পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঝুলন্ত তার ও বিদ্যুতের লাইন ভূ-গর্ভে নিয়ে দেশের প্রথম তারবিহীন শহরে নাম লিখিয়েছে সিলেট। ওই শহরের তারবিহীন সড়কে হাঁটলে অনেকেই হয়তো ভুলে যাবেন তিনি বাংলাদেশ নাকি অন্য কোন দেশের সড়কে হাঁটছেন। অথচ রাজধানীর সড়কগুলোর সৌন্দর্য্য বাড়াতে ১২ বছর আগে ঝুলন্ত তার অপসারণের এই উদ্যোগ নিয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। এজন্য ভূ-গর্ভস্থ কমন নেটওয়ার্ক করতে লাইসেন্স দেয়া হয় ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন)। ঝুলন্ত তার অপসারণে গত ১২ বছর ধরেই ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটরদের (ডিস সংযোগ প্রদানকারী) আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে বার বার। কমিটি গঠন করে বিভিন্ন সময় একেকটি সড়কের ঝুলন্ত তারও কেটেছে ওই কমিটি। তবে তার কেটে দেয়ার ২-৪ ঘণ্টা পরেই আবারও তার ঝুলিয়ে সড়ককে পুরনো রূপে ফিরিয়ে নেয় আইএসপি ও ক্যাবল অপারেটররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর প্রধান সড়ক কিংবা গলি পথ সর্বত্রই ঝুলছে তারা। বিদ্যুতের পিলার ব্যবহার করে এসব তার ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী জুড়ে। প্রতিটি পিলারের সাথে পাকিয়ে ফেলা হয়েছে তারের কূন্ডলি। ঝুলে থাকা এসব তারের মাধ্যমেই মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়াসহ নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটছে। জঞ্জালের মতো এসব তার নষ্ট করছে ঢাকার সৌন্দর্য্যও। রাজধানীর সড়কগুলোতে ঝুলন্ত তার (ক্যাবল) অপসারণে সরকার নানা পদক্ষেপের কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথেই কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী ও সচিব। দেয়া হয়েছে দফায় দফায় আল্টিমেটাম। তবে কোন কিছুই কাজে আসছে না।
সর্বশেষ রাজধানীর ঝুলন্ত ইন্টারনেট ও ডিসের তারসহ সকল তার অপসারণের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সময়ের মধ্যে তার অপসারণ না করলে তার কেটে দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট আইএসপি ও ক্যাবল অপারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সেই সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ কোন উদ্যোগ না নিলেও মাঠে নেমেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কোন আল্টিমেটাম না দিয়ে তার অপসারণে মাঠে নেমেছে ডিএসসিসি। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে গত ৫ আগস্ট থেকে পরিত্যক্ত ও ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, হাজারীবাগ, ওয়ারী, খিলগাঁও, আজিমপুরসহ ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে ও বিদ্যুতের পিলারে ঝুলে থাকা তার অপসারণ করা হয়েছে। যদিও এতে প্রায় দেড় লাখ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিড়ম্বনায় পড়েন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরাও। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সদস্যরা ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সংগঠনটির সদস্যদের জানানো হয়, ডিএসসিসি এলাকায় সড়ক ব্যবহার করে ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক কোম্পানিকে বছরে ২৫ লাখ টাকা করে রাজস্ব দিতে হবে। তা না হলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইশতেহার, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সিটি করপোরেশনের অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে ২৫ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে।
আরিফুল হক জানান, কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ২৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোন সার্ভিস প্রোভাইডারদের যদি সংযোগ স্থানান্তরের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কেবল সংযোগের কাজে তারা কারও স্থাপনা ব্যবহার করতে পারবে না।
রাজস্ব পেলে ব্যবসায়ীরা কী ধরণের সুবিধা পাবেন জানতে চাইলে আরিফুল হক বলেন, তাদের মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেইসঙ্গে প্রত্যেক কোম্পানিকে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শৃক্সক্ষলায় আনা হবে।
আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, কোনো ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ ডিএসসিসি আমাদের ইন্টারনেটের ক্যাবলগুলো কেটে ফেলছে। এতে প্রায় দেড় লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইন্টারনেট লাইন কেটে ফেলায় আমাদের শুধু ক্যাবল-ই ক্ষতি হয়েছে ৫-৬ কোটি টাকার মত। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও বিল দেবে না বলে জানিয়েছে। এখানেও অনেক ক্ষতি হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক কোম্পানিকে যদি ২৫ লাখ টাকা করে রেভিনিউ দিতে হয় তবে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু এত টাকা তো আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। আবার এই টাকা তো গ্রাহকের কাছ থেকেই নিতে হবে। কিন্তু গ্রাহক যেখানে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য দাবি করছে সেখানে বাড়তি দাম হলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে?
জানা যায়, রাজধানীর সড়কের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং কম খরচে নিরবিচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বিটিআরসি। এজন্য বিটিআরসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঞ্জুরুল আলম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ভূ-গর্ভস্থ কমন নেটওয়ার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি এনটিটিএন গাইডলাইন তৈরি করেন। ওই গাইডলাইন অনুযায়ী, ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন্স রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও ক্যাবল টিভি অপারেটররা অভিন্ন এই নেটওয়ার্কে যুক্ত না হয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ক্যাবল টেনেছে। এই ক্যাবল অপসারণে এনটিটিএন অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ক্যাবল অপারেটরদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিটিআরসি। ওইসব বৈঠকে ক্যাবল অপারেটর ও আইএসপিদের সতর্ক করে দেয়া হয় তার সরানোর জন্য এবং অভিযানের পর যেন আর তা উঠানো না হয়। কিন্তু এই তারের জঞ্জাল সরেনি। বিটিআরসি সূত্র জানায়, ঝুলন্ত তারের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ ভূগর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। বাকি ৭০-৮০ শতাংশ এখনো রাস্তায় ঝুলছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, আমরা এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছি এই উদ্দেশ্যে যে, তারা ক্যাবলগুলোকে এমনভাবে নেবে যাতে মানুষের জীবন-যাত্রার কোন ক্ষতি করবে না। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এতে কোন পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি না। তিনি বলেন, আইএসপিকে লাইন টানার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তাদেরকে লাস্ট মাইল সার্ভিস দিতে হবে এবং এনটিটিএন থেকেই সংযোগ নিতে হবে। মন্ত্রণালয় কোন চাপ সৃষ্টি করবে কিনা জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমাদের দায়িত্ব লাইসেন্স দেয়া, বাকী কাজগুলো যাদের তারা যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় তাহলে এটি সম্ভব। আমি নিজেই মনে করি সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুলন্ত তার থাকা উচিত না। সকল তার মাটির নিচে নেয়া উচিত। ঝুলন্ত তার থাকতে পারে হাওর এলাকায়।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।