Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকবিরোধী অভিযানের আড়ালে প্রদীপ সিন্ডিকেট

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

এক যুগে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান চালানোর সময়ও বেপরোয়া ছিলেন বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এ সময় অভিযানের নামে প্রদীপ সিন্ডিকেট হাতিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর ওই টাকায় প্রদীপ দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট। শুধু তাই নয়, কিনেছেন দামি গাড়িও। এছাড়াও সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হলেও টেকনাফের ইয়াবা কারবারীদের বাঁচিয়ে রাখতেন তিনি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই নিরাপদেই ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন ইয়াবা কারবারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একটি সংস্থার সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। মাদক বিরোধী অভিযান কে পুঁজি করেই নিরীহ লোকজনকে মাদক পাচারের অভিযোগে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলেও বন্ধ হয়নি মাদক পাচার। অভিযোগ রয়েছে সেই বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনী এই ইয়াবা পাচারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারাই মূলত মাদক পাচার, ইয়াবা পাচার জিয়িয়ে রেখেছে নিজেদের স্বার্থে। তাদের স্বর্থের হানি হলে সাধারণ লোকজন এবং চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীদের কপাল জুটতো বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার। আর এই টাকা দিয়ে ওসি প্রদীপ ম্যানেজ করত রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়াকর্মী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর তার উদ্ধার হওয়া ডায়েরি থেকে পাওয়া গেছে এরকম দুই শত কোটি টাকার হিসাব। জানা যায়, গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে। কিন্তু সীমান্তে মাদকপাচার বন্ধ হয়নি একদিনের জন্যও।

উখিয়ার মৌলভি বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী জানান, গত ২৪ জুলাই তাকে ধরে নেয়ার সেই রাতে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে ৫১ লাখ নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৌলভি বখতিয়ারের এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় আরও বিপুল অঙ্কের টাকা। ওসি প্রদীপ ও উখিয়ার ওসি মর্জিনা মিলে ওই পরিবার থেকে দুই দফায় কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়ে বখতিয়ার মেম্বারকে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার হত্যা করে। এছাড়াও টেকনাফের টাকাওয়ালা মানুষ দেখে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে ধরে এনে থানার টর্চার সেলে নির্যাতন করেই আদায় করা হতো বিপুল অংকের টাকা। আর যারা টাকা দিত না বা দিতে পারত না তাদেরকে মাসের-পর-মাস সেখানে নির্যাতন করে পরে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতো। এ ছাড়া দুই দফায় ১২৩ ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পণও করান ওসি প্রদীপ। আসলে এটিও ছিল প্রকৃত ইয়াবা কারবারীদের বাঁচিয়ে দেয়া ও মোটা অঙ্কের বাণিজ্য। কিন্তু এতকিছুর পরও থামেনি ইয়াবাপাচার। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সর্বশেষ তালিকায়, কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে শুধু টেকনাফেই রয়েছে ৯১২ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আছে ৭৩ জন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে তালিকাভুক্ত বড় বড় গডফাদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? তাহলে তাদের মাধ্যমে ইয়াবা বড়ি দেশে প্রতিদিনই ঢুকছে। আর প্রদীপ সিন্ডিকেট তাদের পাহারা দিয়েছে।



 

Show all comments
  • ইলমা ১১ আগস্ট, ২০২০, ৩:২৫ এএম says : 0
    এত কিছু করে গেল আমাদের দেশের দুদক গোয়েন্দাসংস্থা সহ বিভিন্ন সংস্থাগুলো এসব কি দেখে নাই
    Total Reply(0) Reply
  • ফাইজুর রহমান ১১ আগস্ট, ২০২০, ৩:২৬ এএম says : 0
    সারাদেশে এমন আরও অনেক প্রদীপ আছে। অনতিবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    তার যদি এত সম্পদ হয় তাহলে বাকিদের কি অবস্থা সেটা আল্লাহই ভাল জানে
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
    অনুসন্ধান করলে হয়ত আরো অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসবে
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    এরকম কিছু অফিসারদের জন্য পুলিশের সকল সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • কৌশিক ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • মারুফ ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
    পুলিশে যদি এগুলো করে তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • সাজ্জাদ ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
    এদের মত কিছু মানুষের কারনে আমাদের দেশের এই অবস্থা
    Total Reply(0) Reply
  • মাসরুর ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
    মেজর সিনহার এই ঘটনা না ঘটলে হয়তো আমরা অনেক কিছুই জানতে পারতাম না
    Total Reply(0) Reply
  • ফরহাদ হোসেন ১১ আগস্ট, ২০২০, ৫:৫৮ এএম says : 0
    আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুত্রের কথাবলছে, এই বাহিনী এতদিন কোথায় ছিল? বাংলাদেশেে জনগণের টাকায় যে ....... পালন করা হয় তাদের দায়িত্বটা কি?তাহলে কি সবাই মিলেই কাজ চলে?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১১ আগস্ট, ২০২০, ৯:২৭ এএম says : 0
    এখানে প্রদীপ কুমার দাশ সম্পর্কে যেসব তথ্য উত্থাপিত হয়েছে এসব তথ্য নিয়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দেয়া উচিৎ। এসব ঘটনা এখন কোনভাবেই সিনহা হত্যার সাথে জড়িত করা চলবেনা। আর যদি এসব তথ্য সিনহার বিচারের সাথে যোগ করা হয় তাহলে সেটা হবে সিনহার হত্যা মামলাকে হত্যা করার সামিল। অন্যান্য ক্রসফায়ারের ঘটনা নিয়ে ভিন্ন মামলা দেয়া উচিৎ, কোন ভাবে সিনহার হত্যা মামলার সাথে প্রদীপ কুমার দাশের অন্যান্য অপরাধ আনা চলবে না। পরিশেষে বলতে চাই পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে জাতীর জনকের শাসন আমলে যেভাবে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো সেভাবেই পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করা হউক। মহান আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা আল্লাহ্‌ যেন আমাকে সহ সবাইকে সত্য জানা, সত্য বুঝা ও সেইভাবে চলার ক্ষমতা দান করেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • habib ১১ আগস্ট, ২০২০, ৯:৩৫ এএম says : 0
    Dark future begin in the country
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ১১ আগস্ট, ২০২০, ১০:০০ এএম says : 0
    প্রদীপের যেসব কুকীর্তর কথা শোনা যাচ্ছে তাতে ওকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে মৃত্যৃদণ্ড কার্যকর করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • নিশা চর ১১ আগস্ট, ২০২০, ১০:০২ এএম says : 0
    ওসি প্রদীপ গংদের থামাতে না পারলে ভবিষ্যতে কপালে অনেক খারাপি আছে। একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে পাশবিক ভাবে হত্যা করে এখনও কিভাবে বেঁচে আছে ভাবতেই অবাক লাগে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকবিরোধী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ