখন চোখে পড়ে পতিতাদের আনাগোনা। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের ব্যারিকেডের ভিতরেই পলিথিন দিয়ে ঘরের মতো আস্তানা তৈরী করে রেখেছে পতিতারা। এ ছাড়া মাদকের কারবার তো আছেই।
রমনা থানা পুলিশ জানায়, মাঝে মধ্যেই ফ্লাইওভারের ব্যারিকেডের ভিতরে অভিযান চালিয়ে মাদকাসক্তদের উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের পর আবার তারা আসে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ইনকিলাবকে বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের অংশ বেরা বা ব্যারিকেড না দিয়ে উন্মুক্ত রাখলেই ভালো থাকতো। খোলা রেখে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা যেতো। তিনি বলেন, পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তা, ফুটপাতে অথবা এর আশেপাশে মাদকাসক্তরা যাতে সমবেত হতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ফ্লাইওভারের নিচের অংশে মাদকাসক্তরা বসে থাকবে বা আড্ডা দিবে এটা পথচারীদের জন্য নিরাপদ নয়। কারণ মাদকাসক্তরা তাদের চাহিদা পূরণের জন্য ছিনতাই করে। এটা জানার পর একজন পথচারী মাদকাসক্তদের কাছে দিয়ে যেতে ভয় পাবে-এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে ও এর আশেপাশে রয়েছে মাদকাসক্ত ও চোর ছিনতাইকারীদের আস্তানা। বিশেষ করে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে যারা ছিনতাই করে বা পকেটমারে তাদের আড্ডার স্থল কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।