পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৮ জেলায় ভেঙেছে বেড়িবাঁধ : কোটি মানুষের ভোগান্তি জোয়ারের পানিতে
বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সাগর পাড়ের মানুষের কাছে জোয়ারভাটা নিত্য ঘটনা। কোটি মানুষ বসবাস করেন অথচ সাগরপাড়ে সুরক্ষা নেই। পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী জোয়ার এবার নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার, ভোলায় মেঘনার, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর, লক্ষ্মীরসহ ১৮ উপক‚লীয় জেলার জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি উঠেছে। অথচ নাগরিকদের সুরক্ষায় এসব উপক‚লীয় এলাকায় উঁচু বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা থাকলেও বাঁধ নির্মাণে এখনো নজরে নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরপাড়ের বাঁধগুলো উঁচুকরণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে নজর না থাকার কারণে জোয়ারে পানির ঝুঁকিতে কোটি মানুষ। দীর্ঘস্থায়ী জোয়ার হওয়ায় এবার সাগরপাড়ের লাখ লাখ মানুষকে পানিবন্দি জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
দাতা সংস্থা কে এন এইচ জার্মানীর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মারুফ রুমি মমতাজ জানান, প্রাকতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে উপক‚লের মানুষকে রক্ষায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন। বাঁধ নির্মাণ বা মেরামত করলে হবে না। তার দেখভাল করতে হবে। প্রকৃত ঘটনা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব করছেন না। প্রতিবছর শুধু বাঁধ মেরামতের নামে শত শত কোটি টাকার লুটপাট করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আমিনুল হক ইনকিলাবকে বলেন, আম্পানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপক‚লীয় জেলার বাঁধগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো নির্মাণের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প শুরু করার মধ্যে আবার নতুন করে জোয়ারের পানি দেখা দিয়েছে। এতে অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিলীন হয়েছে।
দেশের উপক‚লীয় এলাকার ৮ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপক‚ল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল; কিন্তু তার বড় অংশ এখনো যথাযথভাবে মেরামত করা হয়নি। এতে করে গোটা উপক‚লীয় এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছর আম্পানে উপক‚লীয় জেলার ১৫২টি স্থানে ৫০ দশমিক ৪৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ৫৮৩টি স্থানে ২০৯ দশমিক ৬৭৮ কিলোমিটার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮টি নদীর তীরভাঙনে ১৩ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে এবং ৩৭টি নদীর তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষতি হয়েছে ১২ দশমিক ৮০০ কিলোটার। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে উপক‚লের বিস্তীর্ণ জেলাগুলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, নোয়াখালী, ল²ীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপক‚লীয় জেলাগুলো। নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপক‚লীয় বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে দিন-রাত দু’দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে বসতভিটা, গ্রামীণ জনপথ, মাছের পুকুর-ঘের, উৎপাদিত ফসল। ৬-৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। আম্পানের সেই ধকল কাটতে না কাটতে আবারো জোয়ারের পানির দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। তার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনো করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আইলা-সিডর-আম্পান এবং চলতি বন্যায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার দেখা দিয়েছে জোয়ারে পানি। এসব প্রাকতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বর্তমানে বাঁধের উচ্চতা সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ১৫ ফুট, ভেতরের দিকে ১৪ কিংবা ১২ ফুট। এগুলো যদি সবল থাকে তাহলে ১৪-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াস ঠেকিয়ে দেবে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্পান। ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫ মাত্রায় শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছিল। সে কারণে দেশের উপক‚লী জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উঁচু উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে আঘাত হেনেছে। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ল²ীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। অনেক স্থানের বাঁধে ফাটল ধরেছে। পায়রা নদীর জোয়ারে বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা এলাকার বাঁধের একটি অংশের অন্তত ২০ ফুট বিলীন হয়।
টানাবর্ষণ ও জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে হাতিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, জমির ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- সোনাদিয়া, নলচিরা, তমরদ্দি, হরনী, চানন্দী, নিঝুমদ্বীপ, সুখচর ও চরঈশ্বর। হাতিয়া মূল ভূখন্ড রক্ষাকারী বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ জোয়ারের পানিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে করে তীব্র জোয়ারে কমপক্ষে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। বর্তমানে এসব পরিবার বেড়িবাঁধ ও খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। আম্পানের সময় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় সুখচর ইউনিয়নের চর আমানুল্যাহ, বৌবাজার, চেয়ারম্যান বাজার, নলচিরা ইউনিয়নের তুপানিয়া, নলচিরা ঘাট, চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, ফরাজি গ্রাম, ৭নং গ্রাম ও মাইছ্যা মার্কেট এলাকা বাঁধ নতুন করে ভেঙে গেছে।
ভোলার মেঘনার উত্তাল জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম। জোয়ারের ফলে বেড়িবাঁধের ভেঙে গিয়ে এলাকায় পানি ঢুকে দু’দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ।
ল²ীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, ল²ীপুর সদর এবং রায়পুর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪ উপজেলার ৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে অধিকাংশ গ্রামে পানি থাকলেও গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম ভাসছে পানিতে। থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই। রাস্তাঘাট, চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি সব পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকার কামরুল সানা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে এলাকায় পানি ঢুকছে। আম্পানের পর রিংবাঁধ দেওয়ায় কয়েকটি গ্রামে পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। নতুন করে খোলপেটুয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ছুটছে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে। রাস্তা, ফসলি জমি কিংবা চিংড়ি ঘের আলাদা করে চিহ্নিত করার উপায় নেই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দুরবস্থার কথা কাকে বলব? আম্পানের আগে বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। কোনো কাজ হয়নি। মানুষের দুরবস্থা দেখলে কান্না আসে। অথচ কিছু করতে পারছি না। তার শুধু বলে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শ্রীউলা ইউপির চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল বলেন, এমন দীর্ঘ সমস্যায় তাঁর ইউনিয়নের মানুষ কখনো পড়েনি। মানুষ গ্রাম ছেড়ে বাঁচার জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পানিবাহী রোগে ভুগছে। কবে বাঁধ মেরামত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। জোয়ারের পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৬ ফুট। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বলে- প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ আর হচ্ছে না। শ্যামনগরের গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, কপোতাক্ষ নদের নেবুনিয়ে রিং বাঁধের ছয়টি স্থান ভেঙে ড়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা মেরামত করা হয়। আবার দুইটার দিকে সাতটি স্থান ভেঙে গেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশাশুনির কর্মকর্তা সাব্বির হাসান বলেন, শ্রীউলার ভেঙে যাওয়া বাঁধ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংস্কার শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আপাতত কাজ বন্ধ আছে। প্রতাপনগরে আম্পানে আট স্থানের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। এর কয়েকটি স্থানে রিংবাঁধ দেওয়া হয়েছিল। আবার রুইমের বিল, চাকলা ও কুড়িকাউনিয়াতে বাঁধ ভেঙে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।