Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চেইজে ক্যারিবীয় ঐতিহ্য ধারণ

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ৪ আগস্ট, ২০১৬

স্পোর্টস ডেস্ক : একেবারে খাদের কিনারে দল। একে একে ফিরে গেছেন টপ-অর্ডারের শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা। ভারতীয় পেস আর স্পিন আক্রমণ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জ্যামাইকার মেঘলা পিচ। এমন পরিস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই পুরনো ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করলেন মাত্রই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা ২৪ বছর বয়সী এক তরুণ। এর আগে ঘূর্ণি বলে যিনি নিয়েছেন ভারতের ৫ উইকেট। ব্যাট হাতে তারই অপরাজিত শতকের এক মহাকাব্যিক ইনিংস যেভাবে দলকে অসাধারণ ড্র এনে দিলো, তা জয়ের কোনো অংশে কম নয়। সেই তিনি হলেনÑ রোস্টন চেইজ।
প্রথম ইনিংসে ভারতের ৩০৪ রানের বিশাল ঘাটতি মাথায় নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও সেই মুমূর্ষু দশায় ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন-আপ। ৪৮ রানেই নেই ৪ উইকেট। শেষ দিনে ভারতকে আবার ব্যাটে পাঠাতে করতে হবে ২৫৬ রান। এমন পরিস্থিতিতে আবহাওয়ার অনুকম্পা লাগেনি সোবার্স-রিচার্ড-লারাদের উত্তরসুরিদের। আগের দিন মাত্র ১৫.৫ ওভারে যারা খুইয়েছিল ৪ উইকেট, এদিন ৮৮.১ ওভার ব্যাট করে তারাই দিয়েছেন মাত্র ২ উইকেট। ১৯৯৮ সালের পর জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্ক দেখল ড্রয়ের মুখ।
চেইজ তো আছেনই, সেই সাথে দলের বাকি ব্যাটসম্যানদেরও কৃতিত্ব দিতেই হবে। ক্যারিবীয় টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলের ৫ থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত চার ব্যাটসম্যান খেললেন পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসেই এটি মাত্র পঞ্চম ঘটনা। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এই কাজের নেতৃত্ব দেন চেইজ। দিনের শুরু থেকেই যেন প্রতিজ্ঞা করে মাঠে নেমেছিলেন চেইজ-বø্যাকউড জুটি। পঞ্চম উইকেটে তারা নেন ৯৩ রান। ৫৪ বলে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে এসময় উল্টো ভারতীয় বোলারদের আক্রমণ করে বসেন বø্যাকউড, যা পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের সহজ হতে শিখিয়েছে। এরপর শেন ডরউইচকে সাথে নিয়ে ১৪৪ রানের আরেক জুটি গড়েন চেইজ। অভিজ্ঞ দিনেশ রামদিনের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ডরউইচেরও প্রয়োজন ছিল নিজেকে জানান দেয়ার। অমিত মিশ্রের বলে বিতর্কিত এলবিডবিøউ আউট না হলে হয়তো সেঞ্চুরির দেখাও পেতে পারতেন তিনি। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল প্যাডে আঘাত হানার আগে ব্যাটে লেগেছিল। ডরউইচের ৭৪ রানের ইনিংসটি ছিল মাত্র ১১৪ বলে।
তখনো ভারতের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়নি। খেলা তখনো এক সেশনেরও বেশি সময় বাকি। চেইজ দাঁড়িয়ে ৯৯ রানে। খানিক পরেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের সেই জাদুকরী সংখ্যা। গ্যারি সোবার্সের পর প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে ‘ডাবল’ গড়লেন চেইজ। সোবার্সের সেই কীর্তির ৫০ বছর ছুঁতে তখন মাত্র দুই দিন বাকি। ৮০তম জন্মদিন পালনের ৬ দিন পর সোবার্স নিজের সেই কীর্তি পুনরাবৃত্তি হতে দেখলেন আরেক ক্যারিবীয় দ্বারা।
হারের শঙ্কা তখন কাটেনি। বাকি কাজটা সারতে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। দু’জনে গড়লেন ১০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ৯৯ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন হোল্ডার। আর ম্যাচের নায়ক চেইজ ৬ ঘণ্টায় ২৬৯ বলের মোকাবেলায় খেলেন অপরাজিত ১৩৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।
দুই ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময়ই দাপট দেখিয়েছে ভারত। শেষ সময়ে এসে ক্যারিবিয়ানরাও অবশেষে দেখাল তাদের সামর্থ্য। লড়াইও নিশ্চয়ই এখনো বাকি। হোল্ডারও তেমন বার্তাই দিলেন, ‘অবশ্যই আগের টেস্টের তুলনায় উন্নতি। দারুণ উপভোগ করলাম। খেলোয়াড়দের বলা হয়েছিল লড়াই করতে, নিজেদের সামর্থ্যরে পুরোটাই উজাড় করে দিতে, তারা সেটাই করেছে। বø্যাকউড রোস্টনের জুটিটা ছিল দারুণ।’ ভারত শিবিরে বইছে হারের মতো ক্লেশ। এভাবে ড্র মেনে নিতে পারছেন না ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি বলেন, ‘এটাই ক্রিকেট। খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, চতুর্থ দিনের পুরোটা পÐ করে দিলো বৃষ্টি। তবে আমি কোনো অজুহাত দাঁড় করাবো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ যা খেলল, তাতে ওদের কৃতিত্ব দিতেই হচ্ছে।’
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার থেকে সেন্ট লুসিয়ায়।

স ং ক্ষি প্ত স্কো র
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৯৬ ও ১০৪ ওভারে ৩৮৮/৬ (বø্যাকউড ৬৩, চেইজ ১৩৭*, ডাওরিচ ৭৪, হোল্ডার ৬৪*; সামি ২/৮২, মিশ্র ২/৯০)।
ভারত ১ম ইনিংস : ৫০০/৯ ডিক্লে.
ফল : ম্যাচ ড্র। ম্যাচ সেরা : রোস্টন চেইজ।
সিরিজ : ৪ ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চেইজে ক্যারিবীয় ঐতিহ্য ধারণ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ