পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামরীসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সাতটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সরকারকে। এদিকে দেশে দারিদ্র্য কমলেও বাড়ছে বৈষম্য। তবে সার্বিকভাবে নানা ক্ষেত্রে অগ্রসরমান রয়েছে বাংলাদেশ। তবে ১৭টি অভিষ্টের মধ্যে ১২টিতেই রয়েছে দুর্বল, চারটির উপাত্ত নেই। একটি অর্থাৎ দারিদ্র নিরসনের ক্ষেত্রে অবস্থা ভাল।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, বুদ্ধিদৃপ্ত কর সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ উন্নয়ন এবং মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ)সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত চার বছরের এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভবাবে প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো- টেকসই কৃষি উৎপাদনশীল প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে চরম দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও ক্ষুধা মোকাবিলা করা। এছাড়া ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ও টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা। সার্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং জনমিতি লভ্যাংশ কাজে লাগানো। সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক অন্তভর্‚ক্তি সরবরাহ করা। জেন্ডার সমতা ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রসার ও জেন্ডার ভায়োলেন্স কমিয়ে আনা। কম কার্বন নি:সরণকারী ও জলবায়ু-অভিঘাতসহনশীল উপায়সমূহ অবলম্বন করা এবং আয় বৈষম্যের সঙ্গে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, প্রতিবেদনটিতে শিশুদের নিরাপত্তার জায়গাটি খারাপ অবস্থানে আছে। এটা কাম্য নয়। আঞ্চলিক ও আয় বৈষম্য কমাতে কাজ করছে সরকার। একই পরিবারের সদস্য হয়ে একভাই খাবে, আরেক ভাই খেতে পারবে না, সেটি হতে পারে না। বৈষম্য মোকাবেলা করা আমাদের দায়িত্ব। ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি করতে আমরা ডুয়িংবিজনেস পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। এক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা চলছে। তথ্যের যে ঘাটতি আছে তা দ্রæত পূরণের জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কার্যক্রম চালাতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়গুলো গণমাধ্যম তুলে ধরার ফলে আমাদের উপর জনগণের চাপ বাড়ছে। সরকার ঠাÐা মাথায় এগুলো দমনে কাজ করছে। আইনের মধ্যে থেকেই সরকারকে সব কাজই করতে হয়।
ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র হার কমছে। কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে। একটি দেশ যখন উন্নতির দিকে যায় তখন এটি স্বাভাবিক ভাবেই হয়। কেননা অর্থনৈতিকভাবে যারা উপরের দিকে আছেন তারা যে রকম বিনিয়োগ করতে পারেন, নিচের দিকে যারা আছেন তারা সে রকম পারেন না। ফলে উপরের দিকের মানুষরা বেশি লাভবান হন। করোনা মহামারী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক মানুষ গরীব হয়ে যাচ্ছে। তবে আশা করা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনশীল কর্মকাÐও দ্বিগুণ গতিতে বৃদ্ধি পবে। ফলে এখনকার ক্ষতি কাটানো যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় দারিদ্র্য রেখা ও নিম্ন দারিদ্র্য রেখার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার হার স্থিতিশীলভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে উচ্চ দারিদ্র্য রেখার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি নিম্ন দারিদ্র্য নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে। এছাড়া ১৯৯৬-৯৭ সময়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্য খর্বতার হার ছিল ৬০ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। পাশাপাশি ২০১৯ সালে কৃষœকায় শিশুর হার নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশে, যা ২০১৪ সালে ছিল ১৪ শতাংশ। এই বছরের মধ্যে কম ওজনের শিশুর অনুপাত ২০১৭ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেটি নেমে এসেছে ২২ দশমিক ৬ শতাংশে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে অনুর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃতুর হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এছাড়া ১৫-১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের গর্ভধারণ হার ১৯৯৯ সালে প্রতি হাজার শিশুর জন্মে কিশোরী মায়ের সংখ্যা ছিল ১৪৪ জন। ২০১৯ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩ জনে। তবে হƒদরোগ, ক্যানসার ডায়াবেটিস অথবা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগে মৃত্যুর হার বেড়ছে। ২০১৬ সালে যা ২১ শতাংশ ছিল, সেটি ২০১৯ সালে হয়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০১২-১৩ সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর হার ছিল ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে হয়েছে ৮২ দশকি ৬ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সমাপনীর হার বেড়েছে। বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ১৫৩টি দেশের মধ্যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০ তম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সূচকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রকৃত মাথাপিছু গড় বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির উর্ধ্বগতির ধারা উল্লেখ করার মতো। ২০১৪-১৫ সময়ে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ সময়ে তা ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের কারণে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০১৯ সালে দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ কোটি ৭৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীর কাছে টু-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছেছে। এখন থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবার আওতায় এসেছে ৭৯ শতাংশ মানুষ। জুয়েনা আজিজ বলেন, আমাদের অনেক কাজ হলেও প্রকৃত তথ্যের অভাবে সেগুলো প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বৈষম্য দূর করতে কাজ চলছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা এবং কোভিডোর কারণে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসাসহ নানা চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে। এসব মোকাবলা করেই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক, দেশীয় এবং সকল পক্ষ মিলেই এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, নগর দারিদ্র্য বাড়ছে। এ বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা শহরের বৃদ্ধি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।