পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হলেও হাসপাতালে আয়েশী জীবন কাটাচ্ছেন অন্তত ৮০ জন আসামি। তারা হাসপাতালে আছেন অনেকটা ভিআইপি মর্যাদায়। কারও বাসা থেকে স্ত্রীর রান্না করা খাবার আসছে কারও ‘বাইরে থেকে’ আসছে ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র। কেউ কেউ হাসপাতালে থেকেই টেলিফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারাগারের বাইরের লোকদের সঙ্গে রক্ষা করছেন স্বাভাবিক যোগাযোগ। চালাচ্ছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার। সময় কাটাচ্ছেন স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খোশ গল্প করে।
কারাগার থেকে বারবার তাগিদ এলেও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের ‘ছাড়পত্র’ না পাওয়ায় তাদের কারাগারে নেয়া যাচ্ছে না। তবে এ ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আভাস পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নানা অসুখের মিথ্যা তথ্য দিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা আসামিরা প্রত্যেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন দায়েরকৃত মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগই হচ্ছে তারা দুর্নীতিবাজ। অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা নামে-বেনামে অর্জন করেছেন বিপুল অংকের অবৈধ সম্পদ। এ অবৈধ অর্থ-সম্পদ তারা ব্যয় করেন বন্দি থেকেও আয়েশী জীবন যাপনের পেছনে।
কারাগারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারি, এমনকি কারা হাসপাতাল এবং কারাগারের বাইরে হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে চিকিৎসার নামে কারাগারের বাইরে অবস্থান করছেন তারা। কখনও চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ভিআইপি মর্যাদায়। কারাগারের বাইরে অবস্থানকালে কথিত এই বন্দিদের ওপর নজরদারি ব্যবস্থা যেমন শিথিল, তেমনি ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ও জনবল। অথচ গ্রেফতার এবং কারাগারে প্রেরণের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই দুদকের।
সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, মামলায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলে ওই আসামি কারাবিধির আওতায় চলে যান। সেখানে আসামির অ্যাক্টিভিটিজ কারাবিধি অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দুদকের তেমন কিছু করার নেই বললেই চলে। তবে সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তারাও এর দায় নিতে নারাজ। তারা দায় চাপাচ্ছেন চিকিৎসকদের ওপর।
হাসপাতাল এবং কারাগার সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে অন্তত ৮০ জন দুর্নীতি মামলার আসামি নানা শারীরিক সমস্যা দেখিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনই রয়েছেন ‘ভিআইপি’ সুবিধা নিয়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাকার বাইরে অন্তত ৬০ আসামি অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তাদের চিকিৎসা কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না। আলোচিত আসামিদের মধ্যে ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেফতার হওয়া ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, জিকে শামীম, ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীন রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। এদের মধ্যে সম্রাট বসবাস করছেন হাসপাতালের একটি কেবিনে। জিকে শামীম এবং রফিকুল আমীন আছেন একই হাসপাতালের প্রিজন সেলে।
মাজহার আলী শ্রাবণ নামে আরেকজন আসামি রয়েছেন প্রিজন সেলে। সোহাগ হোসেন ও মিলন নামের দু’জন আসামি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। শহিদুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম মুন্না কাজী ও করিম আকন্দ রয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মনজুর আহমেদ, হারুন ও মালি কান্দা চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন জি কে শামীমের একটি হাত ভাঙা বলে জানা গেছে। তার হাতে মেডিকেল ডিভাইস লাগানো রয়েছে। উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস ও অ্যাজমার সমস্যাও রয়েছে তার। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের প্রিজন সেলে জি কে শামীম সুস্থই রয়েছেন। তার খাবার এবং ওষুধ আসছে হাসপাতালের বাইরে থেকে। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর তিনি নিকেতনের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হন। টানা ৪ মাস তিনি বিএসএমএমইউতেই রয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানান, সম্রাট গুরুতর ইনফেকশনের কারণে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। গতবছর ২৪ নভেম্বর থেকে তিনি এখানেই রয়েছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমোদন থাকলেও আনা যায়নি দুদকে। ৯ মাস আগে আদালত সম্রাটের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও তাকে রিমান্ডে নেয়া যায়নি। ২৫ আগস্ট দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন। পরে দুদক থেকে জানানো হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলায় সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের রয়েছে কিডনি সমস্যা। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের পুরনো সমস্যাও রয়েছে তার। দুদকের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর গ্রেফতার হন ডেসটিনি-২০০০ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন। গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি খুব কম সময়ই কারাগারে ছিলেন। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বশেষ গতবছর ১১ মার্চ বিএসএমইউতে তাকে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি এ হাসপাতালের প্রিজন সেলে রয়েছেন। কারা সূত্র আরও জানায়, এর চেয়ে অনেক বেশি অসুস্থ কারাবন্দিও কারাগারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রভাবশালী ও বিত্তশালী দুর্নীতি মামলার আসামিরাই কেবল দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কেরাণীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বন্দিরা কারা হাসপাতাল এবং বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন। কারা হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শেই তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরত আনতেও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শে আনতে হয়। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। বিধি অনুসারে দুই সপ্তাহ পর সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখে কারা কর্তৃপক্ষ। অসুস্থ হয়ে ভর্তি হওয়া কোনো কয়েদি সুস্থ হলে তাকে যেন কারাগারে ফেরার জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়। হাসপাতালের ডাক্তার যদি ছাড়পত্র না দেন কারা কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না।
মাহবুবুল ইসলাম জানান, কেরাণীগঞ্জ কারাগারে ১১ হাজার বন্দির জন্য ২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বন্দিদের কোনো চিকিৎসাই এখানে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দৈনিক অন্তত দুইশ’ বন্দি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারা হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। ডাক্তার স্বল্পতার সুযোগে দুর্নীতি মামলা এমনকি হত্যা মামলার আসামিরাও কারাগারের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ নেন। ডাক্তার সঙ্কট দূর হলে ভিআইপি বন্দিদের কারাগারের বাইরে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যেতো। দুর্নীতির অভিযোগও উঠতো না।
কারাগারে দুর্নীতি এবং দুর্নীতি মামলার আসামিদের হাসপাতালে আয়েশী জীবন সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়েও দুর্নীতি করছে অভিযুক্তরা। তাদের বিষয়ে বিশেষ মনিটরিং থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আসামি গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পরও দুদকের দায়-দায়িত্ব রয়েছে। দুর্নীতি মামলার বিচারের পর রায় কার্যকর হলো কি না সেটি দুদকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। দুর্নীতি মামলার আসামিরা কারাগারে গিয়েও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে দুদক সেটি নিয়েও অনুসন্ধান চালাতে পারে। দুর্নীতির সঙ্গে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখাও দুদকের দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।