পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাসী শ্রমিকদের অর্থ হাতিয়ে নেয়াই শিরোতাজ আহমেদের পেশা। অভিনব কায়দায় গত দেড় দশকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। প্রবাসী জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তার হাতে তুলে দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক শ্রমিক। অনেক শ্রমিক হয়েছেন উল্টো মামলার আসামিও। এয়ারপোর্টেই গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না অন্তত ২৭ প্রবাসী। মামলার ভিত্তিতে প্রায় প্রতিরাতেই তাদের গ্রামের বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করছে টাকা। অথচ আত্মসাতকারী নিজ এলাকায় যাপন করছেন নির্বিঘ্ন বিলাসী জীবন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও তাকে শেল্টার দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাতিয়ে নেয়া শ্রমিকের টাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পেতেছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। ‘কাঠইর ইউনিয়ন পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ নামে এনজিও খুলেছেন। যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিতে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই প্রতারক যেন আরেক পাপুল। নাম তার শিরোতাজ আহমেদ। সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুরমা থানার গোলাবগঞ্জ গ্রামের গোলাম কিবরিয়ার ছেলে তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান রয়েছে। সিআইডিতেও একটি মামলা তদন্তাধীন।
যেভাবে হাতিয়ে নেন টাকা : অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালের দিকে ফ্রি ভিসায় সউদী আরব যান শিরোতাজ আহমেদ। রঙের দোকানে চাকরি নেন খামিছ মোশাইদ এলাকায়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। পলিসি করার নামেও প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
২০০৫ সালে তিনি কৌশলে আনেন নতুনত্ব। ডায়নামিক মিশন গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খোলেন। কোম্পানিটি বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পনি থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কোম্পানিটির কোনো ঠিকানা নেই। তবে অনুসন্ধানে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ‘ডায়নামিক মিশন গ্রুপ’ নামক কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ভুয়া এ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেন ২৮ শ্রমিকের কাছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫ লাখ টাকা করে। কোম্পানির নামে একটি ব্যাংক একাউন্টও খোলা হয় ইসলামী ব্যাংকের দক্ষিণ সুরমা শাখায়। হাতিয়ে নেয়া টাকা এই একাউন্টে রাখা হয়। শিরোতাজ পালিয়ে দেশে ফিরে শ্রমিকদের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনেন। রেন্ট এ কারের ব্যবসা শুরু করেন। কেনেন মার্কেট ও দোকান। বিনিয়োগ করেন পাথরের ব্যবসায়। গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সুরমা শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। পাওনাদারদের চোখে ধুলো দিতে ক’দিন পরপরই পরিবর্তন করছেন বাসা।
সউদী আরব থেকে পাওনাদাররা তাকে ফোন দিলে টাকা দেবো-দিচ্ছি করেন। কখনও দেন মিথ্যা মামলার হুমকি। ২০১৫ সালে শিরোতাজের প্রতারণা নিয়ে জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টির অনুসন্ধানে নামে। কিন্তু ওই বছরই দুদকের আইন সংশোধন হলে মামলাটি চলে যায় পুলিশের হাতে। তার প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে দু’টি নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হয়। একটি নম্বর ব্যস্ত দেখায়, আরেকটি ‘ভুল নম্বর’ বলে জানানো হয়।
মামলা দিয়ে উল্টো হয়রানি : টাকা ফেরত চেয়ে বেশি তাগিদ দিতেন প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ৬ শ্রমিক। তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা মামলা করান শিরোতাজ। এ ক্ষেত্রেও আশ্রয় নেন ক‚টকৌশলের। পাওনাদার মো. বদিরকে পাওনা মিটিয়ে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে নিজ দলে ভেড়ান। বদির কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার গঙ্গানগর গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র।
বদিরের এক আত্মীয় সিআইডির পদস্থ কর্মকর্তা। তার সহযোগিতায় বদিরকে বাদী করে মামলা দায়ের করান শিরোতাজ। এ মামলায় শিরোতাজকে আসামি করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তার তাকে নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। এ মামলায় আসামি করা হয় দাগনভুইয়ার মাইন উদ্দিন, চান্দিনার বেলাল হোসেন, নাঙ্গলকোটের মো. বাহাউদ্দিন, নরসিংদীর ওবায়দুল হক, কুচয়ার বাবুল হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সৈয়দ মফিজুল এবং কচুয়ার মো. ফজলুল হককে। এ মামলার ভিত্তিতে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন।
একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদল হচ্ছে। ৯ মাসে কর্মকর্তা বদল হয় ৪ জন। মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের সাব-ইন্সপেক্টর নওশাদ হোসেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, মামলাটি কিছুদিন হলো হাতে পেয়েছি। তদন্ত বেশি দূর এগোতে পারিনি। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।