দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
‘দ্বীন’ শব্দের অর্থ হলো ‘ধর্ম বা জীবন বিধান’। এ শব্দের আরো কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন- প্রতিদান বা প্রতিফলন, আনুগত্য, শরীয়তের বুনিয়াদি বিষয়াবলী ইত্যাদি। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুর স্রষ্ঠা ও মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি মানুষ সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী করার জন্য। মানুষ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ইবাদাত-বন্দেগী করতে পারবে না এজন্য কিছু বিধি-বিধান ও নীতিমালা দিয়েছেন। তাছাড়া দুনিয়াতে মানুষের জীবনযাপনের জন্য আনুষাঙ্গিক কিছু কাজকর্ম করতে হয়, যা মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ্য না হলেও পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকার নিমিত্তে সম্পাদন করতে হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা এসব ব্যাপারেও কিছু বিধি-বিধান দিয়েছেন। মানুষ যাতে সঠিকভাবে ইবাদাত-বন্দেগী করতে পারে এবং দুনিয়াতে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য আল্লাহ তায়ালা যেসব বিধি-বিধান দিয়েছেন এসব বিধি-বিধানের সমষ্টিকেই ধর্ম বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করে মানুষকে দ্বীন বুঝার এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। পৃথিবীর সুচনালগ্ন থেকে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) পর্যন্ত লক্ষাধিক নবী রাসূল পৃথিবীতে আগমণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই মানুষকে দ্বীন বুঝিয়েছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নবী রাসূলই নিজ নিজ সময়ে নিজ নিজ জাতিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যথাসমীচীন নির্দেশনাদি দান করেছেন। আল্লাহর আনুগত্য এবং শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলেছেন। প্রত্যেক জাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে যে, দ্বীন শুধুমাত্র একটি জিনিসেরই নাম। তা হলো আল্লাহর কাছে মনেপ্রাণে আত্মসমর্পণ করা, কোন প্রকার উচ্চবাক্য ব্যতিরেখে তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর নির্দেশনাদি নতমস্তকে পালন করা।
সকল নবী রাসূলগণই নিজেকে মুসলিম এবং নিজ নিজ উম্মতকে ‘উম্মতে মুসলিমাহ’ বলেছেন। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সে দ্বীনই প্রবর্তন করেছেন, যার নির্দেশ ইতিপূর্বে নূহ (আঃ) ও অন্যান্য নবীগণকে দেওয়া হয়েছিল।’ এতে প্রতীয়মাণ হয় যে, প্রত্যেক শরীআতে ধর্মের মূলনীতি ও মৌলিক বিষয়াবলী ছিলো এক ও অভিন্ন। শুধু শাখাগত বিধি-বিধান ছিলো কিছুটা ভিন্ন। সুতরাং দ্বীনে ইসলামই কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন নবী রাসূলের মাধ্যমে বিধি-বিধানের পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হয়ে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ ও পূর্নাঙ্গ হয়েছে। ‘ইসলাম’ শাব্দের আভিধানিক অর্থ- অত্মসমর্পণ করা, কারো হুকুম বা নির্দেশ মেনে নেওয়া, শান্তি-নিরাপত্তা। ধর্মীয় পরিভাষায় ইসলামের অর্থ- মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট পরিপূর্ণভাবে অত্মসমর্পণ করা ও তাঁহার বিধি-বিধানগুলো পালন করা এবং আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসুলগণ মানবজাতির পরিপূর্ণ কল্যানের জন্য যে আদর্শ এবং সুন্দর জীবন ব্যবস্থা শিক্ষা দিয়েছেন তাহাই ইসলাম। ইসলামের মূলতত্ত্ব সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমার পিতা ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসূল (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের নিকট আগমণ করলেন। তার পরিধানের কাপড় ছিলো ধবধবে সাদা আর মাথার চুল ছিলো কুচকুচে কালো, তার মধ্যে ভ্রমণের কোন চিহৃ ছিলো না। অথচ আমাদের কেউই তাঁকে চিনতে পারলেন না। লোকটি এসে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট বসলেন এবং তাঁর দুই হাঁটু রাসূল (সাঃ)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে মিলালেন এবং হাস্তদ্বয় স্বীয় রানদ্বয়ের উপর রাখলেন। অতঃপর তিনি (অগন্তুক ব্যক্তি) বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আমাকে ইসলামে মূলতত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত করুন। (চলবে)
শিক্ষক : জামেয়া আনওয়ারে মদিনা, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।