Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আতঙ্কে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

উচ্চ আদালতের প্রশাসনে অভিযান

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক নেমে এসেছে। বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে একের পর এক বরখাস্ত-শাস্তিমূলক বদলির পরিপ্রেক্ষিতেই এ আতঙ্ক। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতের প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেকশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলার তদবির, রায় পক্ষে এনে দেয়া, কার্যতালিকায় মামলা ওঠানো, মামলার ফাইল চাপা দিয়ে রাখা, হাইকোর্টে বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দেয়া এফিডেভিট শাখায় অর্থের বিনিময়ে এফিডেভিট করানোসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতের কর্মকর্তা পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়, বø্যাক মেইলিং এমনকি কর্মকর্তা পরিচয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনারও।

পুঞ্জীভ‚ত এসব অভিযোগ ধরে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত দুই সপ্তায় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিরাজ করছে এ আতঙ্ক। কখন কার বিরুদ্ধে শাস্তির খড়গ নেমে আসে এ দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি শাস্তিমূলক বদলি, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেয়া এবং চ‚ড়ান্তভাবে বরখাস্তের ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরায় বিচারপ্রার্থীরা যেমন সুফল পেতে শুরু করেছেন তেমনি সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রশাসনের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। তবে এ দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে ‘চলমান প্রক্রিয়া’ হিসেবে অব্যাহত রাখার দাবি ভুক্তভোগীদের। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খান মো. সিরাজুল ইসলাম এবং কমিশনার অব এফিডেভিট মো. আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ তথ্য জানান। গত শুক্রবার এ বিষয়ে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তারা হলেনÑ হাইকোর্ট বিভাগের ঢাকা এফিডেভিট কমিশনার হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালনকারী খান মো. সিরাজুল ইসলাম এবং কমিশনার অব এফিডেভিট হিসেবে দায়িত্বরত মো. আব্দুর রশিদ। বিবৃতিতে বলা হয়, দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বিধিমালা অনুসারে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। তাদের অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাÐের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ও শাখাগুলোর দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন আদালতের আইনজীবী ও কোর্ট প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রুখতে অভিযোগ বক্স স্থাপন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। অভিযোগ বাক্সে আদালত-প্রশাসনের নানা দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এফিডেভিট শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ ধারাবাহিকতায় গত সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের এফিডেভিট শাখার সুপারিনটেনডেন্ট মো. রেজাউল ইসলামের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর আগে মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলা হয়। মামলার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৩ এর ৪(১) বি বিধি অনুসারে তার একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) এক বছরের জন্য স্থগিত করার মাধ্যমে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।

এছাড়া গত রোববার এক ঝটিকা অভিযান চালানো হয় এফিডেভিট শাখায়। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পরিচালিত এ অভিযানকালে ৪৩ আইনজীবী সহকারীকে (মুহুরি) আটক করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজলের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এফিডেভিট শাখায় ভিড় জমানো, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, মামলার তদবির, এফিডেভিট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঘুষ আদান-প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। অভিযানকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর এবং হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে হাই কোর্টের বেঞ্চ অফিসার পরিচয়ে মাদক ব্যবসার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট মোরশেদুল হাসান সোহেলকে বরখাস্ত করা হয়। গত ৬ আগস্ট রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগ নিজ বাসা থেকে নারী মাদক ব্যবসায়ী এবং ৬শ’ পিস ইয়াবাসহ সোহেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে হাইকোর্টের বিভিন্ন শাখায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট একটি পবিত্র অঙ্গন। মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল। এখানে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে সবাই শরীক হতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলাম। এ প্রেক্ষিতে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন। তবে প্রশাসনিক সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কাজ করা সম্ভব নয়।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘব, বিচার বিভাগকে অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনার আলোকে এখন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বার এবং আইনজীবীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

 



 

Show all comments
  • Kamal Pasha Jafree ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    আইওয়াশ ।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 0
    প্রতিবেদনটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। দুর্নীতিবাজদের শিকড় উপড়িয়ে ফেলা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
    সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুর্নীতিবাজদের দ্রুত অপসারণ এখন সময়ের বড় দাবি।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
    এই অভিযান নিয়মিত যেন অব্যাহত খাকে। তাহলে অবিবাহিত বিচার সংখ্যা বাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ২৩ আগস্ট, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ করে সত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৭:২৩ এএম says : 0
    এই অভিযান সব সময় সব অফিসে অব্যাহত রাখা উচি। কিছুটা হলেও কমবে আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৭:২৪ এএম says : 0
    এই অভিযান সব সময় সব অফিসে অব্যাহত রাখা উচি। কিছুটা হলেও কমবে আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Asad ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৯:২২ এএম says : 0
    সরকার বরো বরো দুর্নীতি গুলোর যদি সুষ্ঠ বিচার করতো। কতৌই না ভালো হতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Asad ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৯:২২ এএম says : 0
    সরকার বরো বরো দুর্নীতি গুলোর যদি সুষ্ঠ বিচার করতো। কতৌই না ভালো হতো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ